২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী

ইনফোগ্রাফ: সৈয়দ লতিফ হোসাইন

দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনা করছেন দুই হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী। সংখ্যার দিক দিয়ে সরকারির চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই বিদেশি শিক্ষার্থী বেশি। চার বছর ধরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ধারাবাহিকভাবে বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়ছে। অন্যদিকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কোনো বছর বাড়ে তো পরের বছর কমে যায়, এই হলো চিত্র। ২০২১ সালের তথ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনে বিদেশি শিক্ষার্থী–সংক্রান্ত এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

বর্তমানে সারা দেশে ৫৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১১২টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মোট শিক্ষার্থী ৪৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে জাতীয়, উন্মুক্ত ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়েন প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার।

২০ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী পড়ছেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে গোপালগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ১৭২ জন।

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন দিনাজপুরে অবস্থিত হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ১০৬ জন। এ ছাড়া যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়েন, সেগুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৪), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (৪৬), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (৭), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (২), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (২৩), খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১৮), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (১৭), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৬), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (২২), ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (৩), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (১), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় (৩), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (২১), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (৮) এবং খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (৮)।

২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে। যেমন ২০১২ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ৫২৫ জন। কিন্তু পরের বছর তা কমে দাঁড়ায় ৩২৬ জনে। আবার ২০১৪ সালে বেড়ে হয় ৪৩২। ২০১৫ সালে ৫৯৩ জন, ২০১৬ সালে কমে হয় ৩৫৫ জন, ২০১৭ সালে ৪৬১ জন, ২০১৮ সালে ৮০৪ জন এবং ২০১৯ সালে ৪৮২ জন, ২০২০ সালে ৭৬৭ জন এবং ২০২১ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ৬৭৭ জন। সর্বশেষ দুই বছরের তথ্য বলছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এক বছরের ব্যবধানে ৯০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী কমেছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ দেশের শিক্ষার্থী

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর ১০ বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল বেশি। ২০১৭ সালে ছিল ১ হাজার ৯৭৭ জন ও ২০১৬ সালে ১ হাজার ৯২৭। ২০১৮ সালে তা কমে হয় ১ হাজার ৩৮৬ জন। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়ছে। ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪৬৭ জন, ২০২০ সালে ১ হাজার ৫৫০ এবং ২০২১ সালে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬০৪ জন।

আরও পড়ুন

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, ৩৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, দক্ষিণ সুদান, চীন, জাপান, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, গাম্বিয়া, নাইজেরিয়া, রুয়ান্ডা, ঘানা, মরক্কো, কোরিয়া, ইরান, তানজানিয়া, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, সোমালিয়াসহ নানা দেশের শিক্ষার্থীরা পড়ছেন।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়তে আসার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেন ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সুনাম আছে, এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়তে আসতেই পারেন। এটি ভালো ও উৎসাহজনক। বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়তে আসাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। বিদেশি শিক্ষার্থীরা আসা মানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। তবে গুণগত মানও রক্ষা করতে হবে।’

আরও পড়ুন