শিশুর খাবারে লবণ দেওয়া কি ভালো
সদ্যোজাত শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত সব ধরনের পুষ্টির জোগান দিতে মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট। বাইরে থেকে বাড়তি খাবার দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়তি এক ফোঁটা পানিরও প্রয়োজন হবে না। কিন্তু ছয় মাস বয়সের পর শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য বুকের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি খাবার দেওয়া শুরু করতে হবে। ছয় মাস বয়সের পর যখন শিশুকে বাড়তি খাবার দেওয়া হয়, তখন বেশির ভাগ মা বুঝতে পারেন না যে শিশুকে কী খাওয়াবেন, কী খাওয়াবেন না। নতুন মায়েদের সবচেয়ে বেশি যে জিজ্ঞাসা থাকে, সেটা হলো কখন থেকে বাচ্চাকে লবণ দেওয়া যাবে?
সুষম খাবার মানে যে খাবারে খাদ্যের ছয়টা উপাদান—শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি যথাযথ পরিমাণে থাকে। শিশু ছয় মাস বয়স পর্যন্ত এ ছয় খাদ্য উপাদানই মায়ের বুকের দুধে পেয়ে থাকে। ছয় মাস বয়সের পর এগুলো খাবারের মাধ্যমেও সরবরাহ করতে হয়। তাই এ সময় থেকে শিশুর খাবারে লবণ যোগ করা যাবে, তবে তা খুবই সামান্য। কেননা মায়ের বুকের দুধেও লবণ থাকে।
শিশুর খাবারে লবণ যোগ করার সময় বয়স আর ওজনের কথা মাথায় রাখতে হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিলে তা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হবে। আবার বেশি লবণ দিলে খাবারে অতিরিক্ত নোনতা স্বাদ হতে পারে বা বমি হতে পারে। ছয় মাস বয়সের পর দুই আঙুলের ছোট এক চিমটি লবণ শিশুর সারা দিনের খাবারে ভাগ করে দেওয়া যাবে। লবণ বেশি হলে শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। যেমন অতিরিক্ত লবণ খেলে শিশুর রক্তে অতিরিক্ত পানি যোগ হতে পারে, যা হৃদ্যন্ত্রের ওপর চাপ তৈরি করে। আবার এই অতিরিক্ত লবণ কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এতে কিডনির ওপরও অতিরিক্ত চাপ তৈরি হতে পারে। কারণ, এ বয়সে অন্যান্য অঙ্গের মতো শিশুর হৃদ্যন্ত্র ও কিডনি অপরিণত ও দুর্বল থাকে। তাই শিশুর খাবারে লবণ ব্যবহারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
অনেকে ভয়ে শিশুর খাবারে একেবারেই লবণ দিতে চান না, সেটিও ভালো নয়। যেকোনো খাদ্য উপাদান বেশি ও কম খাওয়া—দুটিই স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ।
লবণ একেবারে না দিলে কি কোনো সমস্যা হতে পারে? হ্যাঁ, শিশুর শরীরে লবণের ঘাটতি হতে পারে। দুর্বলতা হতে পারে। এ ছাড়া শিশুর শরীরে আয়োডিনের ঘাটতি হতে পারে। শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে আয়োডিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই শিশুর খাবারে লবণ বাদ না দিয়ে পরিমিত পরিমাণে দেবেন। এতে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।
মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল