শীতে কতটা পানি খাবেন
গরমকালে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া নিয়ে যতটা ভাবেন, শীতে হয়তো ততটা ভাবেন না। জগ বা কোনো পাত্রে ঢেলে রাখা পানি শীতের সময়টায় একটু ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার কারণে পানি খাওয়ার প্রবণতা কমে আসতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এই সময় পানি খাওয়ার তাগিদ খুব একটা অনুভূত হয় না। তবে শীতেও হতে পারে পানিশূন্যতা।
দেহের কোষের একটা বড় অংশই তো পানি দিয়ে তৈরি। পানিশূন্যতা হলে দেহের ভেতর চলমান প্রক্রিয়াগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গরমের সময় ঘাম বেশি হলে পানি বেশি খেতে হয়, সে অনুযায়ী পানির হিসাবটা হয়তো মোটামুটিভাবে ধারণা করে নেন আপনি। কিন্তু শীতের সময় ব্যাপারটা তেমন নয়। তাহলে কতটা পানি খাবেন শীতে?
একজনের রোজ ঠিক কতটা পানি প্রয়োজন হবে, সেটি তাঁর বয়স, কাজের ধরন, দেহের গড়ন প্রভৃতি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। তাই ধরাবাঁধা একটা পরিমাপ বলে দেওয়ার সুযোগ নেই। শ্বাসপ্রশ্বাস ও ত্বকের মাধ্যমে রোজ বেশ খানিকটা পানি বেরিয়ে যায় শরীর থেকে। তাই কেবল ঘাম আর প্রস্রাবের পরিমাণ দিয়ে বোঝার উপায় নেই আপনার ঠিক কতটা পানি প্রয়োজন। দেহের চাহিদা অনুযায়ী আপনি পানি খাচ্ছেন কি না, তা বোঝার কিছু উপায় রয়েছে। এসব বিষয় জানা থাকলে আপনি নিজেই ধারণা করতে পারবেন, পানির পরিমাণ বাড়াতে হবে কি না। এমনটাই বলছিলেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান।
খেয়াল রাখুন প্রস্রাবের রং
প্রস্রাব করার সময় রং খেয়াল করুন। হালকা হলদে বা খড়ের মতো রং স্বাভাবিক। গাঢ় রঙের প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া কিংবা ঘন প্রস্রাব হওয়ার অর্থ আপনি পানিশূন্যতায় ভুগছেন। আবার প্রস্রাব যদি একেবারে পানির মতো স্বচ্ছ হয় এবং পরিমাণে অনেক বেশি হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, আপনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি খাচ্ছেন।
ত্বকের শুষ্কতাও পানিশূন্যতার লক্ষণ
শীতের আবহাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়তেই পারে। এ সময় এভাবে ত্বক শুষ্ক হওয়ার অর্থ হলো ত্বকের পানি বেরিয়ে মিশে যাচ্ছে পরিবেশে। কাজেই ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়লে কিংবা ঠোঁট ফেটে গেলে ঠিকভাবে পানি খাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিন।
দেহে আরও কিছু পরিবর্তন
মুখ বা গলার ভেতরটা শুকিয়ে যাওয়াও পানিশূন্যতার লক্ষণ। আবার পানির অভাবে কারও কারও মাথাব্যথা হতে পারে। তেমন কোনো কারণ না থাকলেও ক্লান্ত লাগতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে চোখ বসে যেতে পারে পানিশূন্যতার কারণে।
এই শীতে কখন, কীভাবে পানি খাবেন
আপনার হয়তো পানি খেতে ইচ্ছা করছে না, কিন্তু বুঝতে পারছেন, পানির খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া নিশ্চিত করতে আপনি কিছু বিষয় অনুসরণ করতে পারেন—
উষ্ণ পানি কিংবা পানীয় খেতে পারেন। তবে চা-কফিজাতীয় পানীয় খেলে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ে, তাই এগুলো পানীয় হলেও দেহের পানির চাহিদা মেটাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে না। পানি বা পানীয় উষ্ণ রাখার জন্য বিশেষ ধরনের ফ্লাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
স্বাদে ভিন্নতা আনতে ডিটক্স ওয়াটার খেতে পারেন
দিনের শুরুতে এক-আধগ্লাস পানি খেয়ে নিতে পারেন। কাজের জায়গায় পানির পাত্র কাছে রাখুন। বেশ খানিকক্ষণ কাজ করার পর একটু পানি খেতে পারেন।
নানা রকম স্যুপ খেতে পারেন এই শীতে। এই তরল খাবার পানির চাহিদা মেটাতে দারুণ কাজে দেবে।
পাতলা ঝোলের তরকারি ও ডাল খেতে পারেন
নানা রকম মৌসুমি ফল ও শাকসবজিতেও বেশ খানিকটা পানি থাকে। ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত রোজই।