বিয়ের নিমন্ত্রণে গিয়ে এসব প্রশ্ন করছেন না তো?
শীত পড়তে শুরু করেছে। বাড়িতে হয়তো আসতে শুরু করেছে বিয়ের দাওয়াতের কার্ড। পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী—সবার মধ্যেই যেন উৎসবের আমেজ। মধুর এই আনন্দ-আয়োজনে একটি বাঁকা কথা কিংবা একটি বিব্রতকর প্রশ্নের কারণে যে-কেউ ভীষণ রকম অসম্মানিত বোধ করতে পারেন। তাই কিছু প্রসঙ্গে কথা না তোলাই সমীচীন। এই যেমন কনের গয়না, দেনমোহর কিংবা বরের জীবিকাবিষয়ক আলাপ। কেউ হয়তো প্রশ্ন করলেন, ‘কই দেখি দেখি! কত ভরি গয়না দিল মেয়েকে?’কেউ হয়তো বরের আয়রোজগার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলে বসলেন। এতে কিন্তু বর-কনে দুপক্ষই বিব্রত বোধ করতে পারে। এমনকি পরবর্তী সময় সংসারে কোনো দিন ছোটখাটো অশান্তি দেখা দিলে সেখানেও চলে আসতে পারে বিয়ের সময়কার এসব নেতিবাচক কথা। সব কথা কিন্তু সবাইকে একইভাবে বলা যায় না। কথাটি ভুলে গেলেই বিপত্তি।
বর-কনের ব্যক্তিগত বিষয়
কারও একাডেমিক ক্যারিয়ার, জীবিকা কিংবা পারিবারিক বিষয়ে আলাপ করা থেকে বিরত থাকুন। বিয়ের পর কে কোথায় থাকবেন, তা নিয়ে কথা বলাও নিষ্প্রয়োজন। আজকাল অনেক পরিবারেই দুটি বা মাত্র একটি সন্তান থাকে। একমাত্র সন্তান যদি কন্যাসন্তান হয়, আর আপনি যদি তাঁর বিয়েতে গিয়ে তাঁর মা-বাবাকে বলেন, ‘কি, তোমরা তো এবার একা হয়ে পড়লে। নাকি ঘরজামাই রাখবা? কী ঠিক করলা?’ এমন প্রশ্নে কিন্তু আপনার বিবেচনাবোধই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ‘বর বাবাজির আয়রোজগার তো বেশি না।’ কিংবা ‘ঘরে বসে আবার কী চাকরি করে?’জাতীয় বাক্যও বলবেন না। বর-কনের পোশাকের দামও জানতে চাইবেন না। কনে যদি চাকরিজীবী হন, ‘বিয়ের পরও কি চাকরি করবে?’ ধরনের প্রশ্ন করবেন না। এটা ওই দুটি মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। তাঁরা কী করবেন। সেই সিদ্ধান্ত তাঁদেরই নিতে দিন।
কার বিয়ে হলো না, কার সন্তান হচ্ছে না?
বর বা কনের পরিবারে অবিবাহিত কেউ থাকতেই পারেন। তাঁর বিয়ে দেওয়ার জন্য তোলপাড় শুরু করবেন না। নিতান্তই ‘ঘটকালি’ করতে চাইলে তাঁর সঙ্গে এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে পরবর্তী সময় আলাদাভাবে আলাপ করতে পারেন। তবে তিনি যদি বর বা কনের চেয়ে বয়সে বড় হন কিংবা সম্পর্কে তাঁদের গুরুজন হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর বিয়েবিষয়ক কথা বলা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। কেন এখনো বিয়ে হয়নি, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করতে যাবেন না। বিয়ে না করার ফলাফল সম্পর্কেও কোনো জ্ঞান জাহির করবেন না। এমনকি পরবর্তী সময়ও বর-কনের চেয়ে বয়সে বা সম্পর্কে বড় এসব মানুষের বিয়ে নিয়ে কথা তুলবেন না। আবার হয়তো বিয়েতে এমন কোনো দম্পতি এসেছেন, যাঁদের বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর, কিন্তু এখনো সন্তান হয়নি। কেন তাঁদের এখনো সন্তান হচ্ছে না, তাঁরা আর কত দিন দেরি করবেন—এমন প্রশ্ন কিন্তু আপনি ভুলেও করবেন না। নিঃসন্তান দম্পতিকে বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা সম্পর্কে নিজে থেকে কোনো পরামর্শও দিতে যাবেন না।
কাউকে ছোট করবেন না
যেখানে নিমন্ত্রণে গিয়েছেন, সেখানকার আয়োজনের সঙ্গে আপনার পরিচিত অন্য কারও বিয়ের আয়োজনের তুলনা করবেন না। খাবার আশানুরূপ না হলেও সে সম্পর্কে কথা বলবেন না। আপ্যায়নের খুঁত ধরবেন না। আর বর-কনের উচ্চতা, গায়ের রং, শারীরিক গড়ন সম্পর্কে মন্তব্য তো করবেনই না। ‘এই ছেলে কি এই মেয়ের যোগ্য’, ‘আরে, মনে হয় প্রেমের বিয়ে, নইলে কী আর এমন ছেলের সঙ্গে এই মেয়ের বিয়ে হয়?’জাতীয় কানকথা থেকে বিরত থাকুন। অন্য কেউ এসব কথা বলতে এলেও প্রসঙ্গ বদলে ফেলুন। দেনমোহর একটি সংবেদনশীল বিষয়। এই বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি নিয়েও নেতিবাচক মন্তব্য করবেন না। কারও সামর্থ্য নিয়ে উপহাস করবেন না। একটি পরিবারের সব স্বজন একই রকম আর্থিক অবস্থায় থাকে না। নিজের পরিবারের দিকে খেয়াল করুন, আপনার মামা, চাচা, খালা, ফুফুদের কেউ কেউও হয়তো আর্থিকভাবে তুলনামূলক পিছিয়ে। তাই কার বিয়েতে কোন স্বজন কী পরে এলেন, কী উপহার দিলেন, সেসব জিজ্ঞেস করা ঠিক নয়।
ঠাট্টার ছলেও এমন কথা বলবেন না, যাতে কোনো মানুষ আঘাত পেতে পারে। বিয়ের মতো একটি ফুলেল উৎসবে কেন আপনি কাঁটার মতো বিঁধবেন, বলুন তো?