কৃষি উচ্চশিক্ষায় বাড়ছে নারী শিক্ষক
১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) কৃষি অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন ইসমত আরা বেগম। শ্রেণিকক্ষে ৬০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী তখন মোটে সাতজন। বাকি সবাই ছেলে। এ বিভাগেই এখন অধ্যাপনা করেন ইসমত আরা বেগম। বলছিলেন, ‘এখন শিক্ষক হিসেবে ক্লাসে ঢুকে দেখি, শিক্ষার্থীদের বড় অংশই মেয়ে। নিঃসন্দেহে এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়।’
দেশের কৃষির উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কয়েক বছর ধরেই নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছেলেদের চেয়ে বেশি। এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু শিক্ষার্থীই নয়, নারী শিক্ষকের সংখ্যাও বাড়ছে। মেয়েশিক্ষার্থীরা ছেলেদের তুলনায় ভালো ফল করছেন। ফলে মেধার ভিত্তিতেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন তাঁরা। এই তো গেল ডিসেম্বরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫১ শিক্ষকের নিয়োগ হলো। তাঁদের মধ্যে ৩০ জনই নারী। বাকৃবির উপাচার্য লুৎফুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিটি বিভাগের ফলাফলে মেয়েরা খুব ভালো করছে। যোগ্যতার নিরিখেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছে তারা। শিক্ষক হিসেবে মেয়েদের এ সাফল্য আমার জন্য আনন্দের বিষয়।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, শ্রেণিকক্ষের ভালো ফলধারী ৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। দেখা যায়, বেশির ভাগ বিভাগেই প্রথম দিকে থাকেন মেয়েশিক্ষার্থীরা।
মেয়েদের এত ভালো ফলের কারণ কী? নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন অধ্যাপক ইসমত আরা। এ পর্যন্ত দুটি হলের প্রাধ্যক্ষ ছিলেন তিনি। সেই সময় দেখেছেন, মেয়েদের অনেককেই গণরুমে থাকতে হতো। সেখানে তাঁরা পড়াশোনা করতে পারতেন না। ইসমত আরা বলেন, ‘আমি দেখেছি, হলের বারান্দায়, মাঠে, এমনকি সিঁড়িতে বসে পড়ছে মেয়েরা। যেকোনো পরিবেশে মেয়েরা পড়াটা ছাড়তে চায় না। আবার শিক্ষক হিসেবেও তারা ভালো করছে।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিন দিনই বাড়ছে নারী শিক্ষকদের সংখ্যা। ভেটেরিনারি অনুষদে ২০০৪ সালে নারী শিক্ষক ছিলেন ৫ দশমিক ১ শতাংশ। আর ২০২২ সালে এসে এ হার দাঁড়ায় ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অনুষদের নারী শিক্ষকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পশুপালন অনুষদে ২০০৪ সালে নারী শিক্ষক ২ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২১ সালে হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
শুধু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, কৃষির প্রায় প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি নারী শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ শিক্ষক নিয়োগ হয় ২০২০ সালে। ওই সময় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের ৬২ শতাংশই ছিল নারী। এসব শিক্ষকের বেশির ভাগই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জামাল উদ্দিন ভূঞা জানান, কোনো কোনো বিভাগে এখন মেয়েশিক্ষার্থীর সংখ্যা ছেলেদের চেয়ে বেশি।
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন ২ হাজার ৯১। এর মধ্যে ছাত্রী ১ হাজার ৮০ আর ছাত্র ৯১১। এ প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষকের সংখ্যা ২১৫। এর মধ্যে নারী শিক্ষক ৫৭। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গিয়াসউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘এখানে নারী শিক্ষকের সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে। প্রতিটি বিভাগে প্রথম ১০ জনের মধ্যে মেয়েরাই এগিয়ে। তাই ভবিষ্যতে এখানে শিক্ষক হিসেবে নারীরাই প্রাধান্য পাবে।’
ভালো ফল করে গবেষণায় আসা নারীদের সংখ্যাও বাড়ছে। রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২১ শিক্ষার্থী এখন পিএইচডি করছেন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন নারী আর ৮ জন পুরুষ। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেশিক্ষার্থীর তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা কিছু কম হলেও এ সংখ্যাও এখন বাড়ছে। সম্মান শ্রেণিতে ৬৮৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫১ জন ছাত্র, ছাত্রী ৩৩৮ জন। মাস্টার্সে ২৮১ জন ছেলে, মেয়ে ২৫১ জন।
কৃষিবিষয়ক নানা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও এগিয়ে নারীরা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া ৯ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার (কৃষি অর্থনীতি) ৫ জনই নারী। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কৃষি প্রকৌশল) হিসেবে নিয়োগ পান পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে তিনজনই নারী।