ডিওডোরেন্ট ব্যবহারে এসব ভুল করছেন না তো?
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে ডিওডোরেন্ট ব্যবহারে কিছু ভুল আমরা প্রায়ই করি। এমন কিছু ভুল এবং সে সম্পর্কে ত্বকবিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরা হলো এখানে—
ডিওডোরেন্ট ও অ্যান্টিপার্সপিরেন্টের (ঘাম নিরোধক) পার্থক্য না জানা
অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ঘাম কমায়। আর ডিওডোরেন্ট শুধু দুর্গন্ধ কমায়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একজন অভিজ্ঞ চর্মরোগবিশেষজ্ঞ ফেন ফ্রের মতে, বেশির ভাগ অ্যান্টিপার্সপিরেন্টে অ্যালুমিনিয়াম লবণ থাকে। কখনো কখনো এতে মেশানো হয় জিরকোনিয়াম লবণ। এ লবণ ঘর্মগ্রন্থির নালির প্রোটিনের সঙ্গে রাসায়নিক বন্ধন সৃষ্টি করে। যা ঘর্মগ্রন্থির নালিগুলোয় একধরনের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে অস্থায়ীভাবে ঘাম উৎপাদন কমে যায়। অন্যদিকে ডিওডোরেন্ট দুর্গন্ধ দূর করে। এটি দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী কিছু ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে কিংবা নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ক্যালিফোর্নিয়ার আরেক অভিজ্ঞ চর্মরোগবিশেষজ্ঞ ট্রিপরা শেইনহাউজ বলেছেন, ‘ডিওডোরেন্ট ঘাম নির্গমনের পরিমাণ কমায় না, আপনার বগলকে শুষ্কও রাখে না।’
শেভ করার পরপরই ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা
শেভিংয়ের পরপরই ডিওডোরেন্ট বা অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে যদি সেটিতে অতিমাত্রায় অ্যালকোহল থাকে। চর্মরোগবিশেষজ্ঞদের মতে, এতে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হতে পারে।
শরীরের ময়লা পরিষ্কার না করেই তার ওপর ডিওডোরেন্ট প্রয়োগ করা
আপনি যদি গতকালের ঘামের দুর্গন্ধের ওপর ফ্রেশ এক লেয়ার ডিওডোরেন্ট লাগান, তাহলে সেটা আপনাকে মোটেও সারা দিন ফ্রেশ রাখবে না। ডিওডোরেন্ট লাগাতে হবে পরিষ্কার ও শুষ্ক ত্বকে। যদি শরীরে আগে থেকেই লেগে থাকা অন্য কোনো ঘন ক্রিম বা কঠিন পদার্থের ওপর লাগানো হয়, ওই ডিওডোরেন্ট কাজ না করার সম্ভাবনাই বেশি।
সকালে ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা
একটি বহুল প্রচলিত ধারণা হলো, ডিওডোরেন্ট সকালে ব্যবহার করা উচিত। আদতে ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা উচিত সন্ধ্যায়। যখন ঘর্মগ্রন্থি কম সক্রিয় থাকে এবং আর্দ্রতা কম থাকে, তখনই ডিওডোরেন্ট ও অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট সবচেয়ে বেশি কার্যকর। যেমন ধরুন, ঘুমের আগে। যেহেতু ডিওডোরেন্ট শুষ্ক ও পরিষ্কার ত্বকেই সব সময় লাগাতে হয়, সেহেতু সন্ধ্যায় গোসল করে প্রয়োগ করাই ভালো। গোসলের পর তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে শরীর মুছে ডিওডোরেন্ট প্রয়োগ করুন। ডিওডোরেন্টের মিষ্টি ঘ্রাণ মিস করলে সকালে আরেকটু মেখে নিন।
প্রতিদিন ডিওডোরেন্ট ব্যবহার না করা
এটা নির্ভর করে আপনার শরীর এবং আপনি কোন ধরনের ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করছেন তার ওপর। প্রতিদিন আপনার ডিওডোরেন্ট ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে, না-ও হতে পারে। কিছু অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে। ওসব প্রতিদিন ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। অবশ্যই লেবেল বা পণ্যের মোড়কের লেখা পড়ে দেখে নেবেন, আপনার ডিওডোরেন্টটি কত ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করা
সকালে ডিমেথিকনযুক্ত ময়েশ্চারাইজার বগলে ব্যবহারের পরামর্শ দেন ফেন ফ্রে। এতে জ্বালাপোড়ার ভাবটা কমবে। নিউ অরলিন্সের স্পা ডিরেক্টর শার্লা মার্লিন পরামর্শ দেন, ময়েশ্চারাইজার হিসেবে নারকেল তেল ব্যবহার করার জন্য। নারকেল তেল শুষ্ক ত্বক সারিয়ে তোলে। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে পানির ঘাটতি দূর করে। নারকেল তেল প্রাকৃতিকভাবেই ব্যাকটেরিয়াবিনাশী।
ভুল ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা
ডিওডোরেন্ট বেছে নেওয়ার সময় আপনার ত্বকের ধরন, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। স্প্রে কিংবা জেলের মতো উচ্চমাত্রার অ্যালকোহলযুক্ত ডিওডোরেন্ট নাজুক ত্বকের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। খুব বেশি সুগন্ধিযুক্ত ডিওডোরেন্টের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। চর্মরোগবিশেষজ্ঞদের মতে, আপনার মুখের ত্বকের যত্ন যেভাবে আপনি নেন, ঠিক সেভাবেই যত্ন নেওয়া উচিত বগলের ত্বকের ক্ষেত্রেও।
ক্লিনিক্যাল ও রেগুলার ডিওডোরেন্টের মধ্যে পার্থক্য না বোঝা
রেগুলার অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ঘর্মগ্রন্থির সক্রিয়তা ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমায়। ক্লিনিক্যাল শক্তিসম্পন্ন অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট এ ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর। ক্লিনিক্যাল অ্যান্টিপার্সপিরেন্টে অ্যালুমিনিয়াম জিরকোনিয়াম লবণের ঘনত্ব বেশি। এ কারণে এসব অ্যান্টিপার্সপিরেন্টের কার্যকারিতা বেশি হলেও তা ব্যবহারের ফলে ত্বকে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এ কারণেই ফেন ফ্রে তাঁর রোগীদের মধ্যে যাদের ত্বক নাজুক, তাদের সুগন্ধিযুক্ত এবং বেশি শক্তিশালী ফর্মুলার অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করতে বারণ করেন। বরং ডিমেথিকনযুক্ত পণ্য বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন। ডিমেথিকন জ্বালাপোড়া প্রতিরোধ করে।
প্রাকৃতিক ফর্মুলা ব্যবহারে উদাসীনতা
কখনো প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করার কথা ভেবেছেন? এসবও মাঝেমধ্যে বিকল্প হিসেবে ভালো কাজ করে। যাঁরা কম ঘামেন, তাঁদের জন্য প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্ট উপকারী। মৃদু দুর্গন্ধ দূর করতেও এসব বেশ কার্যকর। আপনার ত্বকের ধরন ও চাহিদা বুঝে বেছে নিন আপনার জন্য সেরা ডিওডোরেন্ট। সারা দিন থাকুন ফ্রেশ ও সুরভিত।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট