আগুন নেভাবে রোবট, নির্মাতারা পেলেন স্বর্ণপদক
ওয়ার্ল্ড ইনভেনশন কম্পিটিশন অ্যান্ড এক্সিবিশন ২০২৩ (ডব্লিউআইসিই)–এর আইটি অ্যান্ড রোবোটিকস বিভাগে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশের দল ‘টিম অ্যাটলাস’। ইন্দোনেশিয়া ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও মালয়েশিয়ার মাহশা ইউনিভার্সিটির যৌথ আয়োজনে মালয়েশিয়ায় বসেছিল প্রতিযোগিতার পঞ্চম আসর। ২২ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর—২০টি দেশের চার শতাধিক দল প্রতিযোগিতার পাঁচটি বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। অনলাইন ও অফলাইন—দুইভাবেই অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল। তাই একে বলা হচ্ছে হাইব্রিড মডেলের প্রতিযোগিতা।
টিম অ্যাটলাস কেন আলাদা
আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ ও বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডে গোল্ড মেডেল পাওয়া সানি জুবায়ের স্কুলজীবন থেকেই রোবোটিকসে আগ্রহী। তাঁর নেতৃত্বে বিজ্ঞান ও রোবোটিকসে আগ্রহী কয়েকজন শিক্ষার্থী ২০১৬ সালে গঠন করে ‘টিম অ্যাটলাস’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিসহ নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০ জন শিক্ষার্থী এই দলে কাজ করছেন। টিম অ্যাটলাসের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানি জুবায়ের বলেন, ‘আমার উদ্দেশ্য ছিল আমার মতো বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষার্থীদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, স্কুল–কলেজের ছেলেমেয়েরাও আমাদের দলের সদস্য হতে পারে৷ বড় দল হওয়ার একটা সুবিধা হলো জ্ঞান ভাগাভাগি ও দক্ষতা প্রয়োগের জায়গাটা অনেক সমৃদ্ধ হয়।’
সদস্যরা শুধু আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই নন, তাঁদের পড়ার বিষয়ও আলাদা। দলের নিজস্ব ল্যাবে যে যাঁর মতো করে ভূমিকা রাখেন। বেশ কয়েক বছর ধরে দলটি একসঙ্গে কাজ করেছে। একাধিক প্রতিযোগিতা থেকে এনেছে পুরস্কার।
ডব্লিউআইসিই ২৩–এ প্রথম হয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত দলটি। দলের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম শাহরিয়ার মুঠোফোনে জানান, ‘বিশ্বে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাহশা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। এ রকম জায়গায় প্রথম হওয়া নিঃসন্দেহে বড় আনন্দের বিষয়।’
অগ্নিদুর্ঘটনায় সম্মুখযোদ্ধা যে রোবট
বিশ্বব্যাপী অগ্নিকাণ্ডে যে ধরনের উদ্ধার পদ্ধতি প্রচলিত, সেটিকে কীভাবে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করা যায়, তা-ই নিয়ে কাজ করেছে টিম অ্যাটলাস। এ লক্ষ্যে একটি রোবট নির্মাণ করেছে টিম অ্যাটলাস। নাম ডিফেন্ডার। অ্যাটলাসের সদস্য, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শিহাব আহমেদ বলছিলেন, ‘কোথাও আগুন লাগলে আমাদের রোবটটি সরাসরি আগুনের উৎস খুঁজে বের করে নেভানোর চেষ্টা করবে। তারপর পর্যায়ক্রমে গুরুত্ব বিবেচনা করে চারদিকে ছড়ানো আগুন নেভানোর কাজ করবে। রোবটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে, রিমোট দিয়েও পরিচালনা করা সম্ভব। অর্থাৎ, অগ্নিনির্বাপক দল ঘটনাস্থলের বাইরে থেকেই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। আটকা পড়া মানুষ রোবটের সঙ্গে থাকা বক্স খুলে প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরণও পাবেন।’
এ ছাড়া রোবটটিতে যুক্ত আছে স্মোক ভ্যাকুয়াম, যা কার্বন মনক্সাইডযুক্ত বিষাক্ত ধোঁয়া টিউবের মাধ্যমে বাইরে বের করতে সহায়তা করবে। দলনেতা সানি জুবায়ের যোগ করলেন, ‘অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে নির্মিত এই রোবট প্রায় ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাজ করতে সক্ষম। এ ছাড়া আমরা আমাদের চলমান প্রকল্প নিয়েও প্রতিযোগিতায় কথা বলেছি। সমুদ্রে বা নদীতে হয়তো একটি জাহাজ বিপদে পড়ছে বা জাহাজে জরুরি চিকিৎসা উপকরণ পাঠাতে হবে। কিংবা হয়তো আগুন লেগেছে। রোবট দিয়ে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে কীভাবে জাহাজে আগুন নেভানো বা উদ্ধারসংক্রান্ত অন্যান্য কাজ করা যায়, সেটিও আমাদের চলমান প্রকল্পের অংশ।’
দলটির পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়া ডব্লিউআইসিইতে অংশ নেওয়া টিম অ্যাটলাসের সদস্যরা হলেন সানি জুবায়ের (ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি), শিহাব আহমেদ (নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি), ফাহিম শাহরিয়ার (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), মেহরাব ইসলাম (ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি) ও মেহরান ইসলাম (বিএএফ শাহীন কলেজ)। অনলাইনের মাধ্যমে দলকে সহযোগিতা করেছেন সাকিবুল আহসান (ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি) ও সানজিদা সিদ্দিকা (আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ)।
বছরের অন্যান্য অর্জন
বছরজুড়েই টিম অ্যাটলাসের হাত ধরে বাংলাদেশের ঘরে এসেছে নানা অর্জন। এ বছর মার্চ মাসে ভারতের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি), কানপুরে বসেছিল ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতা—টেককৃতি-২৩। বিভিন্ন দেশের ১৫০০ প্রতিযোগীর মধ্যে টেকনোভেশন বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে টিম অ্যাটলাস।
জুলাই মাসে ভারতে অনুষ্ঠিত হয় রোবোটিকস–সংক্রান্ত প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় আয়োজন—ওয়ার্ল্ড রোবোটিকস কম্পিটিশন ২০২৩। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ বিশ্বের ২২টি দেশের তিন শতাধিক দল অংশ নেয় রোবোটিকসের এই বিশ্বকাপে। নিজেদের তৈরি রোবটের সক্ষমতা প্রমাণ করে সেখানে টিম অ্যাটলাস হয়েছিল দ্বিতীয়।