বরিশাল নদীবন্দরের নকশা করে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলেন রুয়েটের শিক্ষার্থী
দেশের দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন স্থাপনা দেখে কৌতূহল হতো। ‘আচ্ছা, এটা কীভাবে তৈরি করল?’ প্রশ্ন জাগত মনে। তখন অবশ্য স্থপতি শব্দটার সঙ্গে পরিচয় ছিল না। তবে ওই আগ্রহের কারণেই বোধ হয় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) স্থাপত্য বিভাগে পড়ার সুযোগ পান মেহেদী আজম। স্থাপত্যে স্নাতকের শেষ বর্ষে থিসিস প্রকল্প করতে হয় শিক্ষার্থীদের। মেহেদীর করা থিসিস তাঁকে এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক পুরস্কার। আনফিউজ আন্তর্জাতিক স্থাপত্য থিসিস পুরস্কারের (ইউএনআইএটিএ) এবারের সংস্করণে ‘বেস্ট ইন রিজিয়ন’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন এই তরুণ। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত।
ইউএনআইএটিএ মূলত একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যারা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের স্থাপত্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নকশা আহ্বান করে। ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে এবার বসে প্রতিযোগিতার ষষ্ঠ আসর। নান্দনিকতা, সৃজনশীলতা, কার্যকারিতা ও ব্যবহারযোগ্যতা, সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব ইত্যাদি বিষয়কে মানদণ্ড ধরে পুরস্কার দেওয়া হয়। বিজয়ী, বিশেষভাবে উল্লেখ্য, মানুষের পছন্দ ও আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্ব—এই চার ক্যাটাগরিতে ১১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
থিসিস করার আগে বিষয় বাছাই করতে দেশের নানা ভবিষ্যৎ প্রকল্প নিয়ে খোঁজখবর নেন স্থাপত্যের শিক্ষার্থীরা। নকশার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন নিজেদের নতুন ভাবনা দিয়ে।
মেহেদী আজম নদীবন্দর নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেন? সদ্য স্নাতক এই তরুণ বলেন, ‘জানতে পারি, সামনে অনেকগুলো নদীবন্দর নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। সেখান থেকেই বরিশাল বন্দরের খোঁজ নেওয়া শুরু করি। কিছু বিষয় আমার নজরে আসে। যেমন বর্তমানে এই টার্মিনালটি একমুখী কাজে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ জাহাজ ছাড়ার সময়টাতেই কেবল একটু ভিড় হয়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সেটাও কমে গেছে। মানুষ এখন বাসেই বেশি চলাচল করছে। তাই বর্তমান বন্দরের কাঠামো ঠিক রেখে শুধু প্রসারিত করা বা শুধু বড় একটি দালান বানিয়ে তেমন কোনো লাভ হবে বলে আমার মনে হয়নি।’
এরপর বরিশালে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন মেহেদী। আশপাশ ঘুরে দেখেন। নদীতীরের সৌন্দর্য, বন্দরের কার্যক্রম, মানুষের বিনোদন, নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা–বাণিজ্য, সবকিছু বিবেচনা করেই আধুনিক নদীবন্দরের কথা চিন্তা করেন এই নবীন স্থপতি। সে অনুযায়ী নকশা শেষ করেন। মেহেদী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রচলিত বন্দরগুলো থেকে আলাদা করে নকশা করার চেষ্টা করেছি—জল, স্থল ও মানুষের যেন একটা মেলবন্ধন ঘটে। যেহেতু পদ্মা সেতুর প্রভাব ইতিমধ্যে পড়েছে, তাই বন্দরে বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। আমার ভবনটির প্রথম তলা টার্মিনাল ও দ্বিতীয় তলা বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে নকশা করেছি। কেন্দ্রে থাকবে নানা ব্যবস্থা। তবে যাঁরা জাহাজ বা নৌযানে ভ্রমণ করবেন, তাঁদের সঙ্গে বিনোদনের উদ্দেশ্যে যাওয়া দর্শনার্থীদের পথ মিলবে না। কিন্তু একে অন্যকে দেখতে পারবেন। আবার রেস্তোরাঁয় খেতে এসে নদীর সৌন্দর্যও উপভোগ করা যাবে। এক পাশ থেকে বন্দরের ভেতর দিয়েই অন্য পাশের পার্কে যাওয়া যাবে।’
এই নকশা অনুযায়ী জাহাজের যাত্রী ও স্থানীয় জনগণ, সবাই একাধিক কারণে বন্দরে আসবেন। ফলে বন্দর যেমন ব্যস্ত থাকবে, রাজস্বও বাড়বে। এ ছাড়া বরিশালের কবি–সাহিত্যিকদের কাজ নিয়ে সংরক্ষণাগার থাকবে। বরিশাল থেকে প্রথম চালু হওয়া একসময়ের জনপ্রিয় প্যাডেল স্টিমারও দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন। সবকিছু মিলিয়েই নকশা করেছেন মেহেদী। আর এ নকশাই জিতে নিয়েছে পুরস্কার।