মেকআপ সারা দিনের জন্য। সারা রাতের জন্য নয়। ছোট্ট এই পার্থক্য যাঁরা বুঝতে পারেন, তাঁদের ত্বকের ক্ষতি কম হয়। মুখের খুঁত ঢেকে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে দিনের বেলা মেকআপ আপনাকে সহায়তা করে। ঠিক একই জিনিস যদি রাতে ঘুমানোর সময় আপনার চেহারায় থাকে, তাতে ত্বকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ঘুমের সময় ত্বক নিজেকে মেরামত করে। চেহারায় যখন মেকআপ থাকে, ত্বকের শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। ত্বকে ক্লান্তির লক্ষণগুলো খুব তাড়াতাড়ি ফুটে উঠতে শুরু করে। মেকআপ ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে দেয়। ফলাফলে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
চোখের পাপড়িতে সামান্য মাসকারা থাকলেও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। পরবর্তী সময়ে পাপড়ি উঠে যাওয়া কিংবা মাসকারা লাগানো শক্ত পাপড়ির খোঁচা লাগতে পারে কর্নিয়াতে।
যতই ক্লান্ত থাকুন না কেন, ঘুমাতে যাওয়ার আগে ত্বকের মেকআপ সরানো বাধ্যতামূলক। না হলে সকালে আয়নায় ত্বকের নির্জীব ভাব দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। দীর্ঘ সময় মেকআপ থাকার কারণে ব্রণ হওয়ার আশঙ্কাও দেখা যেতে পারে।
ত্বকে সারা রাত মেকআপ থাকলে বলিরেখার সমস্যাও দেখা দেয়। যুক্তরাজ্যের দ্য ডেইলি মেইল ৩০ দিনের একটি নিরীক্ষা করেছিল। যেখানে একজন নারী ৩০ দিন রাতে মেকআপসহ ঘুমিয়ে পড়েন। ফলাফল রাতে মুখ না ধোয়ার কারণে ৩০ দিনেই চেহারা ১০ বছর বুড়িয়ে যায়। তৈলাক্ত ত্বক বা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য মুখ না ধোয়ার বিষয়টি খুবই মারাত্মক। আগে থেকেই ব্রণ আছে, এমন ত্বক পরিষ্কার রাখা বাধ্যতামূলক। না হলে ত্বকের প্রচণ্ড ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মেকআপ তোলার কাজটি সহজ করতে মেকআপ রিমুভার ব্যবহার করতে পারেন। অথবা নারকেল তেল দিয়েও সরাসরি মেকআপ তুলে ফেলতে পারেন। আপনার ত্বকের ওপর যে ময়লা ও তেল থাকে, সেটা মেকআপের সঙ্গে মিলে যায় একসময়। এটা নিয়েই যখন ঘুমাতে যাবেন, তখন ত্বকের ওপর নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে।
রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি জানান, ত্বকের ধরনভেদে মেকআপ তোলার উপকরণেও ভিন্নতা চলে আসবে। সাধারণ ত্বকে মেকআপ রিমুভার ব্যবহার করে তুলে ফেলতে পারবেন। না থাকলে নারকেল তেল বা জলপাই তেল দিয়ে মেকআপের প্রাথমিক স্তর তুলে ফেলুন। এরপর স্ক্রাবিং করুন দুই থেকে তিন মিনিট। সাবান দিয়ে ধুয়ে ক্রিম লাগিয়ে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বকের বেলায় প্রথমে কোনো ধরনের তেল ব্যবহার করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। মেকআপ রিমুভার ওয়াইপস দিয়ে মেকআপের প্রাথমিক স্তর তুলে ফেলুন। চোখ ও ঠোঁট আগে পরিষ্কার করবেন আলাদা আলাদা ওয়াইপস দিয়ে; এরপর চেহারার বাকি অংশ আলাদা ওয়াইপস দিয়ে। এবার চোখ ও ঠোঁটের জন্য নারকেল তেল ও পানি মিশিয়ে তুলায় ভিজিয়ে নিন। তারপর পরিষ্কার করুন।
চেহারার বাকি অংশের জন্য দুধের সঙ্গে নারকেল তেল বা বাদাম তেল মিশিয়ে তুলার সহায়তায় মেকআপ তুলে ফেলুন। এরপর স্ক্রাবিং করার মাধ্যমে লোমকূপের গোড়া থেকে মেকআপ সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে ফেলুন। সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। সবশেষে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। সাধারণত, মেকআপ লাগানোর চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পরই তা তুলে ফেলা উচিত। এটি অনেক সময় সম্ভব হয়, অনেক সময় সম্ভব হয় না।
আমাদের শরীরের বর্জ্যগুলো ঘামের সঙ্গে বের হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে মেকআপ। এ কারণে কাজ শেষ হওয়ার পরপরই মেকআপ তুলে ফেলাটা বুদ্ধিমানের কাজ। ভালো মানের মেকআপ ব্যবহার করুন। ত্বককে ভালো ও সুস্থ রাখুন।