ঘুমানোর আগে রূপচর্চার জন্য যা করতে পারেন
রাতে ঘুমানোর সময় ত্বক নিজেকে মেরামত করে নেয় নিজ দায়িত্বেই। রাতের আট ঘণ্টায় পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় ত্বক। তবে শুধু ঘুমালেই হবে না। ত্বককে কীভাবে আপনার ঘুমের জগতে নিয়ে যাচ্ছেন, সেটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যত ক্লান্তই থাকুন না কেন, রাতে ত্বক পরিষ্কার করে ঘুমানোর ওপর জোর দেওয়া হয় সংগত কারণেই। প্রতিদিনের মানসিক ও পারিপার্শ্বিক চাপ সামলানো, ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখা, বলিরেখা পড়া রোধ করা ইত্যাদি বিষয় ত্বক মোকাবিলা করে রাতের এই ঘুমের সময়ই। পুরো প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করে যখন রাতের রূপচর্চাটাও হয় ঠিকভাবে।
রাতের রূপচর্চার ধাপগুলোতে যেসব পণ্য ব্যবহার করবেন, সেটা বাছাই করতে হবে ত্বকের ধরন ও সমস্যা অনুযায়ী। সব ধরনের ত্বককেই পরিষ্কার করে নিতে হবে প্রথমে। সম্ভব হলে প্রথমে ফেস অয়েল দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। এরপর ত্বক অনুযায়ী ফেসওয়াশ বেছে নিন। ত্বক তৈলাক্ত হলে তেল নিয়ন্ত্রণ করবে, এমন ফেসওয়াশ বেছে নিন। তেমনি ত্বক শুষ্ক হলে মিল্ক ক্লিনজার আর সংবেদনশীল ত্বকের জন্য প্রয়োজন মেডিকেটেড ক্লিনজার। এরপর আসবে স্ক্রাব ব্যবহারের পালা। তবে প্রতিদিন নয়। সপ্তাহে দু-তিন দিন স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। বাড়িতেও বানিয়ে নিতে পারেন।
টক দই আর ওটস মিশিয়ে বানানো স্ক্রাব সব ধরনের ত্বকের জন্যই মানানসই।
পরের ধাপে ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক করার জন্য টোনার লাগাতে হবে। বাড়িতে টোনার তৈরি করে নিতে পারেন শসার রস আর গোলাপজল মিশিয়ে। তুলার সহায়তায় লাগালে ত্বকের ওপর বাড়তি কোনো ময়লা থাকলে চলে যাবে। তবে টোনার কিন্তু ত্বক পরিষ্কারের জন্য নয়। ত্বকের সমস্যা অনুযায়ী টোনার বেছে নিতে পারেন। পিগমেন্টেশনের জন্য নির্দিষ্ট টোনার, ব্রণ থাকলে সেটার জন্য মানানসই টোনার ব্যবহার করতে হবে। টোনারকে ত্বকের ভেতরে যাওয়ার জন্য অন্তত ৬০ সেকেন্ড সময় দিন।
বলিরেখা রোধ করা, উজ্জ্বলতা বাড়ানো, ব্রণ কমানো বা ডার্ক স্পট কমানো—লক্ষ্য যেটাই থাকুক না কেন, সিরামটাও বেছে নিন সে অনুযায়ী। ত্বকের শুষ্কতা থেকে শুরু করে বলিরেখা রোধ করা পর্যন্ত যত রকম সমস্যা আছে ত্বকের, সব সমস্যার সক্রিয় সমাধান পাওয়া যাবে সিরাম থেকে।
ত্বক শুষ্ক হলে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সিরাম, ত্বক উজ্জ্বল করার জন্য গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি বেছে নিতে পারেন, ত্বকে ব্রণের সমস্যা থাকলে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড আছে, এমন সিরাম দরকার ত্বকের জন্য। তবে এ ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া ভালো। এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী নাইট ক্রিম লাগাতে হবে।
সকালে উঠে ত্বক কিন্তু আবার পরিষ্কার করে নিতে হবে। অনেকে মনে করেন, রাতে এত যত্ন নিলাম, সকালে কিছু না করলেও হবে। বিষয়টি একেবারেই উল্টো। সকালে মুখে পানি দিয়ে, দাঁত ব্রাশ করে বের হয়ে গেলেই হবে না। রাতে ত্বক থেকে যেই সিবাম বের হয়, সেটা দীর্ঘক্ষণ অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে ত্বকের ওপর মিশে থাকলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা দেখা দেবে। এ কারণে সকালেও একই প্রক্রিয়ায় ত্বকের যত্ন নিতে হবে। বাড়তি যুক্ত হবে সানস্ক্রিন।
চেহারার পর আসবে চুলের বিষয়টি। আপনার আরামের ওপর নির্ভর করে বেঁধেও ঘুমাতে পারেন, আবার চুল খোলা রেখেও ঘুমাতে পারেন। চুল বাঁধতে চাইলে ঢিলেঢালাভাবে বাঁধুন। চুলের গোড়ায় চাপ না পড়লেই হলো।
তথ্য কৃতজ্ঞতা: শোভন সাহা, কসমোটোলজিস্ট, শোভন মেকওভার