রাস্তা থেকে শুরু করে ড্রেন পরিষ্কারের কাজও করেছি
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতা, লুটপাট হওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদ উদ্ধার থেকে শুরু করে বাজার নিয়ন্ত্রণ, নানা কাজে যুক্ত হচ্ছেন তরুণেরা। কয়েকজন জানিয়েছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা
জনদুর্ভোগ কমাতে ট্রাফিক পুলিশের কাজ করেছি
নাযিআত পদ্ম, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
সরকার পতনের পর রাস্তায় কোনো ট্রাফিক পুলিশ চোখে পড়েনি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হতেও বেশ খানিকটা সময় লেগে গেছে। সে সময় রাস্তার বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখে একটা কিছু করার কথা মাথায় আসে। তাই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিই। শুধু আমি নই, আমার সঙ্গে বন্ধু, ছোট ভাই-বোনেরাও অনেকে ছিল। বাড্ডা ও রামপুরা এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আমরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছি।
দেশের ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’র জন্য লড়াই করেছি। যেহেতু দেশটা আমাদের সবার, সংস্কারের দায়িত্বও আমাদের। আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি যেন রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এক লেনে চলে। বাস যেন যেখানে–সেখানে না থামে, পথচারীরা যেন ফুটপাত ব্যবহার করে। উল্টো পথে গাড়ি না চলা, মোটরসাইকেলচালকদের হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করা, রাস্তা পারাপারে সহায়তা করা ইত্যাদি বিষয়ে নজর ছিল। ভালো লাগার ব্যাপার হলো, অধিকাংশ মানুষ আমাদের কার্যক্রম সাদরে গ্রহণ করেছেন। এমনকি এলাকার অনেক বয়োজ্যেষ্ঠও এগিয়ে এসেছেন। বিকেলের দিকে একটি শ্রমিক ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলও যুক্ত হয়েছিল। কাজ করার সময় অনেকে আমাদের খাবার ও পানি দিয়েছেন। আমার মনে হয় সাহস যেমন সংক্রমিত হয়, ভালো কাজও তা–ই। সুন্দর কাজে একজনের দেখাদেখি আরও অনেকে এগিয়ে আসে।
কাজটা কষ্টকর, তবু উদ্যমের সঙ্গে করেছি
রাইয়ান বিন আরিফ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ
স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার পর শৃঙ্খলা ফেরানোই মূল লক্ষ্য। এ দায়িত্ববোধ থেকেই স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজে যুক্ত হওয়া। ৭ আগস্ট বিকেল পাঁচটায় মিরপুর–১০ সংলগ্ন এলাকায় আমি, আমার সহপাঠী ও শিক্ষকেরা মিলে আবর্জনামুক্ত করার কাজে লেগে পড়ি। রাস্তায় পড়ে থাকা পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, চুইংগাম, চকলেটের প্যাকেট, ইটের টুকরা একটি পলিথিনে একত্র করি। ড্রেনের মুখে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করতে পারে, এমন সব আবর্জনা (টিনের ক্যান, পরিত্যক্ত ফুলের টবের ভাঙা অংশ, পরিত্যক্ত কাগজ) সরিয়ে ড্রেনের ভেতর থাকা আবর্জনা (বোতল, জুসের প্যাকেট) পরিষ্কার করি। সবশেষে ছিল ঝাড়ু দেওয়া কর্মসূচি। এ রকম অভিজ্ঞতা এর আগে হয়নি। কাজটা কষ্টকর, তারপরও কোনো হীনম্মন্যতা ছাড়াই আমরা পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। আবু সাঈদ, মুগ্ধ ভাইদের আত্মত্যাগে পাওয়া এ নতুন বাংলাদেশ যেন পথ না হারায়, সে লক্ষ্যে তরুণদের সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।