যেখানে ইন্টার্নশিপ, সেখানেই চাকরি

অনেক শিক্ষার্থীই মনে করেন, কোনো রকম একটা ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা থাকলেই হলো। এক্কেবারে ভুল ধারণা। সামাজিক বিজ্ঞান থেকে শুরু করে ব্যবসায় প্রশাসন, প্রকৌশল থেকে প্রযুক্তি—যে বিষয়েই পড়ুন না কেন, ইন্টার্নশিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা একজন শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার গুছিয়ে তুলতে সহায়তা করে।
ইন্টার্নশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রের মধ্যে সংযোগ সেতু তৈরি করে, মডেল: সিফাত ও জুলফিকার
ছবি: কবির হোসেন

ইন্টার্নশিপ থেকে চাকরি

অনেক প্রতিষ্ঠানেই এখন ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ মেলে। প্রতিষ্ঠানগুলোও ইন্টার্নশিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই কর্মী নিয়োগ করছে। ইন্টার্নশিপের সময়টা শিক্ষার্থী যেমন নিজের দক্ষতা তৈরিতে কাজে লাগাতে পারে, তেমনই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীর ঘাটতি পূরণ করতে পারে। ব্র্যাকের বিভিন্ন কার্যক্রমে তরুণদের ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ আছে। যাঁরা ভবিষ্যতে উন্নয়নকর্মী হিসেবে কাজ করবেন, গবেষণা করবেন, তাঁরা এখানে ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে হাতে–কলমে শেখার সুযোগ পান। বাংলাদেশের নানা প্রান্তের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সংযুক্তির মাধ্যমে ইন্টার্নরা হাতে–কলমে নানা বিষয়ে জানার সুযোগ পান।

যে কাজ করতে চান, তার সঙ্গে যেন সংগতি থাকে

যে প্রতিষ্ঠানেই ইন্টার্নশিপ করুন না কেন, ভবিষ্যতে যে ক্ষেত্রে কাজ করতে চান, তার সঙ্গে যেন তা সংগতিপূর্ণ হয়। এতে সময় নষ্ট হবে কম আর ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কেও আপনার পূর্বধারণা থাকবে। ইন্টার্নশিপ যেন হয় ‘ফোকাসড’। আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেকেই সার্টিফিকেটের জন্য ইন্টার্নশিপ করতে চান, এটা নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার শামিল। ইন্টার্নশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও ভবিষ্যতের কর্মজীবনের মধ্যে সংযোগ সেতু তৈরি করে। এই সুযোগ নিজেকে তৈরির জন্য গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। কাজ শেখার সুযোগ আছে, এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই ইন্টার্নশিপ করা যেতে পারে।

ইন্টার্নশিপের জন্য প্রস্তুতি

ইন্টার্নশিপের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লিখিত পরীক্ষাসহ ভাইভার মুখোমুখি হতে হয় এখন। এ জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট, লিংকডইনসহ বিভিন্ন চাকরির ওয়েবসাইট ঘাঁটতে হবে, পড়তে হবে সংবাদপত্র। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। সিভি তৈরি করা শিখতে হবে। কম্পিউটার ও ভাষা যোগাযোগ সম্পর্কে থাকতে হবে সাধারণ ধারণা। প্রয়োজনে ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, এমন কারও সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে, যা ইন্টারভিউ সম্পর্কে ধারণা দেবে।

নিজেকে জানুন

নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কী কী বিষয়ে বা ক্ষেত্রে দক্ষতা বিকাশ করতে হবে, জানতে হবে। যা-তা করে ইন্টার্নশিপ করা যাবে না। শিক্ষাজীবনে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের দক্ষতা থাকে না, ইন্টার্নশিপের সময়ে সেগুলো অর্জন করা জরুরি। কর্মজীবনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার সব ধরনের সুযোগ নিতে হবে এখান থেকেই।

ইন্টার্নশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রের মধ্যে সংযোগ সেতু তৈরি করে
ছবি: কবির হোসেন

থাকতে হবে শেখার মানসিকতা

এখন ইন্টার্নশিপ থেকে সরাসরি চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়। যে কারণে ইন্টার্নশিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা ভবিষ্যতে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চান, তাঁদের পুরো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। ধরুন, আপনি যোগাযোগ বিভাগে ইন্টার্নশিপ করছেন, আপনাকে তখন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা, বিপণন, করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) বিভাগসহ সব বিভাগের কাজ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। শুধু প্রতিষ্ঠানেরই নয়, যে কর্মক্ষেত্রে আছেন, সে দুনিয়ার খোঁজখবরও রাখতে হবে। ব্যবস্থাপনা বিভাগে ইন্টার্নশিপ করলে, মার্কেটিং দুনিয়ায় দেশে বা বিদেশে কী হচ্ছে, জানা জরুরি। দেশ-বিদেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কী কাজ হচ্ছে, কোন কোন প্রকল্প বা সেবা নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যস্ত, তা–ও জেনে রাখুন।

ইন্টার্নশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রের মধ্যে সংযোগ সেতু তৈরি করে
ছবি: কবির হোসেন

পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে

সবকিছুর মতোই চাকরির বাজারে প্রতিদিনই হাজারো পরিবর্তন আসছে। ইন্টার্নশিপের শুরু থেকেই এই পরিবর্তনের জন্য তৈরি থাকতে হবে। সবকিছুর জন্য নিজেকে তৈরি রাখুন। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সংকটগুলো সম্পর্কে টুকটাক ধারণা রাখতে হবে। কোন ইন্ডাস্ট্রি কখন কেমন করছে, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা কেমন—এসব বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা জরুরি।

মেন্টর ধরুন

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মেন্টর। তাদের সহায়তা নেওয়া শিখতে হবে। সরাসরি কেউ হয়তো আপনাকে বুদ্ধি–পরামর্শ বা দিকনিদের্শনা দেবে না। প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কোনো কর্মী বা কর্মজীবনে অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তিত্বকে নিজের ক্যারিয়ারের পরামর্শক হিসেবে নিতে পারেন। তাঁর সঙ্গে নিজের অবস্থান, ভবিষ্যতের সুযোগ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।

সুযোগের অপেক্ষায় থাকা যাবে না

ইন্টার্নশিপ করার সময় যে দলের সঙ্গে কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন।

নিজেকে দলের কার্যকর সদস্য প্রমাণ করুন। নিজে উদ্যোগী হয়ে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের নির্বাহী ও দক্ষ কর্মীদের সঙ্গে মিশে কাজের সুযোগ তৈরি করুন। কেউ কাজ দেবে কিংবা কাজ এলে করব—এমন মনোভাব ক্ষতিকর। মানসিকতা হোক কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণের। স্বল্প সময়ে শেখার সর্বোচ্চ সুযোগ তৈরি করুন।

লেখক: লিড, এমপ্লয়ার ব্র্যান্ডিং অ্যান্ড এনগেজমেন্ট, ব্র্যাক

আরও পড়ুন