যেমন ত্বক তেমন ফেসিয়াল
ত্বক যেমনই হোক, প্রতি মাসে ফেসিয়াল করা প্রয়োজন। একবারই যথেষ্ট। তবে প্রয়োজনে অনেকে ১৫ দিন পরপর করেন। বাসায় বসে রূপচর্চার পাশাপাশি সৌন্দর্যচর্চা কেন্দ্র বা বিউটি স্যালন থেকে নেওয়া বিশেষায়িত এসব সেবায় পরিপূর্ণ হয় রূপচর্চার রুটিন। সৌন্দর্যচর্চা কেন্দ্র বাছাইয়ের পাশাপাশি পরামর্শ করে নেওয়া প্রয়োজন রূপবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। কারণ, তালিকায় থাকা সব ফেসিয়াল সবার জন্য নয়। ত্বকের ধরন বুঝে নিতে হবে প্রথমেই। কারণ, তৈলাক্ত ত্বকে যেটা মানিয়ে যাবে, শুষ্ক বা মিশ্র ত্বকের জন্য সেটার মাধ্যমে খুব একটা উপকার না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া ত্বকভেদে প্রয়োজনও পাল্টে যায় অনেকখানি। তাই ত্বকের ধরন বুঝে ফেসিয়ালের মতো বিশেষায়িত সেবা গ্রহণের কথাই বলে থাকেন ত্বকবিশেষজ্ঞরা।
স্বাভাবিক থেকে শুষ্ক ত্বকে
স্বাভাবিক ত্বক সাধারণত দাগ-ছোপ, বলিরেখা, হাইপারপিগমেন্টেশন আর ঝুলে যাওয়ার মতো সমস্যা থেকে মুক্ত। তাই এ ধরনের ত্বকের ফেসিয়ালগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়, পুষ্টি ঠিকমতো পৌঁছে যায় ত্বকের গভীরে। এ ক্ষেত্রে ক্ল্যাসিক ফেসিয়ালগুলো বেছে নেওয়া যায় অনায়াসে, যেমন ক্লিনজিং, হারবাল, স্পায়ের ফেসিয়ালগুলো। ত্বকে যদি একটু শুষ্ক ভাব থাকে, সে ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজিং ফেসিয়াল সেরা। এটা ত্বকে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করে। এ ছাড়া ডায়মন্ড আর সিল্ক ফেসিয়ালও ত্বকের শুষ্কতা সারাইয়ের জন্য চমৎকার। সঙ্গে উজ্জ্বলতার জোগান দিতে জুতসই। দাগ–ছোপও দূর করে অনেকাংশে। সারায় রোদে পোড়া দাগ। তবে শুষ্ক করে না। বিশেষায়িত সেবার জন্য রয়েছে কুল রেডিয়েন্স ফেসিয়াল। অত্যাধুনিক সৌন্দর্য যন্ত্র ব্যবহার করায় এ থেকে পাওয়া যায় ভালো ফলাফল। মুক্তি মেলে খসখসে ভাব আর র্যাশ থেকে।
তৈলাক্ত ত্বকে
এ ধরনের ত্বকের প্রধান সমস্যা তেলতেলে ভাব। ব্রণ, দাগ–ছোপ আর রোদে পোড়া ভাব বেশি দেখা যায়। তাই ত্বকের গভীর থেকে পরিষ্কার করবে, বেছে নিতে হবে এমন ফেসিয়ালই। ট্রিটমেন্টে থাকতে হবে এক্সফোলিয়েটিং, টোনিং, মাস্কিং আর প্রোটেকশন। সে ক্ষেত্রে ডিপ ক্লিন, পার্ল বা সিলভার ফেসিয়াল কার্যকর। ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার তো হবেই, হবে ডিটক্সিফায়েড। লোমকূপগুলো গভীর থেকে পরিষ্কার হবে, ফলে ত্বকে ব্রণ বা ব্ল্যাক হেডসের সমস্যা কমে আসবে। এ ফেসিয়ালগুলো ত্বকে আর্দ্রতা জোগাবে ঠিকই, শুষ্ক না করে। এ ছাড়া করানো যেতে পারে অরেঞ্জ ফেসিয়াল। রোদে পুড়ে যাওয়া তৈলাক্ত ত্বকের দাগ সারিয়ে এর উজ্জ্বলতা বাড়াতে জুড়িহীন এটি। গোল্ড বা লাইটেনিং ফেসিয়ালও এ ধরনের ত্বকে চমৎকার মানিয়ে যায়। ভেতর থেকে ত্বক পরিষ্কার করে, রোদে পোড়া ভাব আর দাগ–ছোপ সরাতে সহায়তা করবে এটি।
মিশ্র ত্বকে
এ ধরনের ত্বকে চাই বিশেষ যত্ন। ফেসিয়ালও নেওয়া চাই বুঝে–শুনে। সাধারণত শুষ্ক ও তৈলাক্ত—দুটো ভাবই সক্রিয় থাকে মিশ্র ত্বকে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্টযুক্ত ফেসিয়ালগুলো বাছাই তাই জরুরি, যেগুলো উভয় ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী। এ ছাড়া ত্বকের টোন ও টেক্সচার দুটোকেই আরও উন্নত করে তুলবে, এমন ফেসিয়াল বেছে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের। এসেনশিয়াল অয়েলযুক্ত স্পা ফেসিয়াল করে নেওয়া যেতে পারে।
বিশেষ ধরনের ত্বক সমস্যায়
অনেকের ত্বকেই বিশেষ ধরনের নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা মেটানোর প্রয়োজন। যেমন বুড়িয়ে যাওয়া ত্বকে চাই সজীবতা ও উজ্জ্বলতা। এ ধরনের ত্বকে অ্যান্টি–এজিং ফেসিয়ালই সেরা। অক্সি–কোলাজেনের মধ্যে অন্যতম এটি। কারও ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে গেলে ব্রাইট নারিশিং বা অক্সি ব্রাইট ফেসিয়ালগুলো বেছে নেওয়া যায় চোখ বন্ধ করেই। ত্বকে ধুলা–ময়লা আর মৃত কোষের প্রকোপ বাড়লে ডিপ ক্লিনজিং বা ডিটক্সিফায়িংয়ের মতো ফেসিয়ালগুলোতেই মিলবে এর সমাধান।
এ ছাড়া আলাদা করে চোখ, গলা, পিঠ আর হাত-পায়ের জন্যও মিলবে আলাদা আলাদা বিশেষায়িত সেবা, যা শুধু এ অংশের নির্দিষ্ট সমস্যাগুলো সারাতে জাদুকরি। তবে একবার ফেসিয়াল করেই যদি ফলাফলের আশায় বসে থাকা হয়, তা ভুল। কারণ বিশেষায়িত এসব সেবা করাতে হয় নিয়ম মেনে, নিয়মিত। তবেই এর পরিপূর্ণ উপকারিতা উপভোগ করা যায়।
লেখক: পরিচালক, পারসোনা