চুলের খুশকি দূর হবে যা করলে

পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা খুশকি রোধে কাজ করবে

শীতে খুশকি নিয়ন্ত্রণে থাকলে চুল থাকবে ভালোমডেল: আফরি, ছবি: কবির হোসেন

শীতের সময় মাথায় খুশকি হবেই। সেটা নিয়ে অত বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। তবে খুশকি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। না হলে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত মাথার ত্বকেই খুশকি বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া চোখের পাতা, ভ্রু ও নাকের দুই পাশেও খুশকি হতে পারে। তবে এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়।

খুশকি কেন হয়

খুশকি মূলত একধরনের মৃত কোষ অথবা মরা চামড়া, যার কারণে ত্বকে বিভিন্ন সংক্রমণ দেখা দেয়, যেমন ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ও ব্রণ। মাথার ত্বকে ম্যালাসেজিয়া নামক একধরনের ছত্রাক অথবা ইস্টের সংক্রমণ বেশি হলে অথবা অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হলে খুশকি বাড়ে। পাশাপাশি কারও যদি সেবোরিক ডার্মাটাইটিস রোগ থাকে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাথার ত্বক, দেখা দেয় খুশকি। চুল ঠিকমতো পরিষ্কার না করলেও হতে পারে খুশকি। চুল ঠিকমতো না আঁচড়ানোও আরেকটি কারণ। অতিরিক্ত উদ্বেগ, অপর্যাপ্ত পানি পানে ত্বকে অনেক রকম সমস্যা দেখা যায়, যার মধ্যে খুশকি অন্যতম। আমরা অনেকেই গোসলের পর ভেজা চুল বেঁধে ফেলি, এই ভেজা চুল বাঁধার কারণেও খুশকি হয়। আমরা অনেকেই চুলে হেয়ার ড্রায়ার অথবা আয়রন করি। এগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বককে শুষ্ক করে। শুষ্ক আবহাওয়া আর ধুলা বেশি থাকার কারণে শীতে খুশকি বেশি হয়। শীতকালে অতিরিক্ত খুশকির আরেকটা কারণ শুষ্ক ত্বক।

কিছু ঘরোয়া উপায়

ঘরে কিছু পন্থা অবলম্বন করেও খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রাতে এক টেবিল চামচ মেথি ও এক টেবিল চামচ মৌরি ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সেটার পেস্ট বানিয়ে গোসলের আগে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখুন। খুশকি অনেকাংশেই দূর হবে।

মধু ও লেবু বেশ কার্যকর। তিন টেবিল চামচ মধুর ভেতর কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে প্রয়োগ করলে খুশকি দূর হয়।

খুশকি দূর করতে পেঁয়াজের রস ও আদার রস বেশ কার্যকর। থেঁতলে রস বের করে তুলার সাহায্যে লাগাতে পারেন। আবার থেঁতলে নেওয়া অংশটুকু পাতলা কাপড়ে মুড়ে মাথার ত্বকে রস লাগাতে পারেন।

অ্যালোভেরার মধ্যে রয়েছে ছত্রাকবিরোধী উপাদান, যা খুশকি দূর করতে সহায়তা করে। অ্যালোভেরার ভেতরের অংশটুকু বের করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে ধীরে ধীরে মালিশ করে নিন।

সচেতন হলেই কালা কালা চুলের ভেতর সাদা সাদা খুশকি আর দেখা যাবে না।

খুশকির জন্য অনেকেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরেন
ছবি: নকশা

যেভাবে প্রতিরোধ

হার্বস আয়ুর্বেদিকের স্বত্বাধিকারী এবং আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি জানান, অনেকেই মনে করেন, চুলে তেল দিলেই খুশকি দূর হবে; ধারণাটি ভুল। এতে বরং ত্বকে খুশকি বসে যায়, পরে যা ছত্রাক সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি করে। তিনি আরও বলেন, ‘খুশকিমুক্ত থাকতে প্রতিদিন শ্যাম্পু করা উচিত। আমারা অনেকেই মনে করি, প্রতিদিন শ্যাম্পু করা উচিত নয়, কিন্তু খুশকিমুক্ত থাকতে প্রতিদিন শ্যাম্পু করা উচিত। শ্যাম্পুর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিলে খুশকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।’

প্রচুর পানি পান এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার ওপর জোর দিলেন আফরিন মৌসুমি। যেসব খাবারে ভিটামিন বি, জিংক, ওমেগা-৩ আছে, সেসব খাবার গ্রহণ করুন, কারণ এগুলো ত্বকের শুষ্কতা দূর করে।

যেহেতু শীতকালে বাইরের ধুলাবালু খুশকির অন্যতম একটি কারণ, তাই বাইরে বের হলে স্কার্ফ বা টুপি দিয়ে চুল ঢেকে নিতে হবে। মাথার ত্বকে সংক্রমণ থাকলে চুলে কোনো রং ব্যবহার করা উচিত নয়।

খুশকিমুক্ত থাকার মূল শর্ত হলো পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা। গোসলের পর চুল ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। প্রতিদিন মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান।