মেহেদির নকশায় এ বছর যেসব ধারা চলছে
মেহেদির নকশায় প্রতি ঈদেই যোগ হয় নতুন নতুন ট্রেন্ড। কোনো ঈদে হয়তো দুই হাতজুড়ে মেহেদি পরার চল। আবার পরেরবারই হয়তো পছন্দের শীর্ষে থাকে মিনিমাল বা হালকা নকশা। এ বছর কোন ধারা চলছে, জানাচ্ছেন রিফাত পারভীন
টিউব আসার আগে মেহেদির একমাত্র উৎস ছিল মেহেদিগাছ। মেহেদিপাতা মিহি করে বেটে আঙুলজুড়ে মোটা করে লাগানো হতো। আর নখেও দিতে দেখা যেত সেই বাটা মেহেদি। হাতের তালুতে বড় গোল বৃত্ত আর চারপাশে ছোট ছোট বৃত্তের নকশার তখন খুব চল ছিল। ছেলেবেলাকে ফিরিয়ে আনতে এখনো অনেকে এই নকশা করেন।
ব্যস্ত সময়ে মেহেদিপাতা সংগ্রহ ও প্রস্তুত করার ঝক্কিতে অনেকেই যেতে চান না, তাই টিউব কোনই এখন ভরসা। যদিও গাছের পাতার টকটকে লাল ও টিউবের লালে হেরফের আছে। তবে বাজারে রাসায়নিক দেওয়া ইনস্ট্যান্ট মেহেদির পাশাপাশি ভালো মানের অর্গানিক মেহেদিও পাওয়া যায়, গাছের মেহেদিপাতার মতোই ত্বকের জন্য যা ক্ষতিকর নয়।
টকটকে লাল ছাড়াও এমন অনেক মেহেদি আছে, তোলার পর যা মেরুন রং ধারণ করে, আবার কিছু মেহেদিতে হবে কালো রং আর কিছু মেহেদি হাতজুড়ে আনবে ফেড বা ফ্যাকাশে লাল ভাব। তবে রঙের এই নানা ধরন কেন? কারণ, ট্রেন্ড নিয়ে নিরীক্ষা চলমান। একেক বছর পোশাক ও সাজের ট্রেন্ডের সঙ্গে মিলিয়ে মেহেদির নকশাতেও বদল ঘটে।
মেহেদি বাই আফসানার নকশাবিদ আফসানা আফরোজ বলেন, পুরোনো দিনের নকশার সঙ্গে এখনকার নকশায় অনেক পার্থক্য থাকলেও রং পাকা করার কৌশল কিন্তু অনেকটা একই আছে। আগেকার মতোই সুন্দর ও দীর্ঘস্থায়ী রঙের জন্য বাটা মেহেদির সঙ্গে চা–পাতা বা লিকার ব্যবহার করা হয়। নতুন কিছু কৌশলও কিন্তু অনুসরণ করা যায়। যেমন মেহেদি দেওয়ার পর তুলা দিয়ে হালকা করে লেবু আর চিনির সিরাপের মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। তাওয়ায় লবঙ্গ গরম করে মেহেদি পরা হাতে হালকা তাপ নেওয়াটাও এই সময়ের পরিচিত কৌশল।
পোশাক ও সাজে বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে নব্বইয়ের দশক ও মিনিমাল বা হালকা ধারার সুর। এ বছরে মেহেদির নকশাতেও মনে হয় এই দুই ধারার মিশেল দেখা যাবে। এ ছাড়া শাড়ির আঁচল, পাড় বা হেরিটেজ স্টাইলের নকশার জনপ্রিয়তাও আছে, বললেন মেহেদির নকশাকার শাহরিয়ার আলম।
গত বছরের নকশার কিছু ধরন এখনো চলছে। প্রিন্ট স্টাইলের নকশা, জলছাপ, ফ্লোরাল নকশা, অলংকারের নকশা (ঝুমকা, চেইন, নূপুর, আংটি), ইমারতের আদলে মেহেদির নকশা এবারের ঈদের অন্যতম ট্রেন্ড।
চলুন অল্প শব্দে নকশার কয়েকটি ধরন সম্বন্ধে জেনে নিই—
জলছাপ
জলছাপ নকশা হলো হাতে ছড়ানো–ছিটানো অল্প অল্প নকশা। এই নকশায় লতাপাতার কাজ থাকে বেশি।
ফ্লোরাল
ফুলের নকশা আগেও ছিল। তবে এখন প্রিন্ট স্টাইলে ফ্লোরাল নকশা করা হয়। আধুনিক পোশাকের সঙ্গে এ ধরনের নকশা মানাবে।
পানপাতা বা গম্বুজ
এই ধারায় হাতের তালুতে একটা পানপাতার নকশা করা হয়। দেখতে অনেকটা গম্বুজের মতো বলে পানপাতা নকশাকে কেউ কেউ গম্বুজও বলেন।
আঙুল নকশা
আধুনিক পোশাকের সঙ্গে আংটি স্টাইলের নকশা কম বয়সীদের মধ্যে বেশ ট্রেন্ডি। প্রতিটি আঙুলে দুটি বা তিনটি আংটির নকশা দেবে মিনিমাল লুক। এ ছাড়া আঙুলে জুয়েলারি কাট স্টাইলের নকশাও মানাবে।
গোল নকশা
এ বছরে গোল বা মান্ডালা নকশার চল সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে। তবে চিরাচরিত মান্ডালা নকশা নয়, কিছুটা ফিউশনধর্মী। মান্ডালার সঙ্গে ঝুমকা, চেইন বা অলংকার ডিজাইন মিলানো যায়।
ট্যাটু স্টাইল
অনেকে মেহেদি দিয়ে ট্যাটুর মতো নকশা করছেন আজকাল। ঈদে এবার এই ধারাও জনপ্রিয় থাকবে। সমসাময়িক বিভিন্ন নকশা এখানে দেখা যায়। আর চোখে পড়ে নানা হরফে লেখা শব্দযুগল।
বডি জুয়েলারি
অনেকে পোশাকের হাতা, গলার নেকলেস বা ব্লাউজের সঙ্গে মিনিমাল স্টাইলে ফিউশন করে মেহেদির নকশা করেন।