অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ক্লাবগুলোতে যে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছেন প্যাট কামিন্স
শুধু ট্রফি জিতেছেন বলেই নয়, নিজের দারুণ পারফরম্যান্সের জন্যও নিশ্চয়ই ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ প্যাট কামিন্সের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অধিনায়ক খেলাধুলার বাইরেও নানা কিছু নিয়ে সরব। গত বছর দ্য গার্ডিয়ান-এ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে লিখেছিলেন তিনি। পড়ুন নির্বাচিত অংশের অনুবাদ।
২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি আমার স্থানীয় ক্লাবের খেলোয়াড়েরা হঠাৎই আবিষ্কার করেন পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা। সিডনির পেনরিথে সেদিন তাপমাত্রা ছিল ৪৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচণ্ড গরম আর দূষিত বায়ুর কারণে সেদিন অনেক খেলা বাতিল হয়ে গিয়েছিল। সিডনি ক্রিকেট মাঠে আমি একটা ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলাম। ধোঁয়ার কারণে বল ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিল না। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের তৃতীয় টেস্টটা পিছিয়ে যাবে, এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল।
এরও দুই বছর আগে, ২০১৮ সালে অ্যাশেজ টেস্ট খেলার পর ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুটকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে হেলমেট-প্যাড পরে ব্যাটিংয়ের ধকল সে নিতে পারেনি। সেই টেস্টে যথেষ্ট রান হয়ে যাওয়ার পরও আমরা দেরিতে ইনিংস ডিক্লেয়ার করেছিলাম। কারণ, এই গরমে আমরা ফিল্ডিং করতে চাইনি।
জলবায়ু পরিবর্তন শুধু যে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটেই প্রভাব ফেলছে, তা নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে খরার কারণে দীর্ঘ সময় ক্লাব ও স্কুল ক্রিকেট বন্ধ ছিল। গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম, পাকিস্তান অষ্টম।
বৈশ্বিক উষ্ণতা স্বাভাবিকভাবেই খেলাধুলার ক্ষেত্রে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপকতার তুলনায় খেলাধুলায় এর প্রভাব খুবই ছোট বিষয়, তবুও সমস্যাটার গুরুত্ব বুঝতে এটা উদাহরণ হতে পারে। এটা পরিষ্কার যে কার্বন দূষণ কমাতে আমরা যথাযথ উদ্যোগ নিচ্ছি না। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে না পারলে বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে একটা সুন্দর পৃথিবী তুলে দিয়ে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। ২০২১ সালে আমার সন্তান জন্ম নেওয়ার পর থেকে এ বিষয়টা আমাকে আরও বেশি ভাবাতে শুরু করে। বাস্তবতা হলো খেলাধুলা বলি কিংবা আমাদের স্বাভাবিক জীবন, আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ—সবই আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাবে, যদি না আমরা এখনই তৎপর হই।
অস্ট্রেলিয়ার অন্য ক্রীড়াবিদদের মতো ক্রিকেটাররাও বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রভাব ফেলতে চান। যে দারুণ সক্ষমতা আমাদের আছে, তা দিয়ে আমরা নিশ্চয়ই জলবায়ুর ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারি। সৌরশক্তি, বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য অন্যান্য যে শক্তি অস্ট্রেলিয়ার আছে, বিশ্বের খুব কম দেশেই তা বিদ্যমান। এই শক্তি কাজে লাগাতে পারলে এটি আমাদের খেলা ও পরিবেশ—দুটোর ওপরই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তাই অস্ট্রেলিয়ার নারী ও পুরুষ ক্রিকেট দলের সদস্যদের নিয়ে আমরা ‘ক্রিকেট ফর ক্লাইমেট’ নামের একটি উদ্যোগ শুরু করেছি। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো আগামী এক দশকের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সব ক্রিকেট ক্লাবে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা।
আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হবে অস্ট্রেলিয়ার ১৫টি ক্লাবে সৌর প্যানেল স্থাপন। আরও ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এরই মধ্যে তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমি খুব গর্বিত যে আমার পেনরিথ দিয়েই প্রকল্পটি শুরু হবে। আমি আশাবাদী যে এই প্রকল্প আদতে অনেক বড় একটি পরিবর্তনের শুরুমাত্র।
এই উদ্যোগ শুধু পরিবেশ নয়, আমাদের ক্রিকেট ক্লাবের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে। কেননা, এতে আর্থিকভাবেও তারা লাভবান হবে। যেমন সৌর প্যানেল ব্যবহার করার কারণে পেনরিথ ক্রিকেট ক্লাবের বছরে তিন হাজার ডলার বাঁচবে। এই অর্থ তারা নারী ক্রিকেটারদের সংখ্যা বাড়াতে কিংবা জুনিয়র ক্রিকেটারদের জন্য আরও বেশি প্রকল্প চালু করতে কাজে লাগাতে পারবে।
জাতিসংঘের ‘স্পোর্টস ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্ক’-এর সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা গর্বিত। অস্ট্রেলিয়ার মানুষের জীবনে খেলাধুলা একটা বড় ভূমিকা রাখে। অতএব এটা সমস্যা সমাধানেরও অংশ হতে পারে। এ কথা ভেবে আমার খুব ভালো লাগে যে এ দেশে এখনো ক্রিকেট একজন মানুষের জীবিকা হতে পারে। যে ক্লাবগুলোর হাত ধরে আমাদের এই পর্যায়ে আসা, তাদের পাশে দাঁড়ানোও তো আমাদেরই কর্তব্য।