কীভাবে স্নাতকে ৪-এ ৪ পেলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এই শিক্ষার্থী
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) ২৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হলো ৭ ডিসেম্বর। অসাধারণ ফলের জন্য সমাবর্তনে আচার্য স্বর্ণপদক পেয়েছেন কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের স্নাতক কাজী মোসাদ্দেকুর। স্নাতকে ৪-এ ৪ পেয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে কেমন করে এই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন? জানতে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেছিলেন মো. জান্নাতুল নাঈম
পুরো স্নাতক জীবনের প্রতিটি সেমিস্টারে সিজিপিএ ৪ পাওয়াটা মুখের কথা নয়। একটা কোর্সে এদিক-ওদিক হলেও আর এমন ফলাফল হতো না। এই অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন আচার্য স্বর্ণপদক। কেমন ছিল এই অনুভূতি? কাজী মোসাদ্দেকুর বললেন, ‘অনেক খুশি। মা-বাবার জন্য বেশি ভালো লাগছে। তাঁরা সব সময় চাইতেন, আমিও একদিন এ রকম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পুরস্কার পাই। সেই প্রত্যাশা থেকেই ভালো করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। স্বর্ণপদক পাওয়ার কথা যেদিন প্রথম জানলাম, চার বছরের পরিশ্রমকে সার্থক মনে হয়েছে। মা-বাবা খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন।’
‘চারে চার’ পাওয়ার টোটকা
মেক্সট বৃত্তি নিয়ে বর্তমানে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে পড়ছেন এই মেধাবী তরুণ। তবে এটাই তাঁর প্রথম জাপান সফর না। বাবার কাজের সুবাদে আট মাস বয়সেই এ দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। গ্রেড ১ পর্যন্ত সেখানকার স্কুলে পড়েছেন। তাই দেশে ফিরে বাংলা বিষয়ে ভালো করতে একটু বেগ পেতে হয়েছিল। তবু প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেছেন হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এই প্রাক্তন। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়েও সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করেছেন।
মা অনেক সময় ভিডিও গেমসের কনসোল লুকিয়ে রাখতেন। তখন খুব খারাপ লাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাবতাম, একটু খেলতে দিলে কী এমন হতো। এখন অবশ্য মনে হয়, মা এটা করেছিলেন বলেই আজকে আমার এই সাফল্য।
কিন্তু এই সাফল্যের রহস্য কী? কাজী মোসাদ্দেকুরের সরল উত্তর, ‘নিয়মিত পড়া।’ তিনি বলেন, ‘কোনো লেকচারই পরীক্ষার আগের দিনের জন্য রেখে দিইনি। প্রতিদিনের পাঠ প্রতিদিনই শেষ করার চেষ্টা করেছি। এটাই আমার ভালো ফল করার কৌশল।’
সিএসই কেন? ছোট থেকেই কম্পিউটার ও রোবোটিকস নিয়ে আগ্রহ থাকায় স্নাতকেও এ বিষয় নিয়ে পড়েছেন, জানালেন তিনি।
আগে পড়াশোনা, সহশিক্ষাও প্রয়োজন
শুধু লেখাপড়াই নয়, বিভিন্ন প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিতেন মোসাদ্দেকুর। পেয়েছেন পুরস্কারও। বিশেষ করে শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রকল্প উপস্থাপন দেখার ঝোঁক ছিল। সেখান থেকে প্রেরণাও নিতেন। নিজেও এ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের এসব প্রকল্প তাঁকে আরও কাজ করার রসদ জোগাত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবের অনুষ্ঠানেও থাকত তাঁর উপস্থিতি।
জানতে চাইলাম, পড়ালেখার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত থাকাটা কতটা দরকারি? এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘সহশিক্ষা কার্যক্রম অবশ্যই দরকার। তবে সেটা যেন লেখাপড়াকে ছাপিয়ে না যায়। অনেকে আজকাল এটাকেই বেশি গুরুত্ব দেন। কিন্তু স্নাতকে বা কোন কোর্সে আপনার জানার পরিধি কতটুকু, সবাই ফলাফল দিয়েই তা বুঝতে চাইবে। তাই যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করে ভালো একটা সিজিপিএ রাখা গুরুত্বপূর্ণ।’
ভালো ফলাফলের কারণে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে শতভাগ বৃত্তি নিয়ে লেখাপড়া করেছেন এই তরুণ।
দিন শেষে মা-বাবার সিদ্ধান্তই সঠিক
অবসরে অ্যানিমে, টিভি সিরিজ দেখতেন এই তরুণ। খেলতেন ভিডিও গেমস। তবে মা অনেক সময় ভিডিও গেমসের কনসোল লুকিয়ে রাখতেন। তখন খুব খারাপ লাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাবতাম, একটু খেলতে দিলে কী এমন হতো। এখন অবশ্য মনে হয়, মা এটা করেছিলেন বলেই আজকে আমার এই সাফল্য। দিন শেষে তাঁদের সিদ্ধান্তই সঠিক।’
ভবিষ্যতে একজন ভালো মানুষ হওয়াই এই তরুণের প্রথম লক্ষ্য। হতে চান শিক্ষক বা গবেষক। তবে সেই কাজ যেন মানুষের উপকারে আসে, সেদিকেও থাকবে মনোযোগ।