শীতে শিশুর কেমন লোশন, তেল, শ্যাম্পু বা ক্রিম
শীত আসে, মিষ্টি রোদ আসে, শীতের রঙিন সুস্বাদু আর পুষ্টিতে ভরপুর সবজি আসে, সঙ্গে নিয়ে আসে ত্বক নিয়ে খানিক দুশ্চিন্তা। আর আপনার বাড়িতে যদি একটিও শিশু থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। শিশুর ত্বকের যত্ন নিয়ে আপনাকে আলাদা করে ভাবতেই হবে। কেননা শিশুর ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল, শুষ্ক হয়ে দেখা দিতে পারে নানান জটিলতা। শীতে শিশুর ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত এই ৭ উপাদানের বিষয়ে জেনে নিন।
এই ঋতুতে শিশুর ত্বকের যত্ন নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. তাসনুভা খান বলেন, বিভিন্ন পণ্য ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। বিদেশি পণ্য নকল হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের দেশি পণ্য ব্যবহার করাই ভালো। শিশুদের ঠোঁট ফাটে। ঠোঁটে ভ্যাসলিন বা লিপবাম–জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে হবে। হাত–পা ফাটে। হাত ও পায়ে লোশন বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে হবে। মাথায় তেল দেওয়া যাবে না। এতে মাথার ত্বক ভেজা থাকে। ফলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। ঠান্ডা লেগে থাকা অবস্থায় মাথায় তেল দিলে ঠান্ডা সারতেও দেরি হয়। এ সময় শুষ্ক ত্বকে র্যাশ, চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে, পরিবারের যেকোনো একজনের ত্বকের সংক্রামক সমস্যা থাকলে তাতে শিশুও আক্রান্ত হতে পারে। তখন দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
১. বেবি লোশন
দিনের যেকোনো সময়েই ব্যবহার করতে পারেন। তবে গোসলের পর লাগালে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। আপনার শিশুর লোশনের উপাদানগুলো প্রাকৃতিক হলে খুব ভালো হয়, নিশ্চিত করবেন সেখানে যেন ময়েশ্চারাইজার থাকে।
২. বেবি ওয়াইপস
এমনিতেই শিশুর জন্য ডায়াপার আর বেবি ওয়াইপস কমবেশি সবাই ব্যবহার করেন। তবে সেটা যেন হয় নরম আর হাইড্রেটিং। থাকে অ্যালকোহল আর প্যারাবেনমুক্ত।
৩. তেল
শিশুদের জন্য বিশেষ তেল দিয়ে তাদের শরীর মালিশ করে দেবেন। এটা খুবই জরুরি। অলিভ অয়েল বা গ্লিসারিনের সঙ্গে পানি মিশিয়েও ম্যাসাজ করতে পারেন। তাহলে আপনার বাবুর শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে। তাপ উৎপন্ন করবে ও বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে। গোসলের আগে বেবি অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করা ভালো। তেল ব্যবহার করলে তা গোসলের আগেই করা উচিত।
৪. শ্যাম্পু
হালকা, নন-গ্রেসি শ্যাম্পু দিয়ে মাথার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। শ্যাম্পুতে নো-টিয়ার্স সাইন দেখে নিন। দিনে একবার অথবা দুই দিনে একবার শিশুকে গোসল করাবেন। ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে গোসল করাবেন। যেদিন গোসল করাবেন না, সেদিন হালকা গরম পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে সারা শরীর মুছে দেবেন।
৫. বডি ওয়াশ
শিশুর গোসলের সময় যে বডি ওয়াশ ব্যবহার করবেন, সেটা যেন সোপ-ফ্রি আর ময়েশ্চারাইজিং হয়, এটা নিশ্চিত করবেন।
৬. বেবি ফেসিয়াল ক্রিম
ত্বকে ক্রিম লাগাতে পারেন। সেটা দীর্ঘক্ষণ শিশুর ত্বককে নরম রাখবে আর ধরে রাখবে আর্দ্রতা।
৭. লিপবাম
শিশুর ঠোঁট শুকিয়ে গেলেই এক পরত লিপবাম লাগিয়ে দিন। তবে শিশুর ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত এসব উপাদান বুঝেশুনে ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে শিশুবিশেষজ্ঞ ও ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। এ সাত উপাদানের বাইরে ঘরে একটা হিউমিডিফায়ার রাখতে পারেন। এটা বাতাসে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
আরও যা করবেন, করবেন না
শীতকালে শিশুর তেল ব্যবহারে সতর্ক হোন। কেননা তেলে ময়লা জমে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর মাথায় তেল ব্যবহার করার ফলে মাথার ত্বক ভেজা থাকায় ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
শিশুকে নরম কাপড় পরিয়ে রাখুন। পায়ে কাপড়ের জুতা, মাথায় টুপি পরাবেন।
উলের জামাকাপড়ে ধুলাময়লা লেগে কোল্ড অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে। তাই তা ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে পরান। ফ্লোর কার্পেটের রোঁয়া থেকেও কোল্ড অ্যালার্জি হতে পারে। মাদুর, পাটি বা ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
সেন্টেড বা সুগন্ধযুক্ত পণ্য ব্যবহার করবেন না। সুগন্ধি পণ্যগুলোয় সাধারণত অ্যালকোহল থাকে, বাবুর ত্বকের জন্য যা ক্ষতিকর।
ঘরে অনেকে কয়লা বা ভুসি জ্বালিয়ে তাপমাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। এটা শিশুর ত্বক আর স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র: ডা. তাসনুভা খান, কনসালট্যান্ট, শিশু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ। ফার্স্টক্রাই প্যারেন্টিং ইউটিউব চ্যানেল