আজ কেন বোতাম দিবস জানেন?
আচমকা ছিঁড়ে গেছে শার্টের বোতাম। গায়ে জড়ানো শার্ট না খুলে সুই-সুতো নিয়ে সেটি লাগিয়ে দিচ্ছেন মা, বোন কিংবা প্রিয় নারী। কমবেশি সব পুরুষেরই এমন অভিজ্ঞতা আছে। বোতাম জিনিসটি ছোট্ট কিন্তু নানামুখী আবেগের বাহক। সত্যিই, সময় ও ব্যক্তি-বিশেষে তুচ্ছ একটি বোতাম হয়ে উঠতে পারে নিবিড় আবেগের প্রতীক। হুমায়ূন আহমেদের ছোটগল্প ‘একটি নীল বোতাম’-এ বোতাম নিয়ে এমনই গভীর আবেগ আর হাহাকারের কথা আছে, ‘বই ওল্টাতে ওল্টাতে এক রাতে অদ্ভুত এক কাণ্ড হলো। টুক করে বইয়ের ভেতর থেকে কী যেন পড়ল। তাকিয়ে দেখি ছোট একটা নীল রঙের বোতাম। যেন একটা নীল অপরাজিতা।’
কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘চন্দনকাঠের বোতাম’ কবিতায় লিখেছেন, ‘কৈশোরে হারিয়েছিলাম অতিপ্রিয় একটা চন্দনকাঠের বোতাম/এখনও নাকে আসে তার মৃদু সুগন্ধ/শুধু সেই বোতামটা হারানোর দুঃখে/আমার ঠোঁটে কাতর ক্ষীণ হাসি লেগে থাকে।’
উল্লিখিত বোতামের সঙ্গে প্রিয় মানুষের স্পর্শ কিংবা শৈশবের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ফলে সেই বোতাম হয়ে উঠেছে বিশেষ কিছু। তবে সন্দেহ নেই, বোতাম নিজ গুণেই বিশেষ বস্তু। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। পরিধেয় বস্ত্র গায়ের সঙ্গে আটকে রাখতে এর জুড়ি নেই। কেবল বিচ্ছিন্ন বস্ত্রখণ্ডের সংযোগ স্থাপন বা কোনো অংশ ঢেকে রাখার জন্যই নয়, হালে সৌন্দর্যবর্ধনের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয় বোতাম। ব্যাগ, ওয়ালেট, ছবির ফ্রেম, গয়না, ল্যাম্পশেড এমনকি জুতাতেও আজকাল আকছার এর ব্যবহার দেখা যায়। প্রাচীনকালে অলঙ্কার হিসেবে বোতাম ব্যবহার করা হতো–এমন তথ্যও পাওয়া যায়। ছোট, বড়, গোল, ত্রিকোনা বা চৌকোনা—নানা আকার ও ধরনের বোতাম রয়েছে। কাপড়, প্রাণীর শিং, দাঁত, হাড়, শামুক-ঝিনুকের খোলস, নারকেলের শক্ত খোসা থেকে শুরু করে কাঠ, রাবার প্রভৃতি দিয়ে বানানো হয় বোতাম। অভিজাত ও শৌখিন মানুষ সোনাসহ আরও দামি পদার্থ দিয়ে তৈরি বোতামও ব্যবহার করেন।
আজ ১৬ নভেম্বর, বোতাম দিবস। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল বাটন সোসাইটি’র উদ্যোগে দিনটির প্রচলন হয়। অনেকেরই প্রিয় শখ বোতাম সংগ্রহ। তাঁদের প্রতি সম্মান জানাতেই প্রতিষ্ঠানটি এই দিবসের সূচনা করে।
ডেজ অব দ্য ইয়ার অবলম্বনে