চুয়েট ও বুয়েটের দুই শিক্ষার্থী পেলেন পুরস্কার
আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল এশিয়ার সংক্ষিপ্ত রূপ আর্কএশিয়া। এশিয়ার ২২টি দেশ নিয়ে এই কাউন্সিল। প্রতিবছর স্থাপত্যসংক্রান্ত নানা প্রতিযোগিতা ও সেমিনার আয়োজন করে তারা। এ বছর এশিয়ার স্থাপত্যের শিক্ষার্থী ও স্থপতিদের এই মিলনমেলা হয়েছে ফিলিপাইনের বোরাকে আইল্যান্ডে। ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত অ্যাওয়ার্ডস নাইটে ‘থিসিস অব দ্য ইয়ার’ বিভাগে যথাক্রমে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ জিতেছেন বাংলাদেশের দুই শিক্ষার্থী—চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ছাত্র ফাহিম আসহাব ফারুকী ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রী ইসরাত জাহান।
পদ্মা সেতু ঘিরে ফাহিমের পরিকল্পনা
চট্টগ্রামের ছেলে ফাহিম আসহাব ফারুকী চেয়েছিলেন চারুকলায় পড়তে। কিন্তু বাদ সেধেছিল পরিবার। অগত্যা ফাহিম বেছে নেন স্থাপত্য। তা-ও যদি আঁকাআঁকির একটু ‘কাছাকাছি’ থাকা যায়। তবে ভর্তি হওয়ার পরপরই স্থাপত্য তাঁর ভালো লেগে যায়।
সেই ভালোবাসার প্রমাণই দিয়েছেন ফাহিম। আর্কএশিয়ার ‘থিসিস অব দ্য ইয়ার’ বিভাগে পেয়েছেন রৌপ্যপদক। তাঁর থিসিসের শিরোনাম ছিল ‘ইকোজ অব রিপ্লেনিশমেন্ট’, অর্থাৎ পরিপূরণের প্রতিধ্বনি। সহজ করে বললে, পদ্মা সেতু তৈরির সময় যে বিশাল এলাকাজুড়ে চলেছে নির্মাণযজ্ঞ, সেই অংশটিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করাই ছিল ফাহিমের থিসিসের বিষয়।
ফাহিম বলেন, ‘একটা জাদুঘর কমপ্লেক্স গড়ে তোলা এবং আশপাশের জায়গাটিকেও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সাজানো, এটাই ছিল পরিকল্পনা। দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতেই একটা পার্কের নকশা করেছি। মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকবে একটা পাবলিক প্লাজা, যেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব। মানুষ যেন নদীর সৌন্দর্য ঠিকঠাক উপভোগ করতে পারে, সেভাবেই আমার পরিকল্পনাটি সাজানো।’
পুরোনো যুগের নৌকা, লোককাহিনিনির্ভর গ্যালারি, নদীর ইতিহাস, বাস্তুশাস্ত্র, এমন অনেক কিছুই প্রাধান্য পেয়েছে ফাহিমের নকশায়।
রৌপ্যপদক জেতার অনুভূতি জানাতে গিয়ে ফাহিম বলেন, ‘আমি তো শুধু বাংলাদেশের নয়, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি) এবং চুয়েটেরও প্রতিনিধিত্ব করেছি। এটা আমার কাছে বড় আনন্দের। আর্কএশিয়ার এই স্বীকৃতি আরও বহুদূর যেতে প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।’ ফাহিমের থিসিস প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ইউনিভার্সিটি এশিয়া প্যাসিফিকের সহযোগী অধ্যাপক জিয়াউল ইসলাম ও চুয়েটের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দা তাহমিনা তাসনিম।
ইসরাতের ভাবনায় উপকূলের মানুষ
বিশাল বিশাল ভবনগুলো কেমন করে দাঁড়িয়ে থাকে! ছেলেবেলার এই কৌতূহলের তাড়নাতেই বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন ইসরাত জাহান। ইসরাত বলছিলেন, ‘আমি সব সময় স্থাপত্যের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করতে চেয়েছি।’
যে থিসিসের জন্য আর্কএশিয়ায় ব্রোঞ্জপদক পেয়েছেন স্থাপত্যের এই শিক্ষার্থী, সেটিও মানুষের জীবনকেন্দ্রিক। কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার উপকূলবর্তী মানুষকে নিয়ে ভেবেছেন ইসরাত, তৈরি করেছেন এমন এক স্থাপনার প্রোটোটাইপ, যা সাধারণ সময়ে ‘কমিউনিটি স্পেস’ হিসেবে ব্যবহৃত হবে আর দুর্যোগের সময় হয়ে উঠবে আশ্রয়কেন্দ্র। পরিবেশবান্ধব এবং স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রটি তৈরির নকশা করেছেন ইসরাত। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো এমন একটা সম্প্রদায় গড়ে তোলা, যারা ভবিষ্যতের জন্য তৈরি থাকবে। থিসিসে সার্বিক সহযোগিতার জন্য আমি ধন্যবাদ দিতে চাই আমার শিক্ষক বুয়েটের অধ্যাপক খন্দকার সাব্বির আহমেদ ও সহকারী অধ্যাপক মাহেরুল কাদেরকে। আর্কএশিয়ায় পুরস্কারের চেয়েও বড় প্রাপ্তি হলো একটি বড় নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারা। ভবিষ্যতে এই প্রেরণা কাজে লাগাতে চেষ্টা করব।’