এই ১০ দক্ষতা আপনাকে জীবনে এগিয়ে রাখবে
দক্ষতা সাধারণভাবে দুই ধরনের। কারিগরি ও মানবিক। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার মাধ্যমে কারিগরি দক্ষতার নানা বিষয় ও প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে পারি। এর বাইরে বেশ কিছু দক্ষতা আছে, যা নিজে থেকেই আয়ত্ত করতে হয়। নিচের এই ১০ দক্ষতা আপনার আশপাশের অন্যদের চেয়ে আপনাকে এগিয়ে রাখবে। জেনে নেওয়া যাক কী সেগুলো।
১. গুছিয়ে কথা বলা
সুন্দর করে কথা বলা একটা শিল্প। নেতৃত্বগুণের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য সুন্দর করে কথা বলতে পারা। যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে প্রকাশ করুন।
২. ধৈর্য, ধৈর্য, ধৈর্য
বাংলায় একটা বাগধারা আছে, ‘সবুরে মেওয়া ফলে’। এর মানে হলো, অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়। ধৈর্য ধরার কোনো বিকল্প নেই। অপেক্ষা করুন। হাল ছাড়বেন না। ভেঙে পড়বেন না। যাঁদের ধৈর্যশক্তি নেই, তাঁরা সামান্য বিপদেও ভেঙে পড়েন।
৩. অন্যের কথা মন দিয়ে শুনুন
কথা মন দিয়ে শোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মানবিক গুণ। যে অন্যের কথা মন দিয়ে শুনতে পারেন, তাঁর বন্ধুর অভাব হয় না। সমানুভূতিচর্চার জন্যও অন্যের কথা মন দিয়ে শোনার কোনো বিকল্প নেই।
৪. তৃতীয় একটি ভাষা জানা
আপনার আশপাশের কয়জন বাংলা বা ইংরেজি বাদে তৃতীয় একটি ভাষায় বলতে, লিখতে ও পড়তে জানে? কেবল তৃতীয় একটি ভাষা জানাই আপনাকে আশপাশের ৮০ শতাংশ মানুষের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। নতুন একটি ভাষা মানেই তো নতুন একটা জানালা খুলে যাওয়া, নতুন এক সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়, পৃথিবীটাকে দেখার ভিন্ন একটা ‘চোখ’ অর্জন।
যাঁরা ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানি, চীন, জাপান কিংবা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে চান, তাঁদের জন্য নতুন আরেকটি ভাষাশিক্ষা খুবই কাজে দেয়। অনেক সময় মাস্টার্স বা পিএইচডি করার ক্ষেত্রে স্থানীয় ভাষা জানা থাকলে শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পান।
৫. সময়জ্ঞান
এটি খুবই মৌলিক একটি দক্ষতা। তবু সময় ব্যবস্থাপনার প্রশ্নে দেখা যাবে, ১০ জনের ৭ জনই ফেল করে গেছেন। সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো একটা বড় গুণ। মনে রাখবেন, ‘সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়’।
৬. আত্মবিশ্বাস হোক আপনার সঙ্গী
যেকোনো কাজে আত্মবিশ্বাস থাকা জরুরি। আত্মবিশ্বাসী হলে সব কাজেই জয় আসবে। হারতে ভয় পাবেন না। কেননা, পরাজয়কে বরণ করার মাধ্যমেই একজন মানুষ প্রকৃত জয়ের দিকে এগিয়ে যায়। জীবন গড়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আত্মবিশ্বাস থাকতেই হবে। বলিউড ও হলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া নারীদের উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ আত্মবিশ্বাস আপনার সঙ্গে আছে, আপনি আকর্ষণীয়। আপনার আর কোনো দামি পোশাক, উঁচু জুতা, মেকআপ বা অলংকারের দরকার নেই। একজন আত্মবিশ্বাসী নারীর জন্য এসব বাহুল্য।’
৭. অভিযোগ নয়, অজুহাত নয়
বাঙালি নাকি ভীষণভাবে ‘কমপ্লেন কালচার’-এ বিশ্বাসী। ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানো আর যেকোনো কাজে তৃতীয় হাত, অর্থাৎ অজুহাতের ব্যবহার করতে অনেকই কার্পণ্য করেন না। কিন্তু ব্যক্তিজীবন বা পেশাজীবন যা-ই হোক না কেন, যাঁরা অভিযোগ না করেন, অজুহাত না দেখিয়ে নিজেই একটা উপায় বের করে এগিয়ে যান, তাঁরাই শেষমেশ পান চূড়ান্ত সাফল্যের স্বাদ।
৮. সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক থাকা
প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে বিশ্ব। প্রযুক্তি সেই বদলে যাওয়ার গতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েক শ গুণ। ফলে আপনাকে সময়ের সঙ্গী হতে হবে। সময়ের দাবিকে আমলে নিন। তাহলেই আপনি সব সময় প্রাসঙ্গিক থাকতে পারবেন। এই যেমন অমিতাভ বচ্চন কথা বলেন জেন-জিদের ভাষায়। তিনি তাঁর নাতনি বন্য নভেলি নন্দাকে ‘নিয়োগ দিয়ে’ এই ভাষা শিখেছেন।
৯. যোগাযোগের দক্ষতা
যাঁর যোগাযোগের দক্ষতা যত ভালো, জীবনযুদ্ধে তাঁর টিকে যাওয়া, জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি। আপনার সঙ্গে অনেক মানুষের চেনাজানা, কিন্তু প্রয়োজনে আপনি তাঁদের কাজে লাগাতে পারলেন না, তাহলে তো জীবনের আট আনাই (অর্ধেকটাই) বৃথা!
১০. ধীরে এগোনো
জাপানি একটা প্রবাদ আছে। যাঁর বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়, ‘আপনি যদি দ্রুত পৌঁছাতে চান, তাহলে ধীরে চলুন।’ এর মানে হলো, আপনি যত হুলুস্থুলভাবে কাজ করতে যাবেন, ততই ভুল হবে। তাড়াহুড়োয় আপনি পা দেবেন ভুলের দুষ্টচক্রে। ফলে কেবলই পিছিয়ে পড়বেন। তাই তাড়াহুড়ো নয়। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো ভেবেচিন্তে নিন। ‘মাল্টিটাস্কিং’ নয়, একই সময়ে কেবল একটি কাজ করুন। নিজের মেধা, শ্রম ওই একটি কাজেই লাগান। সেটা ভালোভাবে শেষ করে পরের কাজটি ধরুন। সময় দিন। ফল আসবেই।
সূত্র: মাইন্ড টুলস ও এডুকেশন নেক্সট অবলম্বনে