প্রসাধনসামগ্রী কত দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে
কিছু জিনিস আছে, নির্দিষ্ট মেয়াদের পর ব্যবহার করা হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। প্রসাধনসামগ্রী তেমনই একটি জিনিস। খুব শখের হলেও অধিকাংশ প্রসাধনীই বহুদিন পর্যন্ত রেখে ব্যবহার করা যায় না। প্রসাধনসামগ্রীতে উল্লিখিত মেয়াদ যেমন খেয়াল রাখতে হয়, তেমনই ব্যবহারের আগেই দেখে নিতে হয় প্রসাধনীর বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না। নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী রাখতেও যত্ন প্রয়োজন। মেয়াদোত্তীর্ণ বা নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রসাধনী ব্যবহারে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। ত্বকে জ্বালাপোড়া করা, ত্বক সংবেদনশীল হয়ে পড়তে পারে, হতে পারে ব্রণ। চোখের প্রসাধনী ভালো না থাকলে চোখের নানা অংশে প্রদাহের ঝুঁকি থাকে। কত দিন পর্যন্ত প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহার করা নিরাপদ, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন সৌন্দর্যচর্চাকেন্দ্র পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান।
কীভাবে বুঝবেন প্রসাধনীটি আর নিরাপদ নয়
প্রসাধনের রং বা ঘ্রাণ বদলে গেলে আর ব্যবহার করবেন না। প্রসাধনে সবুজ, সাদা, ধূসর বা কালচে ছোপ পড়লে ধরে নিতে পারেন, তাতে ছত্রাক জন্মেছে। কিছু প্রসাধনী নষ্ট হয়ে গেলে তৈলাক্ত অংশটা আলাদা হয়ে ওপরের দিকে ভেসে উঠতে দেখা যায়। প্রসাধনীর ভেতরটায় অস্বাভাবিকভাবে কোনো স্তর সৃষ্টি হতে পারে। মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও এ রকম কোনো পরিবর্তন দেখলে তা আর ব্যবহার করা উচিত নয়।
মেয়াদটাও বুঝে নিন
প্রসাধনসামগ্রীতে নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করা থাকলে সেই তারিখ পেরোনোর পর তা আর ব্যবহার না করাই ভালো। তবে অনেক প্রসাধনীতেই তারিখের বদলে একটি সময়কাল নির্দেশ করা থাকে। ধরা যাক, একটি প্রসাধনীতে লেখা আছে ১২এম। তাহলে বুঝতে হবে, প্রসাধনটির মুখ খোলার দিন থেকে পরবর্তী ১২ মাস তা ব্যবহারযোগ্য থাকবে বলে আশা করা যায়। মেয়াদ বা নির্দিষ্ট সময়কাল পেরোনোর পরেও অবশ্য অল্প কিছু প্রসাধনী নিরাপদে ব্যবহার করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে নেইলপলিশ। ফাউন্ডেশন আর ব্লাশঅনের মতো সৌন্দর্যসামগ্রীর উপাদানের তালিকা পড়ে দেখুন। তালিকায় যদি পানি না থাকে, তাহলে এগুলোও মেয়াদ পেরোনোর পর ব্যবহার করা সম্ভব।
সংরক্ষণের জন্য খেয়াল রাখুন
প্রসাধনসামগ্রী শুষ্ক, শীতল স্থানে রাখুন। স্নানঘরে রাখবেন না। গাড়ির ভেতরকার গরমেও রেখে দেবেন না। সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে, এমন জায়গাতেও এগুলো রাখতে নেই। হাত দিয়ে যেসব প্রসাধন তোলা হয়, সেগুলো ব্যবহারের আগে হাতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখাও জরুরি।
কোনটা কত দিন ভালো থাকে
জেনে নেওয়া যাক, প্রথমবার খোলার পর থেকে সাধারণত কোন প্রসাধনী কত দিন অবধি নিরাপদে ব্যবহার করা যায়। তবে খেয়াল রাখবেন, সরাসরি স্পর্শ না করে ব্রাশ বা অ্যাপ্লিকেটর ব্যবহার করলেই কেবল এতটা লম্বা সময় এগুলো ভালো থাকে। খেয়াল রাখবেন, ব্রাশ বা অ্যাপ্লিকেটরটি যেন পরিষ্কার থাকে।
লিপস্টিকের উপাদান তালিকায় পানি থাকলে বছরখানেক পর্যন্ত ভালো থাকে। উপাদানে পানি না থাকলে অবশ্য তিন বছর অবধি ব্যবহার করতে পারবেন।
লিপগ্লস বছরখানেক ভালো থাকে, কিন্তু উপাদানে পানি থাকলে আরও আগেই নষ্ট হয়ে যায়।
ব্লাশঅন তরল, পাউডার বা ক্রিমজাতীয় যেমনই হোক না কেন, তিন বছর অবধি ব্যবহার করা সম্ভব। কনট্যুর বা ব্রোনজারে পানি না থাকলে এগুলোও তিন বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
তরল, পাউডার বা ক্রিমজাতীয় ফাউন্ডেশন দুই বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। তবে তরল ফাউন্ডেশন ঝাঁকিয়ে ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে বুঝতে হবে, তা ঠিক নেই।
আইশ্যাডোতে উপাদান হিসেবে পানি থাকলে এক বছরের মধ্যে ব্যবহার করে ফেলতে হবে। পানিবিহীন আইশ্যাডো অবশ্য দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত নিরাপদ থাকে।
আইলাইনার ও মাসকারা ভালো থাকে তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত, তরল প্রসাধনী অবশ্য এর আগেও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পেনসিলের মতো প্রসাধনীর সামনের অংশ চোখা করে নিতে ভুলবেন না যেন।
কনসিলার তরল হলে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে; ক্রিমজাতীয় হলে এক থেকে দেড় বছর। পাউডারজাতীয় হলে দুই বছর অবধি ঠিক থাকে। হাইলাইটারও কনসিলারের মতোই ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত নিরাপদ থাকে।
নেইলপলিশ ভালো থাকে তিন বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত।
সুগন্ধি ব্যবহার করা যায় তিন থেকে পাঁচ বছর।
মুখের ক্রিম তিন মাসের মধ্যে ব্যবহার করে ফেলুন।