বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ভেতরকার পরিবর্তনের ছাপ পড়ে ত্বকের ওপরে। ফলে স্বাভাবিক সমস্যা রূপ নেয় বলিরেখায়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মেছতা এবং হারিয়ে যেতে থাকে ত্বকের উজ্জ্বলতা। ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে প্রয়োজন পরিমিত পুষ্টি, নিয়মিত যত্ন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম।
সঠিক খাবার ত্বকের বাহ্যিক সমস্যা কমিয়ে আনে অনেকটাই। এমন কিছু খাবার আছে, যা থেকে আপনার ত্বক পুষ্টি পাবে, উজ্জ্বলতা পাবে। এমনই বলছিলেন ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেহানা বেগম। তিনি বলেন, শুরুটা করতে হবে সময় থাকতেই! বলিরেখা, দাগ-ছোপ, মেছতা যতটা না বয়সের প্রভাব, তার চেয়েও বেশি হয় ক্ষতিকারক সূর্যরশ্মি থেকে। এই রশ্মি ত্বকের কোলাজেন স্ট্র্যান্ড দুর্বল করে দেয়। ফলে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। এ ছাড়া শরীরে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতিও ত্বকের ক্ষতির আরেকটি কারণ। বাহ্যিক এসব ক্ষতি থেকে বাঁচাতে ত্বকের দরকার অভ্যন্তরীণ পুষ্টি। প্রতিদিন যেসব খাবার খাওয়া হয়, তা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া বা না পড়ার ক্ষেত্রে খাবারের ভূমিকা রয়েছে। তাই ত্বক সুন্দর রাখতে প্রতিদিনকার খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বলেন, ত্বক ভালো রাখতে উজ্জ্বল রঙের সবজি, টকজাতীয় খাবার, পরিষ্কার পানীয়, প্রোটিন ও ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বেশ কার্যকর। কোনো কারণে এগুলো পাওয়া না গেলে ভিটামিন সি ট্যাবলেট, মাছের তেলের ট্যাবলেট ও কোলাজেন পাউডার খাওয়া যেতে পারে বিকল্প হিসেবে।
ত্বকের আর্দ্রতা ও সজীব ভাব বাড়াতে
প্রতিদিন পাতিলেবুর রস মুখে লাগালে দাগ-ছোপ হালকা হবে। লেবু, হলুদ, বিট খাবার তালিকায় থাকলে ভেতর থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। হলুদের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট বয়সের ছাপ কমতে সহায়তা করে। খালি পেটে হলুদ-পানির মিশ্রণ পান করা খুব উপকারী। বিটে ভিটামিন এ এবং সি আছে, যা ত্বকে প্রাকৃতিক পুষ্টি জোগায়। আখরোট ওমেগা-থ্রি চর্বির ভালো উৎস, একে বলা হয় ‘মস্তিষ্কের খাবার’। খাবারে বাদাম যোগ করা হলে তা ত্বক সুন্দর এবং আর্দ্রতা ধরে রাখে। এতে বয়সের ছাপ দূর হয় এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। দুই বেলার খাবারের মাঝে নাশতা হিসেবে বাদাম খেতে পারেন। অথবা নাশতা করার সময় বাদাম খাবারে যোগ করতে পারেন। এ ছাড়া রঙিন সবজি, দই, অ্যালোভেরার শরবত ইত্যাদি খাবারও ত্বক প্রাণবন্ত রাখে। চেষ্টা করুন নিয়মিতভাবে এগুলো খাওয়ার। মিষ্টি আলুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই উজ্জ্বল করে। এর অ্যান্থোসায়ানিন নামক উপাদান ত্বকের দাগছোপ কমায়। কলায় রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, পটাশিয়াম ও প্রচুর পানি। এতে আপনার ত্বক আর্দ্র থাকে এবং ব্রণের সমস্যাও কমে। ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে নিয়মিত মাশরুম খাওয়া যেতে পাতে। এটা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে মাশরুমের তুলনা নেই।
টান টান ত্বকের জন্য
টমেটোতে রয়েছে প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের গুণ। সূর্যের প্রতি সংবেদনশীলতা কমাতেও টমেটো সহায়তা করে। ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ব্রণ কমায়। ত্বক ভালো রাখতে প্রতিদিন টমেটোর স্যুপ খেতে পারেন। প্রতিদিন দুই চা-চামচ পরিমাণ জলপাই তেল খাবার তালিকায় থাকলে ৩১ শতাংশ ক্ষেত্রে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে। এ ছাড়া সালাদ এবং রান্নার তেল হিসেবেও জলপাই তেল বেশ উপকারী। প্রতিদিন গ্রিন–টি পান করলে ত্বক মসৃণ ও নমনীয় হয়। গ্রিন–টিতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ত্বকে রক্তের প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে এবং ত্বক সুস্থ রাখে। এ ছাড়া ভিটামিন ই সমৃদ্ধ সূর্যমুখীর বীজও ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। সালাদ, সকালের নাশতা, সবজি হিসেবেও এই বীজ খেতে পারেন। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রোটিন পাওয়া যায় ডিম ও বিভিন্ন মাছ থেকে। ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে এই ফ্যাটি অ্যাসিডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ত্বক সুন্দর করতে মাছের তেলও উপকারী। এ ছাড়া খাবারের স্বাদ বাড়াতে চিয়া বীজ ব্যবহার করা হয়, এটা ত্বকে পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করে। চিয়া ওমেগা-থ্রি ফ্যাট, ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ। এগুলো ত্বকে বলিরেখা পড়া ধীর করে, সংক্রমণ কমায় এবং স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বলতা দেয়। সারা রাত চিয়া বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করা যেতে পারে।
পরামর্শ
জিংক ত্বকে নতুন কোষ গঠন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রেস্টুরেন্টের খাবারের প্রতি যাঁদের ঝোঁক আছে, ত্বক সুন্দর রাখতে সেগুলো বাদ দিতে হবে।
কী খাবেন, তার পাশাপাশি কী খাবেন না, সেটা জানাও জরুরি। তেল–মসলায় তৈরি খাবার এবং অতিরিক্ত চিনি সব দিক থেকেই ক্ষতিকর।
প্রখর রোদ এড়িয়ে চলুন।
প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
খাবারের সময়টা নির্দিষ্ট রাখার চেষ্টা করুন।
প্রতিদিন খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত পানি ও দুটি করে ফল রাখার চেষ্টা করুন।
শরীরচর্চা করুন, মন ভালো রাখুন।