কাস্টমার সার্ভিস থেকে আপনি যা চান, তা কীভাবে সহজে আদায় করবেন

কাস্টমার সার্ভিস কর্মীর সঙ্গে ইতিবাচক আলাপ দ্রুত সেবা পেতে সাহায্য করেছবি: প্রথম আলো

বিভিন্ন প্রয়োজনে মুঠোফোনে কাস্টমার কেয়ারে কল করেননি, এমন মানুষ আজকাল বিরল। এসব কল করার পর মুঠোফোনে শোনা একটি মুখস্থ কথাও কমবেশি সবাইকে বিরক্ত করে। সেটি হলো, ‘আপনার কাঙ্ক্ষিত সেবাটি পেতে অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন, ধন্যবাদ!’ মিনিটের পর মিনিট এমন মুখস্থ কথা শোনার পর অনেকে ধৈর্যহারা হয়ে মুঠোফোনের সংযোগই কেটে দেন। কেউ কাস্টমার কেয়ার কর্মকর্তার সঙ্গে রাগারাগি করেন। এতে কাঙ্ক্ষিত কাস্টমার সার্ভিস পেতে অনেকের সমস্যা হয়।

এ তো গেল কল সেন্টার থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়ার সীমাবদ্ধতার কথা। আজকাল বিভিন্ন দোকান থেকে পণ্য কিনলে সঙ্গে গ্যারান্টি/ওয়ারেন্টি কার্ড দিয়ে দেওয়া হয়। অনেকে এই কাগজপত্র ঠিক করে পড়ে তো দেখেনই না, কার্ডটি বাসায় এনে কোথায় রেখেছেন, দরকারমতো খুঁজেও পান না। ফলে যখনই ওই পণ্যের প্রয়োজনে কার্ডটি দরকার হয়, তখন ঠিকমতো গ্রাহক সেবা (কাস্টমার সার্ভিস) পাওয়া যায় না। আবার কার্ডের শর্ত না পড়েই কেউ দোকানে গিয়েও কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না। তাহলে অনলাইন বা অফলাইনে কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক সেবা পেতে কী করবেন? কিছু কৌশল জেনে রাখুন।

আরও পড়ুন

১. চুক্তির শর্ত পড়ুন

বেশির ভাগ ক্রেতাই পণ্য কেনার সময় কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির শর্তগুলো পড়ে দেখেন না। তাঁরা অনেকটা না পড়ে বা চোখ বুলিয়েই চুক্তিপত্রে সই করেন। ফলে ওই পণ্যের প্রয়োজনে সেবা নিতে গেলে ভুল–বোঝাবুঝি তৈরি হয়। অনেক সময় ক্রেতার প্রত্যাশার সঙ্গে কোম্পানির সেবার প্রাপ্তি মেলে না। এমন সমস্যা এড়াতে চুক্তি সইয়ের আগে অবশ্যই শর্তগুলো ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে কোম্পানির কর্তাব্যক্তির কাছে বুঝে নিন। মনে রাখুন, ভাবিয়া করিয়ো কাজ (চুক্তি), করিয়া ভাবিয়ো না।

২. স্বচ্ছ থাকুন

অনেক ক্রেতা সেবা নিতে গিয়ে অনেক সময় সঠিক তথ্য দেন না। কেউ কেউ অনেকটা ‘নির্দোষ মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে সেবা নিতে চান। এমনটা হলে তা যথাযথ সেবা পেতে সমস্যা তৈরি করে। কারণ, একজন ক্রেতা যতটা উদাসীনভাবে চুক্তির শর্ত পড়ে দেখেন, বিপরীতে একজন কাস্টমার কেয়ার কর্মকর্তা ‘পাখির চোখে’ তা পর্যবেক্ষণ করেন। তাই যথাযথ সেবা পেতে সব সময় সঠিক তথ্য দিন। দিন শেষে আপনার সততার জন্য আপনি পুরস্কৃতই হবেন।

৩. সঠিক সময়ে কল করুন

অনেক কোম্পানি নিজেদের কর্মকর্তাদের দিনের বিভিন্ন সময়ে সেবা দেওয়ার বিষয়ে বিশেষ আর্থিক ছাড় দেন। এটার জন্য দিনের বিভিন্ন সময় ভাগ করে দেওয়া থাকে। তাই এমন সময় ফোন করুন, যাতে আপনিও ছাড়ের সুযোগটা নিতে পারেন। এখন প্রশ্ন হলো, আপনি কীভাবে বুঝবেন, কখন ছাড় চলছে? সাধারণত কর্মীদের কাজের শেষ ভাগে এই ছাড় দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে আপনি ফোন করেই সরাসরি কাজের কথা না তুলে একটু কুশল বিনিময় করুন। কৌশলে জানতে চান, ওই কর্মী এখন কাজের কোন পর্যায়ে আছেন। এখন বিশেষ কোনো ছাড় দিচ্ছেন কি না। যথার্থ ছাড়ের সম্ভাবনা পেলে আপনার সমস্যার কথাটি তুলতে পারেন।

অনেক সময় নবীন কর্মী আপনাকে লাইনে রেখে তাঁর ম্যানেজারের সঙ্গে ছাড়ের বিষয়টি আলাপ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অধৈর্য হবেন না। একটু সময় নিয়ে অপেক্ষা করুন। জানেন তো, অপেক্ষার ফল মধুর।

আরও পড়ুন

৪. কথা বলুন

মুঠোফোনে কাস্টমার কেয়ারে কল করলেই সেই মুখস্থ কথা শোনার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শুরুতেই উল্লেখ করেছি। এমন হওয়ার কারণ হলো, ওই সময়ে কাস্টমার কেয়ারের সব টেলিফোন ব্যস্ত থাকে। অর্থাৎ ওই সময় তাঁরা কাউকে না কাউকে সেবা দিচ্ছেন। আর কম্পিউটারে রেকর্ড করে রাখা কণ্ঠস্বর তখন আমাদের অপেক্ষা করার অনুরোধ জানায়। অনেকে বিরক্ত হয়ে এ সময় ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে বারবার ফোন করেও একই রকম অনুরোধ শোনেন। সে ক্ষেত্রে বারবার লাইন না কেটে অপেক্ষা করে কথা বলা ভালো। সংযোগ পেয়ে গেলে দ্রুত আপনার কাঙ্ক্ষিত সেবার কথা জিজ্ঞেস করুন।

৫. শান্ত থাকুন

অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর সংযোগ পেলে স্বভাবতই বিরক্তি আসতে পারে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেবাটি পেতে শান্ত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। শুরুতেই কাস্টমার কেয়ারের কর্মীর সঙ্গে অসহিষ্ণু আচরণ করলে আপনার সমস্যার সমাধানে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক সময় ক্রেতা হিসেবে আপনার আচরণ কেমন, সেটারও নোট রাখা হয়।

পক্ষান্তরে কর্মীর সঙ্গে ইতিবাচক আলাপ দ্রুত সেবা পেতে সাহায্য করবে। মনে রাখতে হবে, ওখানকার কর্মীরা আপনার সমস্যাটি হওয়ার জন্য দায়ী নন। বরং আপনাকে সেবা দেওয়ার জন্যই তাঁরা তৈরি।

৬. চ্যাটবটের সঙ্গে আলাপ করুন

বড় কোম্পানিগুলো অনেক সময় আলাপ-আলোচনার জন্য অনলাইনে চ্যাটবটের ব্যবস্থা রাখে। চ্যাটবটগুলোয় কম্পিউটারের সাহায্যে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব ঠিক করে দেওয়া থাকে। চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলার সময় মনে রাখতে হবে, এই সবকিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। অপেক্ষাকৃত জটিল সমস্যার সমাধান এখান থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে চ্যাটবটের সাহায্য নিয়ে কোম্পানির কোথায় বা কার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে, তা জানা যেতে পারে।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুন