২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ঈদের সাজে থাকবে যে ধরনের মেকআপ

জেন জি প্রজন্মের তরুণীদের কাছে এ ধরনের পণ্যের চাহিদা অনেক
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

শুধু জামা-জুতা পরলেই তো হবে না, মনের মতো সাজতেও হবে। ঈদ হবে গরমের মধ্যে। তাই সাজে এবার প্রাকৃতিক ভাবটা বেশি রাখা হবে। গরমে মেকআপ যতটা সম্ভব কম রাখা ভালো। আন্তর্জাতিক মেকআপের ধারাটাও এখন সে রকম। এ ধরনের সাজের ক্ষেত্রে খুব বেশি মেকআপ পণ্যের প্রয়োজন নেই। ভালো মানের ফাউন্ডেশন, কনসিলার, ব্লাশন, কাজল, মাসকারা, আইশ্যাডো যথেষ্ট।

আন্তর্জাতিক সৌন্দর্যধারায় টিকটকের প্রভাবের কারনে ব্লাশনের বিক্রি এখন বেশি
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

গরমে মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী করতে প্রাইমারের জুড়ি নেই। একসঙ্গে এটি অনেক কাজ করে। যেমন ত্বকের রোমকূপ ছোট রাখে। গরমে অনেকের ত্বকে তৈলাক্ত ভাব দেখা দেয়। প্রাইমার এই তেলতেলে ভাব কমায়। বিভিন্ন প্রসাধনী দোকানের বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, গরম ও ঈদ উপলক্ষে প্রাইমারের বিক্রি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়ে গেছে। এখন ত্বকের ধরন অনুযায়ী এই পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। রূপবিশেষজ্ঞদের মতে, শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং ও মিশ্র এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তেলমুক্ত প্রাইমার ব্যবহার করা উচিত।

গরমে মেকআপের বেজ হালকা রাখাটা আবশ্যক। এই আবহাওয়ায় সব ত্বকের জন্যই লাইটওয়েট ফর্মুলার ম্যাট ফাউন্ডেশন খুব ভালো কাজ করে। এটি তরল বা পাউডার, দুই রকমেরই হতে পারে। ম্যাট ফাউন্ডেশনের ফর্মুলায় তেল-জাতীয় উপাদান কম থাকে। তাই মেকআপ ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বেজ মেকআপে ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি নতুন কিছু পণ্যের চাহিদা বেশ বেড়েছে। সেগুলো হলো বিবি (বিউটি বাম) ও সিসি (কালার কারেক্টর) ক্রিম এবং টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার। যাঁরা মেকআপে হালকা বা মিনিমাল ধারা মেনে চলতে চান ও যাঁদের ত্বকে দাগছোপ, বলিরেখার সমস্যা নেই, তাঁরা বেজ মেকআপ হিসেবে গরমে এগুলো ব্যবহার করতে পারেন। আরেকটি কথা না বললেই নয়, ফাউন্ডেশন বলুন বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার, এখন এই পণ্যগুলোতে এসপিএফ যুক্ত করা হয়েছে। জেন জি প্রজন্মের তরুণীদের কাছে এ ধরনের পণ্যের চাহিদা অনেক।

বাজারে এখন অনেক ব্র্যান্ডের মেকআপ পণ্য পাওয়া যাচ্ছে
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

বেজ মেকআপের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হলো কনসিলার। তবে সবার এটি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। স্পেলন্ডর বাই আনিকা বুশরার কর্ণধার আনিকা বুশরা জানান, যাঁদের ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশন; অর্থাৎ দাগছোপের সমস্যা নেই, তাঁদের কনসিলার ব্যবহার না করলেও চলবে। যাঁদের আছে, তাঁরা তাঁদের রঙের চেয়ে এক বা দুই শেড হালকা কনসিলার বেছে নিন। ত্বকের যেখানে দাগ আছে, শুধু সেখানে লাগান।

আন্তর্জাতিক সৌন্দর্যধারায় টিকটকের প্রভাব যে কত বেশি, তার প্রমাণ মেলে ব্লাশনের বিক্রি দেখলে। গত বছর টিকটকে ভাইরাল হয় আন্ডারপেইন্টিং। সাধারণত ফাউন্ডেশন ও কনসিলারের পর ব্লাশন ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু আন্ডারপেইন্টিং পদ্ধতিতে আগে ব্লাশন লাগিয়ে তার ওপর ফাউন্ডেশন লাগাতে হবে। এভাবে ত্বকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। মেকআপের এই নতুন পদ্ধতির জন্যই বিশ্বজুড়ে ব্লাশনের বিক্রি বেড়ে গেছে। বাংলাদেশেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। গ্রীষ্মের হালকা মেকআপের জন্য আন্ডারপেইন্টিং খুব কার্যকর একটি পদ্ধতি। রাজধানীর বিভিন্ন প্রসাধনীর দোকানে কথা বলে জানা গেল যে লিকুইড ও পাউডার—দুই ধরনের ব্লাশনের বিক্রিই বেড়েছে। এখন গোলাপি ও পিচ রঙের ব্লাশন খুব বেশি চলছে।

ঠোঁটের সাজে চিরাচরিত লিপস্টিক তো থাকছেই, সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন পণ্য লিপ স্টেইন ও লিপ টিন্ট। মূলত কোরিয়ান বিউটি ট্রেন্ড বা সাজার ধারা থেকে এসেছে এই দুটি পণ্য। আনিকা বুশরা বলেন, এখন লিপ স্টেইন ও টিন্টের জনপ্রিয়তা অনেক। এগুলো দামেও কম। আর চাইলেই লিপ স্টেইন ও টিন্ট ব্লাশ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। লিপ স্টেইন একটু গাঢ় টোনের হয় আর লিপ টিন্ট হালকা টোনের। লিপস্টিকের কথায় ফিরি। গরমে সব সময় ম্যাট লিপস্টিক খুব চলে। কারণ, এটি দীর্ঘস্থায়ী। এবারও তা চলছে। ঈদ উপলক্ষে কোনো একটি বা দুটি নির্দিষ্ট রং যে খুব বেশি বিক্রি হচ্ছে, এমন নয়। ক্রেতারা নুডের শেড—মভ, গোলাপি, ক্ল্যাসিক লাল, বাদামি, চকলেট, বেগুনি, বারগেন্ডি রঙের লিপস্টিকই বেশি কিনছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিউটি ইনফ্লুয়েন্সারদের ভ্লগ দেখে জানতে পারবেন কোন ব্র্যান্ডের কোন মেকআপ পণ্য ভালো
ছবি : সাবিনা ইয়াসমিন

বরাবরের মতো চোখের সাজ কাজল, মাসকারা ও আইশ্যাডো—এই তিন পণ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। এবার গরমে চোখের সাজের ধারাটা হালকা থাকছে, বললেন আনিকা বুশরা। কাজলের জনপ্রিয়তা আছে আগের মতোই। এর সঙ্গে মাসকারা ব্যবহারে চোখের সৌন্দর্য ফুটে উঠবে, রঙের ক্ষেত্রে কালো বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। গরমের মেকআপে খুব রংচঙে আইশ্যাডোর চাইতে হালকা, যেমন নুড বা নিউট্রাল, পিচ, মভ শেডগুলো বেশি চলছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সৌন্দর্যধারায় ফিরে এসেছে স্মোকি আই। যাঁরা সাজে একটু জমকালো ভাব আনতে চান, তাঁরা চাইলে স্মোকি আই করতে পারেন।

বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের মেকআপ পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট কিছু ব্র্যান্ডের বিক্রি বেশি বেড়েছে। কারণ সচেতনতা। সবাই এখন এমন পণ্য কিনতে চান, যা ত্বকে কোনো ক্ষতি করবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিউটি ইনফ্লুয়েন্সারদের ভ্লগ দেখে জানতে পারা যায়, কোন ব্র্যান্ডের কোন মেকআপ পণ্য ভালো। আমাদের দেশে প্রসাধনীর বাজারে এখন ফ্লোরমার, গোল্ডেন রোজ, এলএ গার্ল, পিয়েরে কার্দা, মেবেলিন, লরিয়েল প্যারিস, ল্যাকমে, টেকনিক, হুদা বিউটি, নারস, নেক্স, কালারপপ, ম্যাক, মিলানি, মেকআপ রেভল্যুশন, ওয়েস্ট এন ওয়াইল্ড, টপফেস, ফার্মাসি, অ্যালিক্স এভিয়েন, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ব্র্যান্ডের চাহিদা অনেক। ক্রেতাদের কাছে এসব ব্র্যান্ডের নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের জনপ্রিয়তা বেশি। যেমন ফ্লোরমার, গোল্ডেন রোজ, ল্যাকমের ফেইস পাউডার, ফ্লোরমারের বিবি ক্রিম, টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার, ল্যাকমের সিসি ক্রিম, মেবেলিন ও লরিয়েল প্যারিসের অটো কাজল, মেবেলিনের স্কাই হাই ওয়াটারপ্রুফ মাসকারা, মিলানি, নেক্স, এলএ গার্ল, ওয়েস্ট অ্যান্ড ওয়াইল্ডের ফাউন্ডেশন, এলএ গার্লের কনসিলার, ম্যাক, হুদা বিউটি, পিয়েরে কার্দার লিপস্টিক, টেকনিক, কালার রেভল্যুশনের আইশ্যাডো প্যালেট, ইংক ভেলভেটের লিপ টিন্ট ইত্যাদি।

প্রাইমার ৪৫০ থেকে ২ হাজার টাকা, ফাউন্ডেশন ৫৫০ থেকে ৩ হাজার, কনসিলার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০, বিবি ক্রিম ২৫০ থেকে ১ হাজার ৭০০, সিসি ক্রিম ৫৫০ থেকে ২ হাজার, টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ১ হাজার থেকে ২ হাজার, প্রেসড পাউডার ৫০০ থেকে ২ হাজার, লুজ পাউডার ৩০০ থেকে ১ হাজার, ব্লাশ ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০, লিপস্টিক ৩০০ থেকে ৩ হাজার, লিপ স্টেইন বা টিন্ট ৫০০ থেকে ৩ হাজার, কাজল ৩৫০ থেকে ১ হাজার, মাসকারা ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ ও আইশ্যাডো ২৫০ থেকে ২ হাজার টাকা।