সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ছবি তুলতে আসা জাপানি এই আলোকচিত্রীর সন্ধান পেয়েছি যেভাবে

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ছবি তুলতে ১৯৭২ সালে ঢাকায় আসেন তাইজো ইচিনোসে। ২৫ বছর বয়সী এই জাপানি আলোকচিত্রী পথে পথে ঘুরে ধারণ করেন দুই শতাধিক আলোকচিত্র। কোনোটা রঙিন, কোনোটা সাদাকালো। পরের বছরই কম্বোডিয়ায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তাইজো। তাঁর তোলা সেসব ছবি আড়ালেই থেকে যায়। সম্প্রতি আলোকচিত্রগুলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কাছে হস্তান্তর করে তাইজো পরিবার। ২০ জুলাই থেকে জাদুঘরের গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে সেসব ছবি।

স্বাধীন বাংলাদেশে জনতার উল্লাস, ১৯৭২
ছবি: তাইজো ইচিনোসে

২০০৩ সালে তাইজো ইচিনোসেকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র হয়েছিল। ফরেন করেসপনডেন্টস ক্লাব অব জাপানের উদ্যোগে ছবিটির একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হলে ক্লাবের সদস্য হিসেবে আমিও তাতে হাজির ছিলাম। এর ঠিক কিছুদিন আগেই অবশ্য জাপানি আলোকচিত্রী নাওয়াকি উসুইয়ের মুখে তাইজোর কথা জেনেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ছবি তুলেছিলেন উসুই। ২০০৩ সালে তাঁকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সেবার টোকিও ফিরে আমাকে তাইজোর কথা বলেছিলেন নাওয়াকি।

উদ্ধার করা অস্ত্র
ছবি: তাইজো ইচিনোসে

চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনীতে তাইজোর মা এসেছিলেন। তখন তাঁর বেশ বয়স। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন। তাইজোর মায়ের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন নাওয়াকি উসুই। আমাকে দেখে তাইজোর মা খুব খুশি হয়ে বললেন, ‘আমার ছেলে তোমাদের দেশেও গিয়েছিল এবং অনেক ছবি তুলেছে।’

আরও পড়ুন
জাপানি আলোকচিত্রী তাইজো ইচিনোসে
ছবি: সংগৃহীত

তারপর তাইজোর মা আমাকে একটি বই দেখালেন, যেখানে বাংলাদেশের কিছু ছবি ছিল। কথায় কথায় তিনি এও জানালেন, তাঁর ছেলের তোলা বাংলাদেশের আরও অনেক ছবি আছে।

তাইজোর মাকে আমি কথা দিই, তাঁর ছেলের তোলা আলোকচিত্র নিয়ে বাংলাদেশে একটি প্রদর্শনী করব।

কিন্তু বছর দেড়েকের মধ্যে তাইজোর মা মারা যান। তারপর কাজটি থেমে থাকে অনেক দিন।

২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় সে দেশের চারজন বিশিষ্ট নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে একজন তাইজো ইচিনোসে। তাইজোর পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁর ভাগনি কিওকো নাসাফুচি। টোকিওর আকাসাকা প্যালেসের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে আলাপের সময় কথায় কথায় বলি, ‘আমি তো আপনার নানিকে বাংলাদেশে তাইজোর একটি প্রদর্শনী করব বলে কথা দিয়েছিলাম।’

বধ্যভূমিতে নরকঙ্কাল
ছবি: তাইজো ইচিনোসে

এরপর কিওকো নাসাফুচি যা বলল, শুনে আমি অবাক, ‘আপনি যখন নানির সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন আমি পাশেই হুইলচেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’

মনে পড়ল তাইজোর মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর হুইলচেয়ারের পাশেই এক বালিকা ছিল। প্রদর্শনীর কথা শুনে নাগাফুচি খুব খুশি হলেন। নাগাফুচিই তাঁর প্রয়াত মামার সবকিছু দেখাশোনা করেন। তাঁর ও ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব জাপানের আন্তরিক সহযোগিতায় অবশেষে তাইজো ইচিনোসের আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি করতে পেরে আমি দারুণ আনন্দিত।