আইইএলটিএসের রিডিংয়ে ভালো করার ৪ কৌশল

ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক পদ্ধতি ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস)। ভিনদেশে উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির আবেদনের পূর্বশর্ত হিসেবে আইইএলটিএস স্কোরের কথা উল্লেখ থাকে। আইইএলটিএসের দুটি পরীক্ষাপদ্ধতির চারটি অংশ—লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং ও স্পিকিং। এর মধ্যে রিডিং অংশে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হন, সেগুলোই জানাচ্ছেন আইইএলটিএস প্রশিক্ষক সিরাজুম মুনির

ঢাকার ৫ ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অফিসের মূল প্রবেশপথ
ছবি: সংগৃহীত

১. বড় প্যাসেজ

একাডেমিক আইইএলটিএসের রিডিং পরীক্ষায় তিনটি প্যাসেজ দেওয়া হয়। প্যাসেজগুলো প্রায় দুই থেকে চার পৃষ্ঠা দীর্ঘ হয়। ২০ মিনিটের মধ্যে একেকটি প্যাসেজের ১৩ থেকে ১৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এত কম সময়ের মধ্যে বড় প্যাসেজ থেকে এতগুলো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্যই কঠিন কাজ।

এ ক্ষেত্রে কিছু কৌশল মেনে প্যাসেজ পড়তে হবে। যে প্যাসেজটি সমাধান করবেন, প্রথমেই দেখে নিন প্যাসেজটির টাইটেল ও সাব-টাইটেল আছে কি না, যদি থাকে তাহলে আপনার প্রথম কাজ হলো, সেগুলো পড়ে ফেলা। এতে শুরুতেই আপনি জেনে যাবেন প্যাসেজটিতে কী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

আর প্রথমেই প্যাসেজ পড়া শুরু করা উচিত নয়। কারণ, প্যাসেজের সব বাক্যে উত্তর থাকে না। এমনও হয় যে একটি প্যাসেজের তিন ভাগের এক ভাগে কোনো উত্তরই থাকে না। তাই শুরুতেই প্যাসেজ পড়া শুরু করলে অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু পড়ে ফেলবেন, যা আপনার কোনো কাজেই আসবে না। মোটের ওপর এভাবে পড়লে সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে পারবেন না।

তাই টাইটেল ও সাব–টাইটেল পড়ার পর আপনার দ্বিতীয় কাজ হবে সরাসরি প্রশ্নে চলে যাওয়া। প্রশ্ন পড়ে তারপর প্যাসেজের মূল অংশে যাবেন। যে জায়গায় ‘আনসার লোকেশন’ বা উত্তর পাবেন, সেই বাক্য অথবা আশপাশের বাক্যগুলো পড়ে তারপর সঠিক উত্তরের সিদ্ধান্ত নেবেন। এভাবে একটা একটা করে প্রশ্ন পড়ে তারপর প্যাসেজ পড়লে দ্রুত উত্তর করা যায় আর অপ্রয়োজনীয় অংশ পড়া থেকে বিরত থাকা যায়।

২. বড় বড় বাক্য বোঝার উপায়

আইইএলটিএসের প্যাসেজগুলোয় অনেক বড় বড় বাক্য থাকে। এই বাক্যগুলোর অর্থ বের করা এবং সেই অর্থ মনে রেখে সঠিকভাবে উত্তর দেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মাঝেমধ্যে বাক্যগুলো এত বড় থাকে যে শিক্ষার্থীরা বাক্যের প্রথম অংশ বুঝলেও মাঝের অংশ বোঝে না। আবার মাঝের অংশ বুঝলে শেষের অংশ বোঝে না। ফলে একটা জগাখিচুড়ি অবস্থার মধ্যে পড়ে যায়।

এ সমস্যা সমাধানের একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে বড় বাক্যগুলোকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে পড়া। অর্থাৎ বড় কোনো বাক্য পড়ার সময় সম্পূর্ণটা একসঙ্গে পড়বেন না। তিন থেকে পাঁচটি শব্দ একসঙ্গে নিয়ে একেকটি গ্রুপ করে পড়বেন। প্রথম দিকে এই কৌশল অনুসরণ করার সময় তিন থেকে পাঁচটি শব্দের শেষে স্ল্যাশ (/) ব্যবহার করে পড়লে ভালো ফল পাবেন।

৩. অপরিচিত কঠিন শব্দ

আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীদের আরেকটা ভয়ের কারণ হলো ‘ভোকাবুলারি’। প্যাসেজ পড়তে গেলে অপরিচিত অনেক কঠিন শব্দের মুখোমুখি হতেই হবে। শব্দভান্ডার বাড়াতে অনেকেই বিভিন্ন ভোকাবুলারির বই কিংবা ডিকশনারি পড়া শুরু করেন। তবে এসব করে খুব একটা লাভ হয় না। প্রথমত, এত শব্দ পড়ে মনে রাখতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত, এসব ভোকাবুলারি আপনি প্যাসেজে পাবেন, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।

আইইএলটিএসের রিডিং শব্দভান্ডার বৃদ্ধি করার দুটি কার্যকর উপায় আছে। প্রথমটি হলো, অনুমান। আইইএলটিএস পরীক্ষার প্যাসেজের শব্দের আক্ষরিক অর্থ খুব একটা প্রয়োজন হয় না। মূলত কনটেক্সটচুয়াল মিনিং বা প্রাসঙ্গিক অর্থের প্রয়োজন হয়। এ জন্য অর্থ অনুমান করাটা খুব কাজে দেয়। কীভাবে করবেন? খুব সহজ।

ধরুন, একটি বাক্যে ১০টি শব্দ আছে। এর মধ্যে আটটি শব্দ আপনার পরিচিত আর দুটি অপরিচিত। এখন পরিচিত শব্দগুলোর সাহায্যে অপরিচিত শব্দগুলোর অর্থ কী হতে পারে, সেটা বাক্যের প্রসঙ্গ থেকে অনুমান করুন। এভাবেই আপনি আইইএলটিএসের প্যাসেজের শব্দার্থ সহজেই বের করতে পারবেন।

দ্বিতীয় উপায় হলো, কেমব্রিজের আইইএলটিএসের যে বইগুলো আছে, সেখান থেকে বেশি বেশি প্যাসেজ পড়া। প্যাসেজ পড়ার সময় যে শব্দের অর্থ পারবেন না, সে শব্দটি আলাদাভাবে নোট করে রাখবেন এবং ডিকশনারি থেকে অর্থ জেনে নিয়ে সেই শব্দের পাশে লিখে রাখবেন। মাঝেমধ্যে রিভিশন দেবেন। এই শব্দগুলোই আপনি বিভিন্ন প্যাসেজে কমন পাবেন।

৪. উত্তর সন্ধান

আইইএলটিএস রিডিং সেকশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো, বড় প্যাসেজের মধ্যে উত্তর খুঁজে বের করা। প্রশ্নের উত্তর প্যাসেজের যে জায়গায় পাওয়া যায়, সেটাই হলো আনসার লোকেশন। যাঁরা আইইএলটিএস পরীক্ষায় অংশ নেন, তাঁরা জানেন প্যাসেজের মধ্যে এই আনসার লোকেশন খুঁজে বের করা কতটা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ!

এ ক্ষেত্রে আমরা দুটি কৌশল অনুসরণ করতে পারি। প্রথমত, প্রশ্নে এমন এমন শব্দ পাবেন, যেগুলোর কোনো সমার্থক শব্দ হয় না। যেমন মানুষের নাম, জায়গা, রোগ, প্রযুক্তির নাম ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে কৌশল হলো, প্রশ্নের এই শব্দটিকে আন্ডারলাইন করবেন এবং কলম বা পেনসিল দিয়ে প্যাসেজের মধ্যে শব্দটিকে দ্রুত খুঁজে বের করবেন।

দ্বিতীয়ত, প্রশ্নে এমন শব্দ পাবেন, যেটি পরিবর্তনশীল অর্থাৎ আগের মতো হুবহু প্যাসেজে পাবেন না। এ ক্ষেত্রে টেকনিক হলো, উক্ত শব্দের সমার্থক শব্দ প্যাসেজের মধ্যে খুঁজে বের করা। খুঁজে পাওয়ার পর শব্দটির নিচে দাগ দিতে হবে এবং পড়ে সঠিক উত্তর দিতে হবে।

পরিশেষে বলব, আইইএলটিএস রিডিং সেকশন কঠিন মনে হলেও এ চারটি সমস্যার সঠিক সমাধান, নিয়মিত চর্চা ও সঠিক গাইডলাইনে কয়েক মাস লেগে থাকলেই রিডিং মডিউলে ভালো করা সম্ভব।