পড়ি যুক্তরাষ্ট্রে, বিষয় চারুকলা
ছোটবেলা থেকে নাচ, গান, ছবি আঁকা—সবই শিখেছি। কিন্তু আঁকাআঁকির ওপর ঝোঁকটা ছিল সবচেয়ে বেশি। মা-বাবার উৎসাহ পেয়ে বিপুল উদ্যমে ভর্তি হয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। আর এখন এমএফএ (মাস্টার অব ফাইন আর্ট) পড়ছি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অ্যালাবামাতে। ২০২২ সালের ফল সেমিস্টারে এই বিভাগে ভর্তি হওয়া আমিই একমাত্র আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। সৃজনশীল প্রযুক্তি ও এর চর্চা আমার গবেষণার বিষয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের কারুশিল্প বিভাগ থেকে স্নাতকে আমি প্রথম হয়েছিলাম। স্নাতকোত্তরে বিষয় ছিল স্টুডিও আর্ট। পড়ালেখার শুরুতেই আমি একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। এসব অর্জন, অভিজ্ঞতাই যুক্তরাষ্ট্রে বৃত্তি ও অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পেতে সাহায্য করছে। দেশে আমি দুটি ফ্যাশন ব্র্যান্ড লা রিভ ও দেশালের ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছি। অংশ নিয়েছি ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া আর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত চিত্র প্রদর্শনীতে। ভর্তির সময় স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি) লেখার ক্ষেত্রে এসব অভিজ্ঞতা আমাকে এগিয়ে রেখেছে।
সাধারণত বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়ার জন্যই মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেয়। সামাজিক বিজ্ঞান, চারুকলার মতো বিষয়ে পড়ার চল কিছুটা কম। কারণ, ওয়েভার (ছাড়া) পাওয়া বেশ কঠিন। আমি সৌভাগ্যবান, ওয়েভারসহ ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অ্যালাবামাতে তিন বছর মেয়াদি কোর্স করার সুযোগ পেয়েছি। দেশের বাইরে এমএফএ পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়। প্রথমত, আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর থাকতে হয়। ন্যূনতম স্কোর থাকলে আবেদন করতে পারবেন, কিন্তু বেশি স্কোর নিয়ে এগোনো ভালো। আবেদনের সময় সুপারিশপত্র, আগ্রহপত্র (স্টেটমেন্ট অব পারপাস), ছবি প্রদর্শনীর অভিজ্ঞতা, আর্টওয়ার্কের ছবি অথবা পোর্টফোলিও উপস্থাপন করতে হয়।
ঢাকার এডুকেশন ইউএসএ-আমেরিকান সেন্টার ও ইএমকে সেন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও বৃত্তির খোঁজ পেয়ে যাবেন। আমি অবশ্য নিজে বাসায় বসেই গুগলে খোঁজ করেছিলাম। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা তালিকা তৈরি করি, যেসব জায়গায় এমএফএ পড়ার সুযোগ আছে। সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা নিয়ে পড়তে জিআরই স্কোর প্রয়োজন হয় না।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের আমি ই–মেইল করতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু তেমন সাড়া পাইনি। খোঁজ নিয়ে বুঝতে পারি, আসলে অধিকাংশ এমএফএতে ওয়েভার সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে দেওয়া হয়। ১২-১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে ৩টি থেকে ভর্তির প্রস্তাব পেয়েছিলাম। বলে রাখি, এগুলোর মধ্যে শুধু সাউথ অ্যালাবামাতেই কোনো টিউশন ওয়েভার (ছাড়) পাইনি। বাকিগুলোতে আংশিক আর্থিক প্রণোদনা পেয়েছিলাম, তা-ও বেশ কম। চাকরি করার সুবাদে কিছু টাকা আমার জমানো ছিল। সেটুকু নিয়েই সাহস করে ভর্তি হয়ে যাই। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর অবশ্য ওয়েভার নিয়েই পড়ার সুযোগ পাই। নিজের বিভাগ থেকে অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ না পেলেও অন্য বিভাগে আবেদন করা যায়।
আমি থাকি মবিল সিটিতে। জায়গাটা খুব সুন্দর। গোছানো, ছিমছাম। আবহাওয়া একদম আমাদের দেশের মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও বেশ সহানুভূতিশীল। খুব সাহায্য করেন। এখানে সবাই পড়াশোনায় খুব উৎসাহ দেয়।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য শুরু করাটা জরুরি। আগেই ভয় পেয়ে গেলে কিন্তু হবে না! আমার এগিয়ে আসার পথটা খুব কঠিন ছিল সত্যি, কিন্তু আমি কখনো ধৈর্য হারাইনি। চেষ্টা করে গিয়েছি। আমার লক্ষ্য যা-ই হোক, স্বপ্ন পূরণ হোক বা না হোক, আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করিনি—এই আফসোস যেন কখনো না থাকে।