বিয়ে করছ না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে কী বলবেন
অন্যের বিয়ের মতো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলতে উৎসাহী মানুষের অভাব নেই। বিশেষত অবিবাহিত নারী এবং তাঁদের অভিভাবকেরাই এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দোষারোপ করা হয় একজন নারীর শিক্ষা এবং ক্যারিয়ারকে, যা তাঁকে বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে। কারও হয়তো কয়েক বছর পর বিয়ের পরিকল্পনা আছে, কেউ হয়তো ইচ্ছা থাকলেও কোনো কারণে বিয়ে না করতে বাধ্য হয়েছেন, আবার কেউ হয়তো বিয়ে করতেই চান না। প্রত্যেকের জীবনের গল্পই আলাদা। কিন্তু গায়ে পড়ে এই প্রশ্ন করা এবং খোঁচা দিয়ে প্রসঙ্গটি তোলা যে অভদ্রতা এবং অনেক ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের জন্য পীড়াদায়ক, তা বুঝতে নারাজ বহু আত্মীয়, বহু আপনজন। এসব মানুষকে সামলাবেন কীভাবে?
প্রথমেই ভেবে দেখুন, সমাজের এ ধরনের মানুষের কাজই কিন্তু অহেতুক প্রশ্ন করা। কে কোথায় পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছে বা পায়নি, কে কোন বিষয় নিয়ে কেন পড়ছে কিংবা কেন পড়ছে না, কে বিয়ে করেনি, কার বিয়ে ভালো হয়নি, কার সন্তান হয়নি, কার সংসার টেকেনি—এসব যেন তাদেরই মাথাব্যথা। আপনি তাদের প্রশ্নের জবাবে যা–ই বলুন না কেন, তাদের ভাবনার ধারা হয়তো বদলাবে না। বুড়িয়ে যাওয়ার পর আপনার দেখাশোনা কে করবে, তা নিয়েও তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই!
তবে তাদেরকে বদলানো কিন্তু আপনার জীবনের উদ্দেশ্য নয়। আপনি নিজের অবস্থান নিয়ে নিজে সুখী। সেই অবস্থানের বড়সড় ব্যাখ্যা দিতে গেলে কথাগুলো খোঁড়া অজুহাতের মতো শোনাতে পারে। মনে হতে পারে, আপনি আদতে সুখী নন, কেবল সুখে থাকার ভান করছেন। তাই ছোট্ট করে এমন কিছু বলতে পারেন, যাতে তাঁরা বুঝে যান, এ নিয়ে কথা এগিয়ে খুব একটা লাভ হবে না।
প্রশ্নকর্তার প্রতি রাগ দেখাবেন না। এসব তিক্ত প্রশ্ন এবং কটুকথার চেয়ে জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর। বিরক্তি লাগলেও হাসিমুখে কথা বলুন। পরিস্থিতি বুঝে মজার কিংবা সোজাসুজি কোনো উত্তরও দিতে পারেন। কিছু উদাহরণ দেখুন।
১. ‘খুব খুশি হলাম যে আপনি এটা জিজ্ঞেস করলেন!’
এমন বাক্যের পর আপনি নিজের জীবনের সুন্দর দিক সম্পর্কে কিছু কথা জানিয়ে দিতে পারেন প্রশ্নকর্তাকে।
২. ‘আমিও তো ভাবছি, আপনি এখনো সংসার করছেন কেন!’
হাসতে হাসতে এমন একটা কথা বললে পরিবেশটা হালকা হয়ে আসার সম্ভাবনা থাকে। আলাপের গতিপথ সংসারের মিষ্টি খুনসুটির গল্পের দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। প্রশ্নকর্তা অবশ্য বলতে পারেন, ‘তুমি তো সংসার করে দেখোনি’, জবাবে বলতে পারেন, ‘আপনিও তো আমার বয়সে একলা থেকে দেখেননি!’
৩. ‘আরেহ! এই প্রশ্ন তো আমি প্রথম শুনলাম!’
প্রশ্নকর্তা যদি মোটামুটি বুঝদার মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে আশা করা যায়, তিনি নিজেই আর এ প্রসঙ্গে কথা বাড়াবেন না। উপলব্ধি করবেন, বিষয়টি নিয়ে বারবার কথা শুনে আপনি বিরক্ত।
৪. ‘এ ব্যাপারে আলাপ করতে চাচ্ছি না।’
এখানে ভাষা একটু কড়া হলেও জবাবটা আপনি যখন হাসিমুখে দেবেন, তখন পরিস্থিতি আপনার নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।
৫. ‘সেই যে ডাইনি বুড়িটা অভিশাপ দিল!’
এমন উত্তরের মাধ্যমে মজার ছলেও বুঝিয়ে দিতে পারেন, এ নিয়ে কথা বলার আদতে কোনো প্রয়োজনই নেই।
৬. ‘আমি একা থাকতেই পছন্দ করি’
আপনার ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্যই আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি, তা বুঝিয়ে দিতে পারেন এমন দৃঢ় জবাবে। প্রশ্নকর্তা অবশ্য এরপরও বহু যুক্তি দাঁড় করাতে পারে আপনার সামনে। কিন্তু তাতে কী, আপনার জবাব তো সোজাসাপটা।
৭. ‘দারুণ প্রশ্ন! আপনি বিষয়টা কখন আবিষ্কার করলেন?’
এ রকম একটা পাল্টা প্রশ্ন করলে তিনি আপনার পড়ালেখার সমাপ্তি বা ক্যারিয়ারের শুরু কিংবা কোনো মাইলফলক সম্পর্কে কথা বলতে পারেন। তাতে আপনার সাফল্যের মুকুটে যেসব পালক আছে, সেসব ক্রমে উন্মোচিত হবে। বিয়ে নামক এই একটা ‘মাইলফলক’ অর্জন ছাড়াই যে আপনি সফল, তা যখন আলোচনায় উঠে আসবে, আপনাকে হীনম্মন্য করে ফেলার প্রয়াসটা কিন্তু মাঠে মারা যাবে!
সূত্র: টাইম