সিনেমার মতো জীবনেও দিন শেষে সব ঠিক হয়ে যায়: শাহরুখ
বলিউডের বক্স অফিসই বলে দিচ্ছে, ২০২৩ ছিল শাহরুখ খানের বছর। ১০ জানুয়ারি তাঁকে ‘ইন্ডিয়ান অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার দিয়ে সেটা আরও একবার প্রমাণ করল সিএনএন-নিউজ ১৮। পুরস্কার হাতে দারুণ উদ্দীপক এক বক্তব্য দিয়েছেন ‘বলিউড কিং’। পড়ুন তারই নির্বাচিত অংশের অনুবাদ।
পুরস্কার পাওয়ার পর বক্তৃতায় সাধারণত ধন্যবাদের ফিরিস্তি তুলে ধরাই নিয়ম। কিন্তু আজ আর আমি ধন্যবাদ পর্বে যাব না, দুটি কারণে। প্রথমত, অনেক দিন পর একটা পুরস্কার পেলাম। ধরেই নিয়েছিলাম, আমার জন্য বোধ হয় আজীবন সম্মাননা ছাড়া আর কিছু বরাদ্দ নেই। দ্বিতীয়ত, এ বছর আমি তিনটি ছবিতে তুমুল সাফল্য পেয়েছি, সুপার-ডুপার হিট হয়েছে। এই সাফল্যের পেছনে কাজ করেছেন হাজারো মানুষ। তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য দুই মিনিট যথেষ্ট সময় নয়। অতএব, এই পুরস্কার আমি কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করতে যাচ্ছি না। পুরোটা আমার। জওয়ান ছবিতে বিক্রম রাঠোর যেমনটা বলেছিল, ‘আই অ্যাম হাংরি (আমি ক্ষুধার্ত)’। (হাসি)
১৪০ কোটি মানুষকে ৩৩ বছরের বেশি সময় ধরে বিনোদন দিতে হলে আসলে সব সময় ক্ষুধার্তই থাকতে হয়। আমি ভীষণ কর্মতৎপর আর আবেগপ্রবণ। যখন একটা ছবি সাইন করি, গল্প শুনেই ‘হ্যাঁ’ বলে দিই। বক্স অফিসে সাফল্য পাব কি না, এই চরিত্র আমার সঙ্গে যায় কি না, অতশত ভাবি না। আধুনিক সময়ের একজন অভিনেতাকে হতে হয় ভবিষ্যদ্বাদী। আমিও ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে থাকি। অপেক্ষায় থাকি, ভবিষ্যৎ থেকে কেউ এসে আমাকে বলবে, ‘ভাই রে, তুমি কিন্তু একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিলে।’ দুঃখজনকভাবে বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায়, ভবিষ্যৎ থেকে কেউ আর আসে না। ফলে পরদিন সকালে উঠে আমাকে সেই সিনেমায় কাজ শুরু করতে হয়।
নিজের মেধা ও পরিশ্রমের সক্ষমতার ওপর আমার অগাধ বিশ্বাস। স্ত্রী মাঝেমধ্যে বলে, আমি নাকি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী। উদাহরণ দিই। আমার ১০ বছরের সন্তানের একটা লেগো সেট আছে। চার দিনের মধ্যে ওই লেগো আমি মিলিয়ে ফেলেছি। যদিও লেগো সেটের বাক্সে লেখা আছে, এই খেলনা ৬ থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য। কিন্তু মধুরেণ সমাপয়েতের আগে আমি আসলে থামতে পারি না। যখন নায়কের চরিত্রে অভিনয় করি, সেই নায়ক ভালো ভালো কাজ করে। আশা আর আনন্দ ছড়ায়। যখন খারাপ লোকের চরিত্রে অভিনয় করি, তখন নিশ্চিত করি, তার পরিণতিটা যেন হয় খুব করুণ। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, ভালো থেকে ভালোরই জন্ম হয়। খারাপ কাজ করলে পরিণতিও হয় খারাপ।
আমার ও আমার পরিবারের জন্য গত পাঁচটা বছর খুব ভালো যায়নি। জানি, আপনাদের অনেকের ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। কোভিডসহ নানা কারণে সময়টা ভালো ছিল না। আমার অনেকগুলো ছবি ফ্লপ হয়েছে। অনেক সমালোচক আমার কফিনে পেরেক ঠুকতে শুরু করেছিলেন। ব্যক্তিগত পর্যায়েও আমার ওপর দিয়ে একধরনের ঝড় গেছে। এই ঝড় থেকে আমি একটা জিনিস শিখেছি। চুপ থাকো। আত্মমর্যাদা বজায় রেখে চুপচাপ কঠোর পরিশ্রম করে যাও। যখন ভাববে সব ঠিকঠাক চলছে, তখনই হঠাৎ জীবন তোমাকে কঠিন আঘাত করে বসবে। ধরে নাও, গল্পে এটা স্রেফ একটা বাজে ধরনের মোড় (প্লট টুইস্ট)। কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়। সিনেমার মতো জীবনেও দিন শেষে সব ঠিক হয়ে যায়। আর যদি ঠিক না-ই হয়, তার মানে কাহিনি এখনো বাকি আছে। ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত’ (ছবি এখনো বাকি আছে বন্ধু)।
এই কথা আমি মন থেকে বিশ্বাস করি। বিশ্বাস করি, ভালো থেকে ভালো কিছুই হয়। এ রকম পুরস্কার পেলে নিজেকে মনে করিয়ে দিই, আশা হারানো যাবে না। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। কারণ, পৃথিবীতে আমিই ‘ফাস্টেস্ট লেগো মেকার’ (হাসি)। আর আমাকে আসলে সততার সঙ্গে নিজের চরিত্রে অভিনয় করে যেতে হবে।
পাঠান, জওয়ান ও ডানকির পেছনে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। যদিও আগেই বলেছি, এই পুরস্কার আমি তাঁদের কারও সঙ্গেই ভাগ করতে চাই না। একসময় আমি প্রচুর পুরস্কার পেতাম। কয়েক বছর আগে ঠিক করেছিলাম, একেকটা পুরস্কার আমি আমার একেক সন্তানের জন্য নিয়ে যাব। ওরা খুশি হবে। গত চার থেকে পাঁচ বছরে আমার স্ত্রী, সন্তানেরা যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে, ওদের জন্য এই খুশি খুব দরকার। তাই ওদের জন্য হলেও এই পুরস্কার আমি বাড়ি নিয়ে যেতে চাই।