কারুশিল্প আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ রুবি গজনবী আর নেই
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক রঙের পুনর্জাগরণ ও কারুশিল্প আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ রুবি গজনবী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘ রোগভোগের পর আজ শনিবার বিকেল ৫টা ৫৪ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ভারতের সমাজকর্মী কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়ের কাজ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের কারুশিল্পের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৯৮২ সালে তিনি শুরু করেন প্রাকৃতিক রং প্রকল্প। শুরুতে তিনি মাত্র ছয়টি রং নিয়ে কাজ করেন।
এরপর এই সংখ্যা বাড়তেই থাকে। ১৯৯০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান অরণ্য ক্র্যাফট। এরই মাঝে ১৯৮৫ সালে পটুয়া কামরুল হাসানসহ সমমনা ব্যক্তিরা বাংলাদেশের কারুশিল্প ও কারুশিল্পীদের উন্নয়নে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ। অসুস্থ হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের তিনি নির্বাহী পরিষদে ছিলেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী সভ্য। কারুশিল্প পরিষদের হয়ে তাঁর সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য অবদান ২০১৮ সালে জামদানি উৎসবের আয়োজন। এই উৎসবের কারণেই সোনারগাঁ পায় ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফট সিটির মর্যাদা। ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে জামদানির অন্তর্ভুক্তির নেপথ্যে বিশেষ ভূমিকা রাখেন রুবি গজনবী।
রুবি গজনবী ছিলেন ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফটস কাউন্সিলের সম্মানিত সদস্য এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জাতীয় রঞ্জক কর্মসূচির চেয়ারপারসন। এ ছাড়া তিনি ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ট্রাস্টি ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সদস্য। বিভিন্ন সময় তিনি লিখেছেন নকশা ও রঙ্গিন শিরোনামে দুটি বই। এ ছাড়া সম্পাদকমণ্ডলীতে ছিলেন টেকটটাইল হেরিটেজ অব বাংলাদেশ ও ঐতিহ্যবাহী জামদানি নকশা বইয়ের।
১৯৩৫ সালের ১০ ডিসেম্বর ফরিদপুরে জন্ম হলেও আইসিএস বাবা এ এফ মুজিবুর রহমানের চাকরির সুবাদে কলকাতায় কেটেছে তাঁর স্কুলজীবন। পড়েছেন লরেটো স্কুলে। দেশভাগের পর এ দেশে এসে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স করেন।
কিছুদিন আগে তাঁর স্বামী ফারহাদ গজনবীর মৃত্যু হয়।