স্ত্রীর কাছে ডিভোর্স চাইলে দেয় না, আবার আমার সঙ্গে সংসারও করতে চায় না
পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার
প্রশ্ন: আমি বিয়ে করেছি ১৯৮৬ সালে। আমার বয়স ৬২ বছর, স্ত্রীর ৫৩ বছর। আমার স্বল্প আয়ে কোনোরকমে সংসার চলে। সংসারের বাইরের খরচ মেটাতে কষ্ট হয়। আমার স্ত্রী তার কোটিপতি ছোট বোনের নিকট থেকে যাকাত ও ফেতরা এনে কিছু খরচ মেটায়। স্ত্রী পরিচিত সবার কাছে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যাচার করে। আমাকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য রাখে, যা আমার জন্য খুবই লজ্জার। প্রতিবাদ করলে অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে আমি তার কোটিপতি বোনকে দাওয়াত দিয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি আর সব বিষয় তাকে জানাই। সব শুনে তার বোন আমাকে তালাক দিতে বলে যায়। তালাক দেওয়ার পর বোনের সব খরচ সে বহন করবে, এমন আশ্বাসও দিয়ে যায়। বোনকে তার বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। আমার স্ত্রী তার বোনের প্ররোচনায় আমার সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক থেকে বিরত আছে, এমনকি কথাও বলে না। আজ চার থেকে পাঁচ মাস আমার স্ত্রীর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ। ডিভোর্স চাইলে দেয় না, আবার আমার সঙ্গে সংসারও করতে চায় না। এ অবস্থায় আমি কী করতে পারি?
এম এ রউফ
উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের বিষয়টি পারিবারিক আদালতের এখতিয়ারে দেওয়া রয়েছে এবং আইনানুযায়ী আদালত ডিক্রি জারি করতে পারেন। বাংলাদেশে প্রচলিত ‘পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫’-র বলে দাম্পত্য অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আপনার স্ত্রী যেহেতু কোনো কারণ ছাড়া আপনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না, তাই দাম্পত্য অধিকার দাবি করে আপনি পারিবারিক আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন। কোনো আইনসংগত কারণ ছাড়া আপনার স্ত্রী যেহেতু আপনার সঙ্গে একত্রে বসবাস বন্ধ করেছেন, সে ক্ষেত্রে স্বামী হিসেবে আপনি দাম্পত্য অধিকার চাইতে পারেন এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।
দাম্পত্য অধিকার উদ্ধারের বিষয়টি সাধারণত আদালতের বিবেচনার ব্যাপার। উভয়ের মধ্যে বিয়ে কার্যকর আছে কি না, আদালত দেখতে চাইবেন। এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার স্ত্রী কোনো কারণ ছাড়াই ঘরে ফিরতে চান না। তবে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে তালাক-প্রক্রিয়া চলাকালে তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করা না হলে এ মামলা চলে না। এ মামলায় আদালত বিবেচনা করেন যে পরস্পরের দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে কি না। তবে তাঁকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জোর করার কোনো বিধান নেই। আর স্বামী-স্ত্রীর মত থাকা সত্ত্বেও যদি শ্বশুরবাড়ির লোকজন বা তৃতীয় পক্ষ একসঙ্গে সংসার করতে না দেয়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতের আশ্রয় নেওয়া যায়।
তবে আপনাদের সম্পর্ক যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে একত্রে বসবাস করা উভয়ের পক্ষে বা যেকোনো এক পক্ষের পক্ষে সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে আপনারা বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন। তিনি না দিলে আপনিও উদ্যোগ নিতে পারেন। এ জন্য একজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তবে আমার মনে হয় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করুন। নিজে না পারলে অন্য কোনো শুভাকাঙ্ক্ষীর মধ্যস্থতায় বিষয়টি আগে মীমাংসা করার চেষ্টা করা উচিত। কারণ, আমি ধরে নিচ্ছি আপনাদের অনেক বছরের সংসার এবং এই বয়সে এসে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না–ও হতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধানে আসতে পারলে সেটি সবার জন্য কল্যাণকর হবে।
পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA