সিরাম ব্যবহারের আগে যা জানা জরুরি

উজ্জ্বল ও সুন্দর ত্বকের জন্য সিরাম দারুণ কার্যকর এক উপকরণ। কিন্তু সিরাম ব্যবহারের আগে অবশ্যই জেনে নিতে হবে, কোন সিরাম কোন ধরনের ত্বকের উপযোগী এবং কোন সিরামের কী কাজ। আপনি যদি এমন সিরাম বেছে নেন, যার অনেক গুণ, কিন্তু আদতে সেটি আপনার ত্বকের উপযোগীই নয়, তাতে হিতে বিপরীত হবে। আবার সঠিক সিরামও ভুল প্রয়োগবিধির কারণে ত্বকের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ত্বক পরিষ্কার করার পর সিরাম ব্যবহার করুন
ছবি: কবির হোসেন

ধরা যাক, আপনি এমন একটি সিরাম বেছে নিলেন, যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে (এক্সফোলিয়েটিং সিরাম)। কিন্তু এদিকে আবার প্রতি সপ্তাহে ব্যবহার করছেন স্ক্রাব, রোজ মুখ ধোয়ার জন্য এক্সফোলিয়েটিং ক্লিনজার। এক্সফোলিয়েটিং টোনারও প্রয়োগ করছেন। তাহলে কিন্তু আপনার ত্বকের বারোটা বেজে যাবে! তাই কোন সিরাম বেছে নেবেন, কীভাবে প্রয়োগ করবেন, সঙ্গে অন্য কোন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করবেন, আগেই সবটা ভেবে নিতে হবে। সিরাম ব্যবহার প্রসঙ্গে এমন নানান পরামর্শ দিলেন সৌন্দর্যচর্চাকেন্দ্র পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য

যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত ধরনের কিংবা যাঁদের ত্বকে অতিরিক্ত ব্রণ বা পিম্পল হয়, তাঁরা এমন সিরাম বেছে নিতে পারেন, যা সিবাম নিঃসরণের হার কমায়। সিবাম হলো ত্বকের স্বাভাবিক নিঃসরণ, তৈলাক্ত ত্বকে যে নিঃসরণের হার বেশি থাকে। সিবাম নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করে এক্সফোলিয়েটিং সিরাম। এই সিরাম ত্বকের ছিদ্রে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে। এই সিরাম ব্যবহারের ফলে বয়সজনিত পরিবর্তনগুলোও কম দৃশ্যমান হয়। তা ছাড়া এই সিরাম ব্যবহারের পর ত্বকে রূপচর্চার অন্যান্য উপকরণ ভালোভাবে কাজ করতে পারে। এই সিরামের উপাদান হতে পারে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, স্যালিসিলিক অ্যাসিড প্রভৃতি।

শুষ্ক ত্বকের জন্য হাইড্রেটিং সিরাম বেছে নেওয়া ভালো
ছবি: কবির হোসেন

শুষ্ক ত্বকের জন্য

শুষ্ক ত্বকের জন্য হাইড্রেটিং সিরাম বেছে নেওয়া ভালো। এগুলো ত্বককে যেমন আর্দ্রতা দেয়, তেমনি আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। হাইড্রেটিং সিরামের উপাদান হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বা সোডিয়াম হায়ালুরোনেট। গ্লিসারিন কিংবা অ্যালোভেরা–সমৃদ্ধ সিরামও একই ধরনের কাজ করে।

দাগছোপ, মলিন ভাব এবং ত্বকে প্রকট ছিদ্র দৃশ্যমান থাকলে

ত্বকে দাগছোপ বা কালচে ভাব দেখা দিলে কিংবা ত্বক মলিন হয়ে পড়লে ভিটামিন সি কিংবা নায়াসিনামাইড (ভিটামিন বি৩)–সমৃদ্ধ সিরাম ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো হলো ‘ব্রাইটেনিং’ সিরাম। ভিটামিন সি সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবকে সামলে নিতে সাহায্য করে; ত্বকের লালচে ভাব ও বিবর্ণতা দূর করতেও কাজে দেয়। তবে এই সিরাম ব্যবহারে কারও কারও ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এমন হলে কিন্তু এই সিরাম প্রয়োগ করা যাবে না। ত্বকের বিভিন্ন অংশের রঙের অসামঞ্জস্য দেখা দিলে বেছে নিতে পারেন নায়াসিনামাইড–সমৃদ্ধ সিরাম। এটিও ত্বকের বিবর্ণ ভাব দূর করতে সাহায্য করে। তা ছাড়া যাঁদের ত্বকের ছিদ্রগুলো বেশ বড় দেখায়, তারাও উপকার পাবেন নায়াসিনামাইড–সমৃদ্ধ সিরাম থেকে।

বয়সের ছাপ কমাতে

বয়সের ছাপ কমানোর সিরাম (অ্যান্টি–এজিং) যে কেবল বয়সজনিত দাগছোপই কমায়, তা নয়; বরং ত্বকের কোষের বিন্যাস, ঘনত্ব ও রং স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। রেটিনল–সমৃদ্ধ সিরাম ত্বকের নতুন কোষের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে, বলিরেখা কমায়, ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। তা ছাড়া ত্বকের স্থিতিস্থাপকতাও বাড়ায়। তবে অপরিণত ত্বকে এ ধরনের সিরাম ব্যবহার করা অনুচিত। এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এটি ব্যবহারের ফলে কারও কারও ত্বকে শুষ্কতা, লালচে ভাব বা অতিরিক্ত আঁটসাঁট ভাব দেখা দিতে পারে, কিংবা ত্বক সূর্যরশ্মির প্রতি অতি সংবেদনশীল হয়ে পড়তে পারে।

ত্বকের প্রায় প্রতিটি সমস্যার সমাধান পাওযা যায় সিরাম থেকে
ছবি: কবির হোসেন

আরও যা জানতে হবে

l যেকোনো সিরাম ব্যবহারের আগে এর ব্যবহারবিধি পড়ে দেখুন। তা ছাড়া উপাদানগুলো সম্পর্কেও জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

l নতুন যেকোনো সিরাম ত্বকে ব্যবহার শুরুর আগে প্রথম কয়েক দিন অল্প পরিমাণে প্রয়োগ করুন। দেখুন, তা আপনার ত্বকে কেমন প্রভাব ফেলছে। ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে না, এটা নিশ্চিত হওয়ার পর পুরোপুরি প্রয়োগ করতে পারেন।

l ত্বক পরিষ্কার করার পর সিরাম ব্যবহার করুন। সিরাম ত্বকে মিশে যাওয়ার পর লাগিয়ে নিন ময়েশ্চারাইজার।

l অনেক বেশি পরিমাণ সিরাম ব্যবহার করলেই যে ভালো ফল পাবেন, তা কিন্তু নয়। বরং সিরাম ব্যবহার করতে হবে পরিমাণমতো।

l রেটিনল–সমৃদ্ধ সিরাম দিনের বেলায় ব্যবহার করতে নেই। তাতে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রতি ত্বকের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়।

l ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ সিরাম দিনের বেলায় ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।