সাক্ষাৎকার
‘ভেষজের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে’
ভেষজ পণ্যের জন্য ‘মায়া’ নামে একটি নতুন ব্র্যান্ড চালু করেছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড। মায়ার গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান হিসেবে যুক্ত আছেন ভেষজবিশেষজ্ঞ সুশীল যোশি। ভেষজ উপাদান নিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গবেষণা করছেন তিনি। ২২ মে ঢাকার গুলশানে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. সাইফুল্লাহ
প্রশ্ন :
ভেষজ সৌন্দর্যপণ্য বহু পুরোনো একটি ঐতিহ্য। নতুন করে এ নিয়ে কাজ করার কথা কেন ভাবলেন?
ঐতিহ্য আছে বলেই হয়তো এখন মানুষ ভেষজ পণ্যের ওপর আরও বেশি আস্থা রাখছে। বর্তমান সময়ে আগ্রহ আরও বাড়ছে। কারণ, ভেষজ পণ্য নিরাপদ ও কার্যকর। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কেমিক্যালনির্ভর পণ্যে বিভিন্ন সময় নানা রকম সমস্যা দেখা গেছে। সে জন্য মানুষ আরও বেশি ভেষজের দিকে ঝুঁকেছে। আরেকটা বিষয় হলো, বাজারে অনেক ভেষজ পণ্য থাকলেও সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সেখানে স্কয়ারের মতো একটি প্রতিষ্ঠান যদি এগিয়ে আসে, যারা মানের দিক থেকে কোনো ছাড় দেয় না, নিশ্চয়ই মানুষ আস্থা রাখার মতো একটা জায়গা পাবে। সেই ভাবনা থেকেই ‘মায়া’ ব্র্যান্ডটি দাঁড় করানো।
প্রশ্ন :
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, এটা কি নিশ্চিতভাবে বলা যায়?
হ্যাঁ। এটা এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত। এ নিয়ে ইতিপূর্বেও অনেক গবেষণা হয়েছে। আয়ুর্বেদ, ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাপদ্ধতি—প্রাচীনকাল থেকে মানুষ এসব ব্যবহার করে আসছে। এগুলো কোনো নতুন আবিষ্কার নয়। ভেষজের কার্যকারিতার কথা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। পরে আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ও এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রশ্ন :
এখন পর্যন্ত ‘মায়া’ ব্র্যান্ডের অধীনে দুটি পণ্য বাজারে এসেছে। মায়া অল ন্যাচারাল স্কাল্প অ্যান্ড হেয়ার অয়েল এবং মায়া ট্রু হার্বস মেরুলা অয়েল। নির্দিষ্টভাবে এর কার্যকারিতা কী কী?
খেয়াল করে দেখবেন, সবাই এখন তারুণ্য ধরে রাখতে চায়, কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়ে। আমাদের দুটি তেলই শতভাগ প্রাকৃতিক। এতে কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়নি। চুল পড়া থামানো ও চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত করা—এই দুই বিষয় নিয়ে অধিকাংশ মানুষ খুব সচেতন। মায়া অল ন্যাচারাল স্কাল্প অ্যান্ড হেয়ার অয়েল মূলত তাঁদের জন্যই তৈরি। এটি শুধু চুল নয়, মাথার ত্বকেও কাজ করবে। আর যে মেরুলা অয়েল আমরা বাজারে এনেছি, সেটিরও আলাদা ঐতিহ্য আছে। আফ্রিকায় এমন অনেক গোত্র আছে, যারা গভীর জঙ্গলে বসবাস করে। আধুনিক সৌন্দর্যপণ্য ব্যবহারের সুযোগ তাদের নেই। তারা কিন্তু মেরুলা তেল ব্যবহার করে। বিজ্ঞানীরা পরবর্তী সময়ে মেরুলাগাছ নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন, এতে সত্যিই ত্বকের জন্য উপকারী উপাদান আছে। মেরুলা তেল ব্যবহারে মুখের ত্বকে থাকা দাগ কমে যায়, চেহারায় তারুণ্য থাকে। আমরা ভাবলাম, এই উপকারিতা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিই। মেরুলা আমরা সরাসরি আফ্রিকা থেকেই সংগ্রহ করছি।
প্রশ্ন :
উপাদানগুলো প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হলেও আপনারা নিশ্চয়ই প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছেন?
নিশ্চয়ই। আমরা প্রাচীন জ্ঞান এবং আধুনিক যন্ত্রপাতিকে একযোগে কাজে লাগাচ্ছি। যেমন আয়ুর্বেদে ক্ষীর পাক বিধি বলে একটা পদ্ধতি চালু আছে। ক্ষীর মানে দুধ, আর পাক মানে রান্না। আমলা, ব্রাহ্মী, কারিপাতা ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে এর যথাযথ নির্যাস বের করে আনার জন্য ক্ষীর পাক পদ্ধতির চল আছে। আমরা সেই পদ্ধতিই ব্যবহার করছি। কিন্তু অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কাজে লাগিয়ে। যেন মান নিশ্চিত করা যায়।
প্রশ্ন :
এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোন অংশটা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং?
ভেষজ পণ্যের ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ হলো কাঁচামালের মান ঠিক রাখা। সে জন্য বেশির ভাগ উপাদান আমরা স্থানীয় গাছ থেকে সংগ্রহ করছি। বাইরে থেকে কেনা কাঁচামালের পরিমাণ খুবই কম। যেহেতু বাংলাদেশ থেকেই অধিকাংশ কাঁচামাল সংগ্রহের চেষ্টা চলছে, ভবিষ্যতে এটি হয়তো দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটেও ভূমিকা রাখবে। কারণ, আমরা তখন ‘কনট্রাক্ট ফার্মিং’ শুরু করব। অর্থাৎ ভেষজ গাছ চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ আমরা চাষিদের দেব, আবার ফলন হলে তাঁদের কাছ থেকেই কিনে নেব। যেহেতু আমরা চাষিদের কাজের তত্ত্বাবধান করব, তাই মানও ঠিক থাকবে।
প্রশ্ন :
শুনেছি পাবনায় আপনাদের গবেষণাগার আছে। সেখানে আপনারা মূলত কী ধরনের কাজ করেন?
আগেই বলেছি, ভেষজ উপাদানের ক্ষেত্রে মান নিশ্চিত করা সবচেয়ে কঠিন কাজ। গবেষণাগারে আমরা মূলত সেটিই করি। এ কাজে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া স্ট্যাবিলিটি স্টাডি, ব্যবহারকারীদের নিয়ে জরিপ, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, এসবও করা হয়।
প্রশ্ন :
তেল দুটির দাম কি একটু বেশি?
তা নয়। বাজারে দেশের বাইরে থেকে আনা এ ধরনের পণ্যের যা দাম, তার চেয়ে অনেক কম।
প্রশ্ন :
আপনারা কি আরও ভেষজ পণ্য আনার কথা ভাবছেন?
হ্যাঁ। আরও পণ্য নিয়ে কাজ চলছে। আরও কয়েকটি চুলের তেল, অ্যালোভেরা জেল নিয়েও আমরা গবেষণা করছি।