চুলের যত্নে যা জানতে হবে
নারী কিংবা পুরুষ সবারই চুলের যত্ন নিতে হয়। চুলের যত্ন নিয়ে আমাদের প্রশ্নের বা জানার আগ্রহের শেষ নেই। আর সম্ভবত এর যত্নেই সবচেয়ে বেশি টোটকা ব্যবহার করা হয়, যার কিছু কাজ করে কিছু করে না। চুলের যত্ন নিয়ে ভ্রান্ত তথ্যেরও শেষ নেই। চুলের যত্নে কিছু সাধারণ বিষয় জানা থাকা জরুরি।
প্রতিদিন চুল ধুতে হবে
রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, ‘আমাদের দেশের আবহাওয়ায় প্রতিদিনই শ্যাম্পু করা উচিত। যাঁরা রোজ বাইরে যান, তাঁদের জন্য এটি অবশ্যই করণীয়। যাঁরা বেশির ভাগ সময় ঘরেই থাকেন, তাঁদের ধুলাবালুতে চুল তেমন ময়লা হয় না। সে ক্ষেত্রে এক দিন পরপর চুল পরিষ্কার করা যেতে পারে।’ চুল ও মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলে বাইরে বের না হলেও প্রতিদিনই শ্যাম্পু করার পরামর্শ দেন আফরোজা পারভীন। সব ঋতুতেই এটি মেনে চলা দরকার।
চুল কম বা ছোট হলে শ্যাম্পুর পরিমাণ কম হবে এবং চুলের পরিমাণ বেশি ও চুল লম্বা হলে শ্যাম্পুর পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে। শ্যাম্পুর সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে নিলে চুল পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে।
চুলে শ্যাম্পুর পরিমাণ নিয়ে আমাদের ভুল ধারণার কমতি নেই। কতটুকু শ্যাম্পু চুলে ব্যবহার করা হবে তা নির্ভর করবে চুলের ঘনত্ব ও দৈর্ঘ্যের ওপর। চুল কম বা ছোট হলে শ্যাম্পুর পরিমাণ কম হবে এবং চুলের পরিমাণ বেশি ও চুল লম্বা হলে শ্যাম্পুর পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে। শ্যাম্পুর সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে নিলে চুল পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে। শ্যাম্পু করতে হবে দুবার, অর্থাৎ একবার শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে আবার করতে হবে। সময়টা এখন ধুলোবালুর। এ সময় ধুলাবালুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় খুশকির সমস্যা বৃদ্ধি পায়। এ সময় তাই প্রতিদিন শ্যাম্পু করা উচিত।
কন্ডিশনিং কয়বার
চুল শুষ্ক, তৈলাক্ত ও মিশ্র—এই তিন ধরনের হয়ে থাকে। শুষ্ক চুলের জন্য কন্ডিশনিং করা প্রয়োজন নিয়মিত। চুল বেশি শুষ্ক হলে প্রতিবার শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনিং করা উচিত। চুল তেলতেলে বা তৈলাক্ত হলে কন্ডিশনার ব্যবহার না করলেও চলে। মিশ্র ধরনের চুলে এক দিন পরপর কন্ডিশনিং করা যায়। কন্ডিশনার চুলে লাগাতে হবে চুলের আগা থেকে ওপরের দিকে। গোড়ায় কোনোমতেই এটি লাগানো যাবে না। কন্ডিশনার ব্যবহারের পরিমাণও নির্ভর করবে চুলের দৈর্ঘ্যের ওপর। ছোট চুল হলে কম, লম্বা হলে অপেক্ষাকৃত বেশি কন্ডিশনার নিতে হবে।
কত দিন পরপর তেল দেবেন
তেল নিয়ে আমাদের বিভিন্ন ধারণা কাজ করে। চুলে কি তেল নিয়মিত দিতে হবে, এ প্রশ্ন সবার মনেই। এর উত্তর হলো প্রতিদিন চুলে তেল দেওয়াটা জরুরি নয়। তবে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও ঝলমলে রাখার জন্য সপ্তাহে অন্তত এক দিন চুলের গোড়ায় এবং পুরো চুলে তেল দিতে হবে। চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হলে দুদিন পরপর তেল ম্যাসাজ করা ভালো। তেল দিয়ে এক ঘণ্টার মতো রেখে চুল শ্যাম্পু করে ফেলতে পারেন। অতিরিক্ত তৈলাক্ত চুল হলে এত ঘন ঘন তেল দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
যন্ত্রের ব্যবহার
চুলের যত্নে এবং চুল সাজাতে হেয়ার ড্রায়ার, আয়রন বা কার্লারের মতো অনেক ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এগুলো দিয়ে চুল শুকানো এবং স্টাইলিং করা হয়। কিন্তু চুল শুকাতে সব সময় কি হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা ভালো? আয়রন বা হেয়ার কার্লারের মতো যন্ত্র ব্যবহার করলে চুলের কোনো ক্ষতি হয় কি? রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি ও আফরোজা পারভীন দুজনই জানিয়েছেন, খুব প্রয়োজন না হলে এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। তবে একেবারে বাদও দেওয়া যাবে না।
তবে এসব যন্ত্র চুলে ব্যবহার করলে চুলের ওপর দিয়ে ধকল যায়। সে ক্ষেত্রে নিতে হবে বাড়তি যত্ন। নিয়মিত গরম তেল মালিশ এবং চুলের ধরন বুঝে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলে যন্ত্র ব্যবহারের কারণে চুলের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। শারমিন কচি বলেন, গরম বাতাসের হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে ঠান্ডা বাতাসেরটি ব্যবহার করতে হবে। আর আয়রন বা হেয়ার কার্লারের তাপ চুলে লাগানোর পর বাড়ি ফিরে নিবিড় কন্ডিশনিং করতে হবে।
হেয়ার স্প্রে কি ক্ষতিকর?
স্টাইলিংয়ের জন্য হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করে থাকেন অনেকেই। রূপবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভালো মানের হেয়ার স্প্রে চুলে প্রতিদিন ব্যবহার করলেও কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। তবে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি এটি চুলে রাখা ঠিক নয় বলেও মত দেন তাঁরা। হেয়ার স্প্রে ব্যবহারের পর তেল দিয়ে স্প্রে তুলে ফেলে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। ময়লা চুলে স্প্রে লাগানো যাবে না।
চুল রাঙাব কদিন বাদে?
রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীনের মতে, যখনই মাথায় সাদা চুল দেখা যায়, তখনই চুলে রং করা যাবে। ফ্যাশনের জন্য হলে বছরে দুই থেকে তিনবারের বেশি চুলে রং করা উচিত নয় বলে মনে করেন রূপবিশেষজ্ঞরা। এটাও মনে রাখতে হবে, চুলে যেকোনো রাসায়নিকের ব্যবহারের পরেই বাড়তি যত্ন নেওয়া দরকার। কোনো কোনো রূপবিশেষজ্ঞ মনে করেন, চুলে একবার রং করার পর ছয় মাসের মধ্যে পুনরায় রং করানো উচিত নয়।