রাতের সু-অভ্যাস
‘আমার না-বলা বাণীর ঘন
যামিনীর মাঝে
তোমার ভাবনা তারার
মতন রাজে।’
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় রাত। এ যুগে কেউ রাতের নিভৃতে ভাবেন, কেউ থাকেন সামাজিক মিডিয়ার উত্তপ্ত বিতর্কে, কেউ বার্তা পাঠান পৃথিবীর অপর প্রান্তে, কেউ আবার ঘুমান অঘোরে। অভ্যাস যেটিই থাকুক, সু-অভ্যাস গড়ে তোলাই কাম্য। ছোটবেলায় বাবা বলতেন, মানুষ অভ্যাসের দাস নয়, অভ্যাসই মানুষের দাস। রাতের সু-অভ্যাস সম্পর্কে জেনে নিন, আর বেরিয়ে আসুন অভ্যাসের দাসত্ব থেকে। এক দিন-দুদিনে রপ্ত হবে না ঠিকই, তবে শুরুর একটি-দুটি দিন বিন্দুর মতো হয়ে একদিন সিন্ধু তো হবেই।
রাতে ঘুমান। অকারণে রাত জাগবেন না। ভোরের আলো দেখুন, ভোরের হাওয়ায় শ্বাস নিন। ভোরটাকে উপভোগ করতে হলে রাতটাকেই কাজে লাগান ক্লান্তি মিটিয়ে নিতে। সুস্থ ও সুন্দর জীবন আমরা সবাই-ই চাই। ‘আরলি টু বেড অ্যান্ড আরলি টু রাইজ’ ঠিক কী এনে দিতে পারে, তা তো আমরা জানি। তা আমরা পেতেও চাই বটে, তবে নিয়ম মানতেই আমাদের যত সমস্যা!
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামসুন নাহার বলেন, রাতে হালকা খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর হালকা ব্যায়াম করা ভালো। ঘুমের আধা ঘণ্টা আগেই ব্যায়াম শেষ করে ফেলতে হবে। তবে সারা দিনে যাঁরা সময় পান না, তাঁরা চাইলে এ সময়টাকেই সারা দিনে ব্যায়ামের জন্য বেছে নিতে পারেন। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো অসুখ না থাকলে ৪৫ বছরের কম বয়সীরা হালকা ব্যায়াম ছাড়া অন্যান্য ব্যায়াম করতে পারেন এ সময়ে।
হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বলেন, রাতের ঘুম শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের সুস্থতা ও সৌন্দর্যের জন্য রাতের ঘুম অপরিহার্য। রাতে সময়মতো খাবার খাওয়া, হাঁটা ও ঘুমানো—সব মিলিয়েই একজন সুস্থ মানুষের রোজকার রুটিন।
কেমন হবে রুটিন
রাত ৮-৯টার মধ্যেই রাতের খাবার খেয়ে নিন। এর ২-৩ ঘণ্টা পর ঘুমাতে হবে। রাতে হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। ভাত ও লাল মাংসজাতীয় খাবার (যেমন গরুর মাংস) এ সময় না খাওয়াই ভালো। রাতে অন্য কোনো ব্যায়াম না করলেও খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটুন। ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে পারেন, খুব জোরে হাঁটার প্রয়োজন নেই।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সঙ্গে চাই সজীবতা
শোয়ার আগে হাত-মুখ ও পা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। গলা ও কাঁধ ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুছে নিতে পারেন, বিশেষত যাঁরা বাড়ির বাইরে কাজ করেন, তাঁদের জন্য কাঁধ ও ঘাড় ভিজিয়ে নেওয়া খুবই ভালো অভ্যাস। চাইলে গোসল করে নিতে পারেন। তবে ঘুমানোর আগে চুল শুকিয়ে নিতে হবে। পরিষ্কার করার পর ত্বকের ধরন অনুযায়ী নাইট ক্রিম লাগাতে পারেন। পায়ে ভেসলিন লাগাতে হবে। ঘুমের আগে ত্বক পরিষ্কার করা আবশ্যক।
স্বাভাবিক কিংবা শুষ্ক ত্বকে মেকআপ তোলার আগে মুখে তেল লাগিয়ে নিতে পারেন। জলপাই তেল, নারকেল তেল বা বেবি অয়েল ব্যবহার করা যায়। সঙ্গে ভেজা তুলা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। এরপর বেশি পরিমাণ পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। মুছে নেওয়ার পর ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
তৈলাক্ত ত্বক পরিষ্কার করতে ফেসওয়াশ প্রয়োজন। এরপর টোনার লাগাতে পারেন। সবশেষে পানিভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
সারা দিনে সময় না মিললে সপ্তাহে ২ দিন রাতে স্ক্রাবিং করুন। ১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া, ১ টেবিল চামচ দুধ ও আধা চা-চামচ মধু দিয়ে স্ক্রাব তৈরি করতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ২ ফোঁটা লেবুর রস যোগ করতে পারেন। মধুতে অ্যালার্জি থাকলে এর পরিবর্তে শসার রস নিন।
ঘুমের আগে চুল আঁচড়ে নিন। বেণি করে ঘুমানো ভালো। পারলে ঘুমানোর আগে মাথার ত্বকে ও চুলে তেল মালিশ করে নিতে পারেন সপ্তাহে ২ দিন।
ত্বকের যত্নে ঘরোয়া পদ্ধতি
৪ টেবিল চামচ ভাত (রান্নার পর স্টিলের চালনিতে চেলে নরম করে নিতে হবে), ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১টি সেদ্ধ আলু এবং ২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল (ক্যাপসুলের ভেতরের রস) মিশিয়ে একটি ক্রিম তৈরি করতে পারেন। এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য ভালো, ক্লিনজার হিসেবেও কাজ করে। ক্রিম লাগিয়ে ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। তবে চাইলে এই ক্রিম সারা রাতও লাগিয়ে রাখা যায়। একবার তৈরি করলে কাচের বয়ামে করে ফ্রিজে রেখে ৭ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিনই এ ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহার করলে তৈলাক্ত ত্বকে টোনার ব্যবহারেরও প্রয়োজন পড়ে না।
চোখের নিচে কালচে দাগ হলে
গোলাপের পাপড়িবাটা ১ টেবিল চামচ, ভেসলিন ১ চা-চামচ এবং গ্লিসারিন ১ চা-চামচ পরিমাণ নিয়ে চোখের ক্রিম তৈরি করতে পারেন। কাচের বয়ামে করে ফ্রিজে ৭-১০ দিন পর্যন্ত রেখে দেওয়া যায়। প্রতিদিন শোয়ার সময় চোখের নিচে লাগিয়ে নিন। ভোরবেলা মুখ ধোয়ার আগে এ ক্রিম ওঠানোর প্রয়োজন নেই।
ঘুমের প্রস্তুতি
পাটভাঙা কাপড় (নতুন নয়) পরে ঘুমাতে পারেন। ইস্তিরি করা, পরিচ্ছন্ন ও নরম একটি কাপড় পরে ঘুমালে সতেজ অনুভব করবেন। পারলে ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করুন। সুগন্ধে ভালো ঘুম হবে। টেবিল ল্যাম্পে হালকা আলো জ্বালিয়ে রাখতে পারেন। রজনীগন্ধা ও বেলি ফুলের মতো ফুল প্রাকৃতিক অ্যারোমার কাজ করে।