বাড়ির বনসাই গাছটিকে যেভাবে ভালো রাখবেন

বনসাইয়ের যত্ন নেওয়া সহজ। রোদ, পানি, সার ঠিকমতো পেলে বেঁচে থাকবে অনেকদিন

নগরে ইট-কাঠের স্থাপনার মধ্যে এক টুকরো সবুজের উপস্থিতি যেন প্রাণের সঞ্চার করে। স্বল্প পরিসরে সহজ যত্নে পালন করা যায় বলেই বৃক্ষপ্রিয় মানুষের কাছে বনসাইয়ের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে গেছে। বনসাই গাছগুলো অন্যান্য গাছ থেকে কিছুটা নমনীয়। তাই এদের যত্ন এবং রক্ষণাবেক্ষণে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সেই বিষয়গুলোই চলুন জেনে নেওয়া যাক—

গাছ নির্বাচন

যেসব গাছের বৃদ্ধি দেরিতে হয়; কাণ্ড হয় মোটা; বয়স হলে ছাল মোটা হয়ে যায় এবং শিকড় কেটে দিলে ঝুরি গাছের শিকড় হিসেবে কাজ করে—এ ধরনের গাছ বনসাইয়ের উপযোগী। বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুল হক জানান, যেখানে বা যেই দেশে বনসাই করা হবে, গাছটিকে সে স্থানের আবহাওয়ার উপযোগী হতে হয়। বাংলাদেশে বনসাই করা যেতে পারে এমন গাছগুলো হলো বট, বকুল, শিমুল, পাকুড়, তেঁতুল, শিরীষ, বাবলা, পলাশ, বিলাতি বেল, ছাতিম, হিজল, জাম, নিম, বেলি, গাব, শেফালি, পেয়ারা, ডালিম, তমাল, জাম্বুরা, কমলা, বহেরা, বরই, কামিনী, মেহেদি, কড়ই, অর্জুন।

গাছ অনুযায়ী পাত্র বেছে নিন
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

মাটি তৈরি

বনসাই চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। এ ছাড়া এতে নিয়মিত গোবর সার, কম্পোস্ট সার, হাড়ের গুঁড়ো মেশানো উচিত। ছত্রাক প্রতিরোধ করার জন্য ছাই দেওয়া যেতে পারে। রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই ভালো। মাটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে পানিনিষ্কাশন ভালো হয়।

পানি দেওয়া

বনসাই গাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পানি দেওয়া। একটি বনসাই গাছে কী পরিমাণে এবং কীভাবে পানি দিতে হবে, তা অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। গাছের প্রজাতি, আকার এবং আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে বনসাই গাছে পানি দিতে হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাটি শুকিয়ে সাদা না হয়ে যায়। মাটি যখন সামান্য শুষ্ক হয়ে যাবে, তখনই পানি দিতে হবে।

তাপমাত্রা

বনসাই গাছ কখনই ইনডোর প্ল্যান্ট না। বনসাই বারান্দায় রাখা যেতে পারে, যেখানে দিনের অনেকটা সময় রোদ আসে। অথবা ছাদে অন্য গাছের সঙ্গে রাখতে হবে। কড়া রোদে বনসাই পুড়ে যেতে পারে। তবে মাঝেমধ্যে কিছু সময়ের জন্য ঘরের ভেতর এনে রাখতে পারেন।

যত্বন নিলে নসাইয়ে ফুলও ফুটবে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

পাত্র পরিবর্তন

বনসাইকে পাত্রে প্রতিস্থাপনের বিষয়টি যে পাত্রে রাখা হয়েছে, তার আকার এবং গাছের প্রজাতির ওপর নির্ভর করে। দ্রুতবর্ধনশীল গাছকে প্রতি দুই বছর অন্তর অন্য পাত্রে প্রতিস্থাপন করতে হয়। এমনকি কোনো কোনো গাছকে প্রতিবছর পাত্রে প্রতিস্থাপন করতে হবে। পুরোনো এবং পরিণত গাছকে ৩ থেকে ৫ বছর অন্তর অন্য পাত্রে প্রতিস্থাপন করতে পারেন। পাত্রে প্রতিস্থাপন করার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই, তবে বসন্তের শুরুতেই এ কাজটি করতে পারেন। টব পরিবর্তন করতে না চাইলে টবের ধার ঘেঁষে কিছু মাটি তুলে ফেলে, সেখানে জৈব সার দিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

ছাঁটাই এবং আকার দেওয়া

বনসাই গাছের আকার সৃজনশীলভাবে নির্ধারণ করা বেশ কঠিন। কেউ যদি বনসাই সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে না জানেন অথবা কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ না নিয়ে থাকেন, তাহলে তার জন্য বনসাই নির্দিষ্ট আকারে রাখা বেশ কঠিন। এ ক্ষেত্রে সহজ সমাধান হলো আপনি যদি একটি পরিণত বনসাই কিনে আনেন, সেটার ছবি তুলে রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে ছবি দেখে বাড়তি ডালগুলো ছেঁটে ফেলে দিলেই নির্দিষ্ট আকারে চলে আসবে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় শীতকাল ছাড়া বছরের যেকোনো সময় ডাল ছাঁটা যাবে।