বাড়ির ছাদে ঘুরে ঘুরে দেখুন হাজারো বনসাই
গাছপাগল হিসেবে পরিচিতি আছে লায়লা আহমেদের। দেড় দশক ধরে রাজধানীর মালিবাগের বাড়ির বিশাল ছাদে গড়ে তুলেছেন অপূর্ব এক ছাদবাগান। আর এই ছাদবাগানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, গাছগুলোর প্রায় সবই বনসাই। লায়লার ছাদে বনসাই আছে হাজারের ওপর।
১৯৯৯ সালে ধানমন্ডিতে প্রথম একটি বনসাইয়ের প্রদর্শনী ঘুরতে যান লায়লা। পুরোনো বাড়ির দেয়াল, তাকজুড়ে বামন গাছ! দেখে চোখ-মন জুড়িয়ে যায়। বাড়িতে ফিরে তিনিও শুরু করলেন। বললেন, ‘প্রথমে তো বইটই ছিল না। প্রশিক্ষণও ছিল না। তাই ডাল ছেঁটে ছেঁটে নিজের মতো করতাম। ভুল থেকে শিখতাম। পরে বইপত্র কিনি। প্রশিক্ষণ নিই।’
বনসাইশিল্পী হওয়ার পথে কোনো বাধা ছিল না? ‘তা তো ছিলই। আমি চার সন্তানের মা। শুরুতে আমার স্বামী বলেছিল, “বাচ্চাগুলো বড় হোক, তারপর না হয় এসব কোরো।” ভাবলাম, কবে বাচ্চারা বড় হবে, সংসারের কাজের চাপ কমবে আর তারপর শখ পূরণ করব, তা-ই হয় নাকি? সংসারের কাজ গুছিয়ে, ফাঁকে ফাঁকে বনসাইয়ের কাজ শুরু করি। আমার সন্তানদের সঙ্গে বড় হয় আমার বনসাইয়ের বাগান। আমি সাইকাস বা বট, পাকুড় ছাড়াও আরও নানা ধরনের জংলি আর দেশি ফুল-ফলের গাছের বনসাই করি। যেগুলো তখনো বনসাই বানানোর চল শুরু হয়নি। তখন লোকে অনেক কথা বলেছিল। “এই সব গাছ দিয়েও বনসাই করেন!” এখন দেখি, বিদেশেও নানা ধরনের বনসাই হয়। আর দেশেও এখন বনসাইপ্রমীরা নানান গাছের বনসাই বানান। তবে আমি যখন শুরু করেছিলাম, তখন জানতামই না যে এই গাছগুলোরও বনসাই হয়। সেটা ছিল নিজের আবিষ্কারের মতো।’
গাছের মূলটা ওপরের দিকে থাকলে আর গাছকে বামন বানিয়ে রাখলেই যে সেটা বনসাই, বিষয়টা কিন্তু তা নয়। বনসাইয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো নান্দনিকতার গ্রামার। জাপানি বনসাই-গবেষকেরা বনসাইয়ের জন্য এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০টি স্টাইল ঠিক করে দিয়েছেন। এর ২০টিই লায়লার জানা আছে।
লায়লার এই বনসাইগুলো ঘুরে দেখতে চান? পছন্দ হয়ে গেলে সংগ্রহেও রাখতে চান? সেই সুযোগ রয়েছে ১৫, ১৬ আর ১৭ ডিসেম্বর। চোখ বন্ধ করে একবার কল্পনা করুন, বট, পাকুড় থেকে শুরু করে আম, জাম, পেয়ারা, লিচু, আনার, চেরি, করমচা, মালবেরি, চায়নিজ পেয়ারা, জবা, গোলাপ, হাসনাহেনা, কামিনী, টগর, বাগানবিলাস—এ রকম প্রাচীন, অর্বাচীন, দুর্লভ আর সহজলভ্য হাজার খানেকের বেশি গাছের এক বাগানে আপনি হেঁটে বেড়াচ্ছেন এই হালকা শীত শীত আমেজে। ভেসে আসছে এক মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ। আর সে জন্য আপনাকে বেশি দূর যেতে হবে না। ঢাকার মালিবাগেই আপনি পেয়ে যাবেন এই বাগান। আর এতক্ষণে তো বুঝেই গেছেন, গাছগুলোর আকৃতি দেখতে অতিকায় হলেও আপনার হাতেই এঁটে যাবে। ২৭০ মালিবাগের ছাদবাগানে হতে যাচ্ছে লায়লা আহমেদের একক বনসাই প্রদর্শনী। এটি তাঁর চতুর্থ প্রদর্শনী, অন্যান্যবারের তুলনায় বড় আয়োজন। কেননা, এবারই প্রথম প্রদর্শনীটি হবে নিজ সংগ্রহশালায়, বাড়ির ছাদে, ২৭০ মালিবাগ, ঢাকা ১২১৭ ঠিকানায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ও বেইলি রোডের মহিলা সমিতিতে আগে লায়লা আহমেদের দুটি প্রদর্শনী হয়েছে। নিজের হাতে গড়া বনসাইয়ের সব নান্দনিক সংগ্রহ দর্শকদের সামনে মেলে ধরতে প্রস্তুত লায়লা আহমেদ। চাইলে সেগুলো আপনি সংগ্রহও করতে পারেন। বনসাইগুলোর দাম ১ হাজার থেকে দেড় লাখ। আরও বিস্তারিত জানতে ফোন করতে পারেন সরাসরি লায়লা আহমেদকে, এই নম্বরে: ০১৭১৫৯০৯১২৪।