চুলে শীতের পরশ
‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য।’ নারীর কালো চুল নিয়ে ভাব ও ভালোবাসার প্রকাশ কবির কবিতাতে ঠাঁই পেয়েছে বহুকাল থেকেই। কেউ আবার নারীর রূপ দেখার আগেই পিঠ ছড়ানো চুলের রূপে মুগ্ধ হয়ে যান। যাঁকে নিয়ে মুগ্ধতা গরম, বৃষ্টি পেরিয়ে শীতের আগমনী বার্তা তাঁর জন্য কতটা সুখকর? শীতের শুষ্কতা, বাতাসে আর্দ্রতা, হিমহিম বাতাসে সাধের চুল উড়বে তো মনের খুশিতে? বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি জানিয়েছেন শীতে চুলের যত্ন।
বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকার কারণে শীতে চুল হয়ে ওঠে রুক্ষ। বেড়ে যায় খুশকির উপদ্রব। খুশকির জন্য ভালো শ্যাম্পু ব্যবহার সুন্দর চুলের পূর্বশর্ত। তৈলাক্ত চুলের ক্ষেত্রে মাথার তালু পরিষ্কার রাখা জরুরি। এক দিন পর চুলের উপযোগী শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুলে ভালো। শীতকালে অনেকের চুলে রুক্ষতা চলে আসে। আগা ফেটে যায়। সমাধান—রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চুলে নারকেল তেল বা জলপাই তেল গরম করে মালিশ করে নিন। সারা রাত চুলে তেলের উপস্থিতি রুক্ষতা কমিয়ে আনবে। ২ দিন পরপর তেলের সঙ্গে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল ভেঙে মিশিয়ে মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে ২-৩ ঘণ্টা রাখুন। সারা রাত রাখতে পারলে আরও ভালো। সকালে ধুয়ে ফেলুন। তবে বেশি গরম পানি দিয়ে কখনো চুল ধোয়া উচিত নয়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পারলে বজ্রাসনে বসে চুল আঁচড়াবেন। এতে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং আপনি মানসিক চাপমুক্ত হয়ে ঘুমাতেও পারবেন।
শুষ্ক চুলের ক্ষেত্রে হট অয়েল থেরাপি ভালো কাজ করে। সামান্য গরম জলপাই তেল চুলের গোড়ায় মালিশ করে গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মাথায় জড়িয়ে রাখুন। চুলের উপযোগী শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে ফেলবেন।
তৈলাক্ত চুলের যত্ন
সাধারণভাবে তৈলাক্ত চুলে ধুলাবালি বেশি আটকায়। এ ধরনের তৈলাক্ত চুলে শ্যাম্পু প্রায় প্রতিদিনই করতে হয়। শীতের সময় শ্যাম্পু করলেও তৈলাক্ত চুল নির্জীব দেখায়। শ্যাম্পুর সঙ্গে সামান্য বেকিং পাউডার মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুল দেখাবে সজীব। এ ধরনের চুলে মাথার ত্বকে তেল থাকলেও আগার দিকে রুক্ষ হয় বেশি। অন্য সময়ের চেয়ে চুল পড়ার পরিমাণটাও বেড়ে যায়।
শুকনো রিঠা, শিকাকাই ও আমলকী সারা রাত ভিজিয়ে পরদিন ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। তরল মিশ্রণটি শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে নিশ্চিন্তে। এ ছাড়া সপ্তাহে দুই দিন বাড়িতে তৈরি প্যাক লাগালে চুল থাকবে ঝলমলে। ২ চা-চামচ নিমপাতা গুঁড়া, ২ চা-চামচ মেথিগুঁড়া, ২ চা-চামচ আমলা, ২ চা-চামচ টক দই, ১টি ডিমের সাদা অংশ, আধা কাপ উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মিশিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে ঘণ্টাখানেক রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
শুষ্ক চুলের যত্ন
চুলের উজ্জ্বল ও মসৃণ ভাব ফিরিয়ে আনতে আধা মগ পানিতে লেবুর রস ও চায়ের লিকার মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে চুলের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা ফিরে আসবে। কনকনে ঠান্ডা আপনার চুলের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। শীতে শুষ্ক চুলের যত্ন নিতে জবা ফুলবাটা, ২ চা-চামচ মধু, ২ চা-চামচ আমলকীর রস, টক দই, ডিমের কুসুম, মেথিগুঁড়া ও ২ চা-চামচ ক্যাস্টর অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। পুরো চুলে লাগিয়ে রাখতে হবে ঘণ্টাখানেক। শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
স্বাভাবিক চুলের যত্ন
সব ধরনের চুলের মধ্যে সবচেয়ে ঝামেলামুক্ত চুল—স্বাভাবিক চুল। এ ধরনের চুলের জন্য স্বাভাবিক পরিচর্যাই যথেষ্ট। হট অয়েল ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে সপ্তাহে দুই দিন। নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখাটা খুব জরুরি। ন্যাচারাল কন্ডিশনিংয়ের জন্য চুলে তেল দিলেই যথেষ্ট। দিনে কয়েকবার মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে পারলে ভালো। তাহলে চুলে যেমন জট হবে না, তেমনি মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালনও ভালো থাকবে।