‘রাফসান দ্য ছোটভাই’কে নিয়ে আয়মান সাদিকের লেখা
প্রতি বাংলা নববর্ষের মতো ১৪৩১ সনেও দেশের ক্রীড়া, চলচ্চিত্র, ডিজিটাল মঞ্চ, ব্যবসা, গবেষণাসহ নানা ক্ষেত্রের তরুণ প্রতিভাবানদের নিয়ে হাজির হয়েছে প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ‘ছুটির দিনে’। একঝাঁক উজ্জ্বল তরুণদের নিয়ে আজ ছাপা হয়েছে দুই পাতার এই বিশেষ আয়োজন। যেখানে কনটেন্ট ক্রিয়েটর ইফতেখার রাফসানকে নিয়ে লিখেছেন টেন মিনিট স্কুলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আয়মান সাদিক
ইফতেখার রাফসানের কনটেন্ট দেখার প্রথম অনুভূতিটা আমার আজও মনে আছে। দেখি ভিডিওতে একটা ছেলে প্রচুর এনার্জি নিয়ে অনর্গল কথা বলছে। ওর কথা বলার ধরন, শরীরী ভাষা দেখে মনে হলো ‘জেন জি’-র একজন ‘কুল কিড’। কিন্তু সামনাসামনি যেদিন দেখা হলো, রাফসান সম্পর্কে সেই ধারণাটা বদলে গেল। কারণ, ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা রাফসান ভিডিওতে অনেক শক্তি খরচ করে কথা বললেও বাস্তবে ভীষণ শান্ত প্রকৃতির মানুষ।
সামনাসামনি রাফসানের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল একটি রেস্তোরাঁয়। আমি চিন্তাও করিনি দেখা হলে সে নিজে থেকে আমার সঙ্গে কথা বলতে আসবে। আমার ভুল ভেঙে দিয়ে রাফসান কাছে এসে বলেছিল, ‘ভাইয়া, বিগ ফ্যান।’ ওর মধ্যে শিশুসুলভ অভিব্যক্তি খেয়াল করলাম। আর মনে হতে থাকল ‘রাফসান দ্য ছোটভাই’ নামের এই জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরের সঙ্গে আরও আগেই হয়তো আমার দেখা হয়েছে। এটা মনে করার কারণ আমাদের দুজনেরই বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ছিলেন।
অনেকের মতো আমিও ভাবতাম, স্পনসরশিপ থেকে হয়তো অনেক টাকাকড়ি পায় রাফসান। কিন্তু জানাশোনা বাড়ার পর জানলাম, রাফসান আসলে নিজের ভিডিওর স্পনসর নিজেই করে। সে ছাত্রছাত্রী পড়াত, সেখান থেকে যা আয় করত, সেটা খরচ করে ফুড ভ্লগিং করত।
পরে বেশ কয়েকটা প্রকল্পে রাফসানের সঙ্গে আমার কাজ করা হয়েছে। এ সময় ওর আরেকটা খুবই দুর্দান্ত দিক খেয়াল করেছি—রাফসান খুবই বিশ্লেষণধর্মী মানুষ। আমার আশপাশে তার বয়সের খুব কম মানুষকেই এ রকম দেখেছি। কনটেন্ট–সম্পর্কিত প্রতিটা কাজ সে খুব ভেবেচিন্তে, গবেষণা করে তারপর শুরু করে। মেন্টর হিসেবেও রাফসান খুব দারুণ। তার একটা দল আছে, যারা একসঙ্গে মিলে গবেষণা আর বিশ্লেষণ করে। তার দলের সদস্যদের মানসিকতাও একদম রাফসানের মতো। নিজের টিমকে একদম নিজের মতো করে চিন্তা করে কাজ করানোর মানসিকতাও তাদের সফলভাবে শেখাতে পেরেছে।
একই সঙ্গে অনেক কাজ নিখুঁতভাবে করতে পারে রাফসান। নানা প্রকল্পে তার সঙ্গে কাজ করার সময় দেখেছি, সারা দিন তার কর্মশক্তির কোনো হেরফের হতো না। কখনো প্রযোজক হয়ে যাচ্ছে, কখনো পরিচালক হয়ে নিজেই শুটের নির্দেশনা দিচ্ছে, এরপর আবার পূর্ণশক্তিতে ভিডিওতে কথা বলে যাচ্ছে! এরপর আবার যারা আমরা অতিথি ছিলাম, তাদেরও খেয়াল রাখছে। এত কিছুর পরও ওর মধ্যে কোনো ক্লান্তি নেই। একই সময়ে একাধিক কাজ করা মানুষদের উত্তম উদাহরণ ছেলেটা!
রাফসানের স্বপ্নটা অনেক বড়। সে শুধু ফুড ভ্লগিংই করতে চায় না, নিজেকে একজন এন্টারটেইনার হিসেবেও পরিচিত করাতে চায়। আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত হতে চায়। কিছুদিন আগেই এই কথাগুলো বলেছিল। আর কয়েক মাস পরই তার ইন্টারন্যাশনাল ভ্লগগুলো দেখলাম। এত গর্ব হচ্ছিল! স্বপ্ন দেখা আর স্বপ্ন সত্যি করার মধ্যবর্তী ধাপে অনেকের স্বপ্নই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু রাফসান স্বপ্নগুলো হারিয়ে যেতে দেয় না। একটা আইডিয়াকেও সে ঝরে পড়তে দেয় না। জীবনে বড় হতে গেলে এই মানসিক দৃঢ়তা দরকার অনেক বেশি।
প্রতিটা পদক্ষেপ পরিকল্পনা করে নেয় রাফসান। তার প্রতিটি পরিকল্পনা খুব ভেবেচিন্তে, কৌশলগতভাবে নেওয়া। কোনটা, কোথায়, কীভাবে, কেন করবে, সব তার নখদর্পণে থাকে। নিজের ব্র্যান্ড, নিজের কোম্পানি—সবকিছুই সে সামনের কয়েক বছরে কীভাবে কী করবে পরিকল্পনা করে রেখেছে। গত ডিসেম্বরে রাফসান নিজের পানীয় ব্র্যান্ড ‘ব্লু’ লঞ্চ করে। এত গুছিয়ে পরিকল্পনা করে সব করেছিল বলেই এত কম সময়ে পণ্যটি এত সাড়া ফেলেছে।
রাফসানের ফ্যানবেজ বা ভক্তকুলও বড়ই বিচিত্র! এই মানুষদের মধ্যে ক্লাস ফাইভের ছোট্ট বাচ্চা যেমন আছে, তেমন আমার বিল্ডিংয়ের মধ্যবয়স্ক খালাম্মাও আছেন। সত্যিই অবাক করার মতো ব্যাপার।
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া একটি ছেলে নিজের ব্র্যান্ড, কোম্পানির ব্র্যান্ড এত বড় করে ফেলল। খুব শিগগির আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশকে উপস্থাপন করবে। আমাদের এই ছোট ভাইকে নিয়ে বেশ গর্ব অনুভব করি। আশা করি, তার প্রতিটা স্বপ্ন সে পূরণ করবে। রাফসানের প্রতিটি আইডিয়া নিয়ে অনেক দূর যাবে—আমাদের ছোট ভাই রাফসানকে নিয়ে পুরো দেশের সঙ্গে এই স্বপ্ন দেখি আমিও।