আয়ুর্বেদ সেবায় শীতে থাকবেন সতেজ
শীতে নিষ্প্রাণ ত্বক, খুশকি কিংবা চুল পড়ার সমস্যায় আয়ুর্বেদ দারুণ কার্যকর। এ আবহাওয়ায় শরীরের নানা ব্যথাবেদনাও বাড়ে। এমন দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা উপশমেও কাজে আসতে পারে আয়ুর্বেদ। আয়ুর্বেদের সব পদ্ধতি অবশ্য বাড়িতে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। কিছু পদ্ধতির জন্য আপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক সেবা নিতে হবে। চাইলে কিছু পদ্ধতি শিখেও নেওয়া যায়, পরে বাড়িতে প্রয়োগ করতে পারবেন। আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে ব্যবহৃত উপাদান দিয়ে বাড়িতেই কিছু বিশেষ উপকরণও তৈরি করা সম্ভব। আয়ুর্বেদের এমন নানা প্রয়োগবিধি সম্পর্কে বলছিলেন ‘হারমনি স্পা’র আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা।
সারা দিনের আর্দ্রতায় আয়ুর্বেদিক স্প্রে
গোলাপজল, গ্লিসারিন আর ভার্জিন নারকেল তেল নিন সমপরিমাণ। এগুলোর মিশ্রণ একটা স্প্রে বোতলে রেখে দিন। যেখানেই যান, বোতলটি সঙ্গে রাখুন। ত্বক শুষ্ক অনুভব করলেই স্প্রে করে নিন খানিকটা। মুখ ধোয়ার পরও প্রয়োগ করতে পারেন এই স্প্রে।
ত্বকের যত্নে ক্রিম ও প্যাক
কাঠবাদাম বেটে নিন। আরও নিন দুধের সর। এই দুটি উপকরণ সমপরিমাণে নিয়ে প্যাক তৈরি করুন। রোজই ব্যবহার করতে পারেন। তবে ভালো ফলাফল পেতে হলে ত্বকে অন্তত এক ঘণ্টা রাখতে হবে। সারা রাত রাখলেও ক্ষতি নেই। এই প্যাক ব্যবহারে ত্বক সতেজ ও আর্দ্র থাকবে, কুঁচকে যাওয়া থেকেও রক্ষা পাবেন। ত্বকে কালচে দাগছোপ থাকলে অ্যালোভেরার মণ্ড যোগ করুন। এ ক্ষেত্রে তিনটি উপকরণই সমান অনুপাতে দেবেন। বেশ খানিকটা প্যাক একবারে বানিয়ে কাচের বয়ামে করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন।
অ্যালোভেরা জেল, গ্লিসারিন আর ভার্জিন নারকেল তেল নিন সমপরিমাণ। ভালোভাবে বিট করে নিলেই তৈরি হবে ক্রিম। কাচের বয়ামে রেখে দিন। প্রয়োজনমাফিক ব্যবহার করুন।
চালের গুঁড়া নিন ২ টেবিল চামচ, সঙ্গে আধা কাপ দুধ আর ১ চা-চামচ মধু। চাইলে সিকি চা-চামচ কাঁচা হলুদের বাটাও যোগ করতে পারেন। মিশ্রণটি নেড়েচেড়ে জ্বাল দিতে হবে। ক্রিমের মতো হয়ে এলে নামিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে ১ চা-চামচ গ্লিসারিন যোগ করুন। কাচের বয়ামে সংরক্ষণ করতে পারবেন এ মিশ্রণ। রোজ রাতে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ত্বক কোমল হবে। সারা রাত রেখে দিলেও ক্ষতি নেই। আবহাওয়া একটু উষ্ণ মনে হলে বয়ামটি ফ্রিজে রেখে দিন।
চুলের যত্নে আয়ুর্বেদ
২ টেবিল চামচ তিসি, ১ টেবিল চামচ মেথি আর ১ চা-চামচ কালিজিরা নিন। আরও প্রয়োজন হবে আমলকী। আমলকীর গুঁড়া থাকলে নিন ১ টেবিল চামচ। না থাকলে চারটি গোটা আমলকী থেঁতো করে নিন। এই চারটি উপকরণের সঙ্গে পানি যোগ করুন চার কাপ। এবার মিশ্রণটি জ্বাল দিতে হবে। মিশ্রণ শুকিয়ে দুই কাপমতো হয়ে গেলে নামিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে ছেঁকে কাচের বয়ামে রেখে দিন। আবহাওয়া একটু উষ্ণ হলে বয়ামটি ফ্রিজে রেখে দিন। মিশ্রণটি মাথার ত্বক ও চুলে লাগিয়ে নিতে হয় গোসলের ২০ মিনিট আগে। আবার গোসলের সময়ও ব্যবহার করতে পারেন। ২ টেবিল চামচ মিশ্রণে প্রয়োজনমতো শ্যাম্পু যোগ করে সেটা দিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। চুল হয়ে উঠবে রেশমি, উজ্জ্বল আর ঝলমলে। চুলের বৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হবে। এটাকে রিবন্ডিংয়ের প্রাকৃতিক বিকল্পও বলা যেতে পারে। কারণ, নিয়মমাফিক ব্যবহারে চুল সোজাও হয়ে যায়।
সুস্থতায় আয়ুর্বেদ
রোজ সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস আর ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে খাবার অভ্যাস করুন। এতে পাবেন ভিটামিন সি। বাড়বে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। পূরণ হবে পানির চাহিদা। কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হবে। ওজন কমাতেও সহায়ক এ অভ্যাস।
আয়ুর্বেদে তেল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। নানাভাবে ব্যবহৃত হয় এই তেল। এই যেমন, নাসিয়ামে কালিজিরার তেল কাজে লাগানো হয়। এ পদ্ধতিতে কীভাবে তেল প্রয়োগ করা হয়, কীভাবে নাকের পাশে আঙুল দিয়ে মালিশ করা হয়, তা শিখে নিয়ে বাড়িতেও কাজে লাগানো যায়। সাইনোসাইটিসের ব্যথা উপশমে উপকারী এই নাসিয়াম। আবার মুখের মালিশপদ্ধতি শিখে নিয়ে মাথা ধরার সমস্যায় তা কাজে লাগাতে পারেন।
মাথায় উষ্ণ তেল মালিশের পদ্ধতিও শিখে নিতে পারেন। বাস্তির মাধ্যমে হাঁটু ও কোমরব্যথার রোগীরা উপকার পেতে পারেন। কেউ কেউ সারা শরীরেই ব্যথা অনুভব করেন, তাঁরাও বাস্তি করতে পারেন। ব্যথা-বেদনার জন্য নিতে পারেন হট স্টোন। দেহের অভ্যন্তরের প্রদাহ কমাতে এ পরিষেবা কাজে আসে।