আজ স্কুলে কী হয়েছে, শিশুর কাছে জানার ১০টি উপায়
স্কুলে আজ কী হয়েছে? প্রায় প্রত্যেক সন্তানকেই বাবা–মায়ের কাছ থেকে এই প্রশ্ন শুনতে হয়। বিশেষ করে ছোট শিক্ষার্থীদের। প্রশ্ন যখন প্রতিদিন এক রকম হয়, উত্তরও হয় সেই একই ধাঁচের। অভিভাবক হিসেবে সন্তানকে এই প্রশ্ন করার সময় সৃজনশীলতা দেখালে, সন্তানও সেটার উত্তর দেবে ঠিকঠাক। সন্তানের মতামত সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ, এতে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনা প্রকাশ পায়। সন্তানের মনের ভেতরের কথাগুলোই জানতে পারবেন, যদি প্রশ্ন করার সময় বাক্যটা একটু ঘুরিয়ে নেন। এখানে রইল এমন ১০টি প্রশ্ন, যার মাধ্যমে সারা দিন স্কুলে তারা কী করেছে, তা সহজেই জানতে পারবেন। পাশাপাশি কথোপকথনের মধ্য দিয়ে সম্পর্কও মজবুত হবে।
১. আজ সবচেয়ে ভালো কী হয়েছে?
‘সারা দিন স্কুলে কেমন কেটেছে’—এমন গতানুগতিক প্রশ্নের বাইরে কিছু জিজ্ঞেস করা হলে, সন্তান উৎসাহ পাবে কথা বলতে। ইতিবাচক প্রশ্ন করলে, উত্তর দেওয়ার সময় তারাও বুঝতে পারবে, তাদের সঙ্গেও ভালো কিছু হয়েছে। তাই আজ সবচেয়ে ভালো কী হয়েছে, জানতে চাইলে সে ভালো বিষয়টি খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।
২. আজ চমকে যাওয়ার মতো কিছু ঘটেছে কি?
স্কুল শেষে সন্তান যদি উচ্ছ্বসিত হয়ে ছুটে আসে, বুঝবেন, ভালো কিছু হয়েছে আজ। তাই জিজ্ঞেস করতে পারেন, আজ কোনো সারপ্রাইজ (চমক) পেয়েছ নাকি? বাকিটুকু সে-ই আপনাকে বলে দেবে গড়গড় করে। ফুটবল টিমে ঢোকা, ক্লাস ক্যাপ্টেন হওয়া অথবা বিজ্ঞান ক্লাসে বৈজ্ঞানিক কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভালো করার মতো ছোট ঘটনাগুলো তো আদতে ওর কাছে বড় বিষয়। এ ধরনের প্রশ্ন আপনার সন্তানকে ঘটে যাওয়া ঘটনার ওপর মনোযোগী হতে সহায়তা করে। পাশাপাশি তাঁর কাছে মজার মনে হয়েছে, এমন ছোট ছোট গল্পও বলতে থাকবে, যেসব হয়তো অন্য সময় জানতে পারতেন না।
৩. আজ কারও ওপর খুশি হয়েছে কি?
এ ধরনের প্রশ্ন সন্তানের সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। বিশেষ করে বন্ধুদের ভালো দিকগুলো খুঁজে পেতে সাহায্য করে, তাদের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে। বন্ধুরা যদি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায়, সেটাও যেন সে খুশি মনে বলতে পারে। প্রশ্নের মাধ্যমে তাই শিশুকে সেই ব্যবস্থাটা করে দিতে হবে আপনাকে। সবাইকে প্রতিযোগী না ভেবে অন্যদের আনন্দে আনন্দিত হতে শেখাতে হবে।
৪. তোমার কোন কাজটি করে আজ ভালো লেগেছে?
আরেকজনের অর্জনে খুশি হওয়ার পাশাপাশি নিজের অর্জনেও যেন গর্ববোধ করে, সেটাও অনুধাবন করাতে হবে সন্তানকে। যত ছোট অর্জনই হোক না কেন, প্রশংসা করুন তাঁর সাহসিকতা ও গুণের। পরবর্তী সময় এটাই তাকে ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহ দেবে।
৫. কোন বিষয়টি আজকের দিনটিকে আরও বিশেষ করে তুলেছে?
শিশু খুঁজবে এমন কিছু কী হয়েছে, যেটা আজকের দিনটিকে আরও বিশেষ করেছে। এটি আপনার সন্তানকে যেকোনো হতাশা থেকে মুক্ত রাখবে। পাশাপাশি একটা সমস্যা মোকাবিলা ও পরিবর্তন করার জন্যও সহায়তা করবে।
৬. কোনো মজার বিষয় শিখেছ?
এ ধরনের প্রশ্নের মাধ্যমে শিশুরা তাদের পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবে আপনার সঙ্গে। নির্দিষ্ট কোনো বিষয় বা পরীক্ষায় কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছে, এসব প্রশ্ন একটা সীমাবদ্ধতা তৈরি করে উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে। প্রশ্নের মধ্যে স্বাধীনতা থাকলে, নিজেদের ভালো লাগার বিষয়গুলো সম্পর্কে কথা বলতেও উৎসাহ বোধ করবে শিশু।
৭. অবসরে কী করেছ?
অবসরে বা যখন ক্লাস ছিল না, তখন কী করেছ? বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, দলগতভাবে কাজ করা, খেলা, আপনার সন্তানের দক্ষতা বের হয়ে আসবে উত্তরের মধ্যে দিয়ে। জানতে পারবেন ক্লাস শেষ আপনার সন্তান কীভাবে সময় কাটায়।
৮. আজকে স্কুলে কার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছ?
স্কুলে নানা রকম ঘটনা ঘটতে পারে। কোনো শিক্ষার্থী হয়তো বকা খাবে, কেউ হয়তো পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবে। এ সময় একজন বন্ধু হয়ে সহানুভূতি প্রকাশ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের প্রশ্নের মাধ্যমে জানতে পারবেন, আপনার সন্তান কার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করছে। প্রয়োজনে তাকে দিকনির্দেশনাও দিতে পারবেন।
৯. স্কুলে নতুন কিছু করতে চাও?
প্রশ্নটি তাদের উৎসাহিত করতে পারে নতুন কোনো ক্লাব বা আগে করেনি এমন কাজের প্রতি। পড়াশোনার চাপে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় নতুন কিছু করার কথা চিন্তা করে না। পুরোনো রুটিনেই ঘুরপাক খেতে থাকে। এমন প্রশ্নে সে উৎসাহ ফিরে পাবে।
১০. আজকের ভুল থেকে কী শিখলে?
কথা প্রসঙ্গে যদি জানতে পারেন, স্কুলে সন্তান কোনো ভুল করে ফেলেছে, তাকে বোঝান সেটা নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং ভুল থেকেই শেখা যায় অনেক কিছু, যেটা পরবর্তী সময়ে একই ভুল করা থেকে তাদের সরিয়ে রাখবে।
খেয়াল রাখুন
আপনার সন্তান যখন আপনার সঙ্গে কথা বলবে, মন দিয়ে শুনুন। কথোপকথনের সময় চোখে চোখ রেখে কথা বলা এবং ইতিবাচকভাবে প্রতিক্রিয়া জানান।
সময় নির্বাচন করুন। বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে প্রশ্ন করা শুরু না করলেই ভালো। বরং তার মনমেজাজ বুঝুন। দিনে কথা বলতে না চাইলে রাতে খাওয়ার সময় কথা বলতে পারেন।
সীমিত প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন। খুব বেশি প্রশ্ন করবেন না। তাতে আপনার কৌতূহল জিজ্ঞাসাবাদের মতো মনে হতে পারে।
কিছু জানতে পারলে সঙ্গে সঙ্গেই উপদেশ দিতে যাবেন না। আপনার সন্তানের কী করা উচিত ছিল সে বিষয়ে উপদেশ না দিয়ে বরং কীভাবে সেটাকে মোকাবিলা করবে, সেটা জিজ্ঞেস করতে পারেন।
খেলাচ্ছলে কথা বলতে পারেন। সামনে বসিয়ে মুখোমুখি কথা বলায় আপনার সন্তান স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না-ও করতে পারে।
সন্তানের সঙ্গে কথা বলার সময় খুব বেশি ভেতরে ঢোকার দরকার নেই। মাথায় রাখুন, উদ্দেশ্য শুধু তথ্য সংগ্রহ করা। বরং এটাকে একটা সুযোগ হিসেবেই দেখা উচিত যে আপনার সন্তান আপনার সঙ্গে তার অনুভূতি ভাগ করে নিচ্ছে।
সূত্র: সাইকোলজি টুডে