এই মা প্রতিদিন ৭০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন যে কারণে

বলা হয়, সন্তানের জন্য মায়েরা পারেন না, এমন কোনো কাজ নেই। কিন্তু তাই বলে প্রতিদিন ৭০০ কিলোমিটার বিমানে ভ্রমণ করে অফিস করা আবার বাড়ি ফেরা! শুনতে অস্বাভাবিক হলেও এটিই সম্ভব করেছেন মালয়েশিয়ার ৪২ বছর বয়সী এক মা, র‍্যাচেল কৌর। ইতিমধ্যে নেটিজেনরা তাঁকে দিয়েছেন ‘সুপারমম’ তকমা।

মালয়েশিয়ার ৪২ বছর বয়সী র‍্যাচেল কৌর প্রতিদিন পাড়ি দেন ৭০০ কিলোমিটার পথছবি: ভিডিও থেকে

ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে সংসার গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েন র‌্যাচেল কৌর, বিমানবন্দরে গিয়ে বিমানে ওঠেন অফিসের জন্য। অতঃপর কর্মদিবস শেষে সন্ধ্যা নাগাদ ফ্লাইটে করে ফিরে আসেন দুই সন্তানের কাছে, এটিই তাঁর প্রতিদিনের রুটিন। কর্মজীবন ও পরিবার—দুটোই সামলানোর অসাধারণ ক্ষমতার জন্য তিনি ‘সুপার কমিউটার’ নামেও পরিচিতি পেয়েছেন। তবে এর চেয়ে বড় পরিচয়, তিনি একজন ‘সুপারমম’।

র‍্যাচেল কৌর মালয়েশিয়ার বিমান কোম্পানি এয়ার এশিয়ার সহকারী অর্থ ব্যবস্থাপক, থাকেন পেনাংয়ে, কিন্তু কাজ করেন রাজধানী কুয়ালালামপুরে। শুরুর দিকে তিনি কাজের সুবিধার্থে কুয়ালালামপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে সপ্তাহান্তে বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু সন্তানদের থেকে দূরে থাকার কারণে কাজে ঠিকঠাক মন বসাতে পারছিলেন না। সন্তানদের প্রতিদিনের জীবন, স্কুলের কার্যক্রম এবং ছোট ছোট মুহূর্ত মনে করে র‍্যাচেল বেশ কষ্ট পেতেন। সন্তানদের বেড়ে ওঠার সুন্দর মুহূর্তগুলো হারাতে চাননি। তাই একটা সাহসী পদক্ষেপ নেন। সিদ্ধান্ত নেন, পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য প্রতিদিন বিমানে করে অফিসে যাতায়াত করবেন। সপ্তাহে পাঁচ দিন বিমানে যাতায়াতের খরচ নিশ্চয়ই আকাশছোঁয়া। আদতে তা নয়। র‍্যাচেল বলেন, আগের তুলনায় তাঁর খরচ বরং অনেকটাই কমে গেছে। কুয়ালালামপুরে বাসা ভাড়া ও থাকা-খাওয়া বাবদ প্রতি মাসে ব্যয় করতেন ৪৭৪ ডলার বা ২ হাজার ১০৬ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। আর এখন তাঁর মাসিক খরচ কমে হয়েছে ৩১৬ ডলার বা ১ হাজার ৩৯৬ রিঙ্গিত।

আরও পড়ুন

যেখানে বেশির ভাগ মানুষ কর্মক্ষেত্রে পৌঁছানোর জন্য দীর্ঘ যানজট নিয়ে অভিযোগ করেন, সেখানে র‍্যাচেল দৈনিক ৭০০ কিলোমিটার আকাশপথ পাড়ি দেন এবং তিনি মনে করেন, সন্তানদের হাসিমুখের কাছে এটি কোনো কষ্টই নয়। এই রুটিন বজায় রাখতে শুধু শারীরিক সক্ষমতাই নয়, দরকার অসীম মানসিক শক্তির। র‍্যাচেলের জন্য এই যাত্রা ক্লান্তিকর হলেও মূল্যবান।

র‍্যাচেল দৈনিক ৭০০ কিলোমিটার আকাশপথ পাড়ি দেন
ছবি: পেক্সেলস

এক সাক্ষাৎকারে র‌্যাচেল বলেন, ‘আমার দুই সন্তান, একজন ১২ বছরের, আরেকজন ১১ বছর বয়সী। তারা বড় হচ্ছে, তাই একজন মা হিসেবে ওদের সঙ্গে আরও বেশি সময় থাকা দরকার। বিমানে নিয়মিত যাতায়াত করে প্রতিদিন বাড়ি ফিরে যেতে পারছি, রাতে ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারছি, এমনকি শেষ মুহূর্তের বাড়ির কাজেও আমার সন্তানদের সাহায্য করতে পারছি।’

আরও পড়ুন

র‍্যাচেলের গল্প হাজারো কর্মজীবী মা-বাবার হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে, যাঁরা পেশা ও পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পেতে লড়াই করছেন। র‌্যাচেল দেখিয়েছেন, পেশাজীবন ও কাজ গুরুত্বপূর্ণ হলেও পরিবারের প্রতি ভালোবাসার কাছে তা মামুলি। তিনি প্রমাণ করেছেন, কঠিন হলেও ইচ্ছা থাকলে পেশা ও পরিবারকে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব। তাঁর গল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সবাই পরিবারের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি ও ত্যাগ দেখে অভিভূত। প্রত্যেক কর্মজীবী মা-বাবার কাছে তিনি এখন এক অনুপ্রেরণার নাম। র‌্যাচেল প্রমাণ করেছেন, দৃঢ়সংকল্প থাকলে ভালোবাসার কাছে কোনো দূরত্বই বাধা হতে পারে না।

সূত্র: মিডিয়াম ডটকম

আরও পড়ুন