সোনার মানুষ কাকে বলে? কীভাবে চিনবেন তাঁদের
ইংরেজিতে ‘গোল্ডেন হার্ট’, বাংলায় যেটা ‘স্বর্ণহৃদয়’। আরও সহজ করে ভাবলে একেই বলে ‘সোনার মানুষ’। সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’য় ফেলুদা তোপসেকে কী বলে, মনে আছে তো? সোনার কেল্লা খুঁজতে গিয়ে তোপসে জিজ্ঞেস করছে, ‘আচ্ছা, সোনার কেল্লা কি সত্যিই আছে?’ ফেলুদা বলছে, ‘এ রকম কেল্লা ভূ–ভারতে আছে বলে তো শুনিনি।’ তোপসের প্রশ্ন, ‘তাহলে?’ ফেলুদার জবাব, ‘তাহলে একটু মাথা খাটাতে হবে। সোনার ফসল মানে কি সোনা দিয়ে তৈরি ফসল? সোনার ছেলে, সোনার বাংলা—এসব কি সোনা দিয়ে তৈরি?’ ঠিক একইভাবে স্বর্ণহৃদয় বা সোনার মানুষ মানে তো সোনা দিয়ে তৈরি নয়। তাহলে? কী করলে বা কোন কোন গুণ থাকলে মানুষ হয়ে ওঠে স্বর্ণহৃদয়ের অধিকারী? তা জানার আগে এটা বলে রাখি, এমন মানুষ আশপাশে থাকলে জীবনের অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হয়ে যায়। তাই চলুন জেনে নিই আটটি গুণের কথা, যা দেখে বুঝে নেওয়া যায় কে সোনার মানুষ...
১. উদারতা
বিভিন্ন মুহূর্তে বা কাজের মাধ্যমেই এ ধরনের মানুষের উদারচিত্তের প্রকাশ ঘটে। অনেক সময় আমাদের দৃষ্টিতে নগণ্য মনে হলেও সহানুভূতিশীল কিছু কাজের মাধ্যমেও তাঁরা অন্যদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। ভীষণ মন খারাপের সময় একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে, ভীষণ দরকারি মুহূর্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে কিংবা হতাশায় ভেঙে পড়ার মুহূর্তে উৎসাহ জুগিয়ে পাশে থাকেন তাঁরা। তাঁদের এই উদারতায় কোনো ভেজাল থাকে না।
২. সহানুভূতিশীলতা
এ ধরনের মানুষ অত্যন্ত সহানুভূতিশীল হন। তাঁদের বুদ্ধিমত্তাও হয় প্রখর। বুদ্ধিমত্তা হলো নিজের এবং আশপাশের মানুষের অনুভূতিকে সহজেই অনুধাবন করতে পারা। স্বর্ণহৃদয়ের মানুষেরা অন্যদের বেদনা, অনুভূতি ও সংগ্রামের সঙ্গে সহজে একাত্ম হতে পারেন। তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্যের বিপদের সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
৩. নিঃস্বার্থতা
এ ধরনের মানুষ কেবল নিজের কথা ভাবেন না, প্রয়োজনে অন্যকে অগ্রাধিকার দেন। অন্যের প্রয়োজন ও ভালোকে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা অপরিমেয় নিঃস্বার্থতার পরিচয় দিতেও কুণ্ঠা বোধ করেন না। বলা বাহুল্য, বিনিময়ে তাঁরা কিছুই পাওয়ার আশাও করেন না। প্রিয়জনদের ভালো করার অকৃত্রিম আকাঙ্ক্ষা থেকেই তাঁরা এমন নিঃস্বার্থ হন।
৪. সততা
স্বর্ণহৃদয়ের মানুষেরা ব্যক্তিগত কিংবা পেশাগত জীবনের সব ক্ষেত্রে সততা মেনে চলেন। তা সে যত ক্ষুদ্র কাজই হোক, তাঁরা করেন শতভাগ সততার সঙ্গে। এমনকি অন্যকেও সৎ থাকার পরামর্শ কিংবা পথ দেখান। ফলে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁদের ওপর অনায়াসেই ভরসা করা যায়।
৫. মহত্ত্ব
এ ধরনের মানুষ তাঁদের সময়, সম্পদ ও প্রতিভাকে অন্যদের সহযোগিতায় ব্যয় করার মাধ্যমে নিজেদের মহত্ত্বের প্রকাশ ঘটান। স্বেচ্ছাসেবামূলক কোনো কাজ, বন্ধুর বিপদ, প্রতিবেশীর সমস্যা কিংবা অপরিচিত বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে তাঁরা দাঁড়ান সবার আগে। অর্থাৎ তাঁদের সহযোগিতার হাত বাড়ানোই থাকে। এমন মানুষই মূলত সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।
৬. ধৈর্য
এটিও তাঁদের মহৎ গুণগুলোর একটি। ধৈর্যের পরীক্ষায় তাঁরা দারুণভাবে উতরে যান। যেকোনো পরিস্থিতিতে তাঁরা শান্ত ও সংযত থাকতে পারেন। তার মানে এই নয় যে তাঁরা অসৌজন্যমূলক কোনো ব্যাপার মেনে নেন। বরং তাঁরা অসৌজন্যমূলক আচরণ পেলে প্রথমে বুঝতে চেষ্টা করেন, অপর পক্ষ কোনো ঝামেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কি না। অর্থাৎ মানুষকে চট করে বিচার করে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তোলেন না তাঁরা। তার বদলে কী করে বিষয়টি ভালোভাবে সামাল দেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবতে থাকেন।
৭. ক্ষমা
স্বর্ণহৃদয়ের মানুষ ক্ষমাশীল হন। ক্ষোভ, নেতিবাচক মনোভাব ও বিরক্তি যে সবার জন্যই ক্ষতিকর, তাঁরা তা বোঝেন। ভুল ও অপরাধ ক্ষমা করার ক্ষেত্রে তাঁরা উদারচিত্ত। এ ধরনের মানুষ কখনো ক্ষোভ পুষে রাখেন না। পরিবর্তে তাঁরা ভালোবাসা ও সম্মানকে মূল্য দেন। তাই বলে ভাববেন না যে তাঁদের আত্মসম্মানের ঘাটতি থাকে।
৮. সহমর্মিতা
এ ধরনের মানুষের ব্যক্তিত্বের অন্যতম উপাদান সহমর্মিতা। তাঁদের মধ্যে অন্যের অনুভূতি বোঝার এবং তা ভাগ করে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা থাকে। এর মাধ্যমে মানসিকভাবে অন্যের সঙ্গে তাঁদের সংযোগ তৈরি হয়। এ কারণেই অন্যের কঠিন সময় ও পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাঁরা সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন সহজে।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট