অ্যাসিড শব্দটা শুনলেই প্রথমে ভড়কে যাওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, অ্যাসিড শব্দটা শুনলেই আমার মনে আসে পুরোনো অ্যাকশন সিনেমার সবুজ, বুদবুদ ওঠা ত্বক ঝলসে দেওয়া ভয়ংকর অ্যাসিডের কথা। তবে বিংশ শতাব্দীতে এসে এটা ভাবাটা কেবলই বোকামি। কালের ধারাবাহিকতায় স্কিন কেয়ারের নতুন সংযোজন এখন নানা ধরনের অ্যাসিড। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো, বলিরেখা দূর করা, একনেসহ নানা ধরনের সমস্যা দূর করতে বিভিন্ন প্রকার অ্যাসিড এখন অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখে।
বর্তমানে অনেক নামীদামি কোম্পানি এবং ত্বক বিশেষজ্ঞ এসব অ্যাসিড তৈরি করছেন। তবে অ্যাসিড ত্বকে ব্যবহারের আগে সঠিক পরিমাণ এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে জেনে নিলে স্কিন কেয়ারে ভালো সুফল পাবেন।
জনপ্রিয় কিছু কোম্পানির মধ্যে অন্যতম হলো দ্য অর্ডিনারি, যারা স্কিন কেয়ারের বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিড বাজারে নিয়ে এসেছে। স্কিন কেয়ারের জন্য অতি আলোচিত অ্যাসিডগুলোর মধ্যে রয়েছে রেটিনল, হাইলিউরোনিক অ্যাসিড, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, নিয়াসিনামাইড অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, অ্যাজেলাইক অ্যাসিড ইত্যাদি।
অ্যাসিডগুলোর ব্যবহার ও কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হলো, যাতে আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী অ্যাসিড বাছাই করতে সহজ হয়।
রেটিনল: এটি মূলত ভিটামিন এ থেকে তৈরি। ত্বকের বলিরেখা দূর করতে, টেক্সচার ঠিক করতে, দাগ কমাতে এবং ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তবে এটি রেটিনয়েড, ভিটামিন সি, ডিরেক্ট অ্যাসিড, কপার পেপ্টাইডসের সঙ্গে এক রুটিনে কিংবা লেয়ার করে ব্যবহার করা যায় না, বদলে বদলে ব্যবহার করতে হয়। এই অ্যাসিডযুক্ত প্রোডাক্টগুলো রাতে ব্যবহারের উপযোগী।
নায়াসিনামাইড: এটি ভিটামিন বি-৩ হিসেবেও পরিচিত। এই অ্যাসিড ত্বকে সেবাম উৎপন্ন হওয়া কমায়, তাই ব্রণজনিত সমস্যা কম হয়। ত্বকের মলিনতা দূর করে, টেক্সচার ভালো করে এবং বয়সের ছাপ কমায়। এটি ভিটামিন সির সঙ্গে ব্যবহার করা যায় না। সকালে ও রাতে দুবেলা ব্যবহার করা যায়।
হায়ালিউরনিক অ্যাসিড: এই অ্যাসিডের ব্যবহার স্কিন কেয়ারে অনেক আগে থেকেই রয়েছে। মূলত ময়েশ্চারাইজারজাতীয় প্রোডাক্টগুলোতে হায়ালিউরনিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বর্তমানে সেরামগুলোতে আলাদাভাবে এর ব্যবহার বেড়েছে। মূলত ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখাই এই অ্যাসিডের কাজ। যেকোনো সময়, যেকোনো উপাদানের সঙ্গেই ব্যবহার করা যায় এই অ্যাসিড।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড: যাঁদের ত্বকে একনে বেশি হয়, যাঁরা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের একমাত্র হিরো ইনগ্রিডিয়েন্ট এই স্যালিসাইলিক অ্যাসিড। এটি একমাত্র বেটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড (বিএইচএ), যা ত্বকের সেবাম প্রোডাকশন কমাতে সাহায্য করে এবং লোমকূপ পরিষ্কার রাখে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি ত্বকের স্তরকেও উন্নত করে। তবে গর্ভবতী, বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, এমন কেউ অথবা অ্যাসপিরিনে অ্যালার্জিকদের এই অ্যাসিড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ল্যাকটিক অ্যাসিড: মৃদু রাসায়নিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে ল্যাকটিক অ্যাসিডের সুনাম রয়েছে। এটি হাইপার পিগমেন্টেশন কমায়, ব্রণের দাগছোপ দূর করে, মলিন ত্বককে রিপেয়ার করে এর ভারসাম্য বজায় রাখে। তবে সরাসরি অ্যাসিড, পেপটাইডস, রেটিনয়েডস, ভিটামিন সি ইত্যাদির সঙ্গে একই রুটিনে এই অ্যাসিড ব্যবহার করা যাবে না।
সাইট্রিক অ্যাসিড: টক ফল থেকে প্রাপ্ত এই অ্যাসিড মূলত বেটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড (বিএইচএ)। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ একটি অ্যাসিড, যা ত্বকের অকালে বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি এএইচএর তুলনায় কম অ্যাসিডিক। নায়াসিনামাইড, পেপটাইডস, ডিরেক্ট অ্যাসিড, রেটিনয়েডস ইত্যাদির সঙ্গে একত্রে এই অ্যাসিড ব্যবহার করা যায় না এবং রাতে ব্যবহার করা উত্তম।
অ্যাজেলাইক অ্যাসিড: যাঁদের ত্বকে লালচে ভাব আছে, রোসেসিইয়া এবং ব্রণ রয়েছে, তাঁরা ত্বকের উন্নতির জন্য নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন এই অ্যাসিড। এটি আনইভেন স্কিনটোন ও মলিনতা দূর করতেও সাহায্য করে। এই অ্যাসিড রাতে ব্যবহার করা উত্তম।
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড: ব্ল্যাকহেডস এবং ব্রণের সমস্যা দূর করতে এটি একটি অসাধারণ উপাদান। এটি একটি বহুমুখী এএইচএ, যা ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং পোরস মিনিমাইজ করতে সাহায্য করে। বয়সের ছাপ কমাতেও এর জুড়ি নেই। এই অ্যসিড রাতে ব্যবহার করাই শ্রেয়।
অ্যাসকরবিক অ্যাসিড: অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ভিটামিন সির একটি সিন্থেটিক সংস্করণ, যার রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সুবিধা। যাঁরা ত্বকের উজ্জ্বলতা চাচ্ছেন, তাঁদের কোলাজেন উৎপাদনের জন্য এই অ্যাসিড ভিটামিন সির একটি ভালো বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। নায়াসিনামাইড, ডিরেক্ট অ্যাসিড, পেপটাইডসের সঙ্গে একই রুটিনে এই অ্যাসিড ব্যবহারের উপযোগী নয়।
ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড: ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড এমন একটি এএইচএ, যা ত্বকের মেলাসমা, হাইপার পিগমেন্টেশন, রিঙ্কেল (বলিরেখা), ব্রণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাদুর মতো কাজ করে। এই অ্যাসিড রাতে ব্যবহার করা শ্রেয়। এই অ্যাসিড মূলত আঙুরের নির্যাস থেকে তৈরি। উচ্চ অ্যাসিডিক হলেও এটি গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের থেকে কম শক্তিশালী। তাই যাঁরা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ব্যবহার করতে ভয় পাচ্ছেন, তাঁরা এটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
ওলিক অ্যাসিড: শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা স্কিন কেয়ারে এই অ্যাসিড রাখতে পারেন। এটি ফ্যাটি অ্যাসিডসম্পন্ন ময়েশ্চারাইজারের একটি কম্পাউন্ড। এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকায় যাঁদের সোরিয়াসিস, অ্যাকজিমা, এমনকি সিবোরিক ডার্মাটাইটিস (মাথার ত্বকে অতিরিক্ত খুশকি), তাঁদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী একটি উপাদান।
ফেরুলিক অ্যাসিড: এটি ফ্রি র্যাডিক্যালসম্পন্ন একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলো রোধ করতে সহায়তা করে। এই অ্যাসিড সাধারণত ভিটামিন সি, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, ভিটামিন ই ইত্যাদি কম্পাউন্ডের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপেল, কমলার মতো গাছের কোষের দেয়ালে এবং বীজে এই অ্যাসিড পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত প্রসেস এই অ্যাসিডের কার্যকারিতা নষ্ট করে, তাই কেনার আগে দেখে নিতে হবে কোন প্রোডাক্টে এটি কতটুকু প্রসেস করা আছে।
সতর্কতা
বর্তমানে আমাদের দেশীয় আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে স্কিন কেয়ারে এই অ্যাসিডগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেকোনো অনলাইন শপ থেকে প্রি-অর্ডারে কিংবা স্পট পারচেজ প্রসেসে কেনা সম্ভব এই প্রোডাক্টগুলো। তবে অ্যাসিড ব্যবহারে প্রয়োজন অতিরিক্ত সতর্কতা। যেমন—
• অ্যাসিড ত্বককে সেনসিটিভ করে তোলে, তাই বাইরে বের হলে এবং বাসায় থাকলে দিনে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
• যাঁরা স্কিন কেয়ারে অ্যাসিড ব্যবহারে একেবারেই নতুন, তাঁরা অবশ্যই প্রোডাক্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কম পরিমাণে অ্যাসিড আছে, এমন প্রোডাক্ট বেছে নিন। ত্বকে মানিয়ে গেলে ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
• জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বেড়েছে নকল পণ্য। তাই বিশ্বস্ত এবং ভালো জায়গা থেকে কেনার চেষ্টা করুন।
• যেকোনো প্রোডাক্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রেই প্রথমে প্যাচ টেস্ট করে নিন যে আপনি এতে অ্যালার্জিক কি না।
• স্কিন অতিরিক্ত সেনসিটিভ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।