২০২৪ সালে কৃষি গবেষণায় বাকৃবির সাফল্য

আমের বীজে ব্যাকটেরিয়াবিরোধী প্রাকৃতিক উপাদান খুঁজে পেয়েছেন বাকৃবির একদল গবেষকছবি: সংগৃহীত

শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, দেশের কৃষি গবেষণার প্রাণকেন্দ্র হিসেবেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সুনাম আছে। এখানকার গবেষণাগুলো দেশের কৃষিকে সহজ ও আধুনিক করেছে। এ বছর গবেষণায় বাকৃবির উল্লেখযোগ্য কিছু সাফল্য নিয়ে এই লেখা।  

দেশি শিংয়ের জিনোম সিকোয়েন্সিং

দেশি শিং মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন করে পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ–নির্ধারক জিন শনাক্ত করেছেন বাকৃবির একদল গবেষক। গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিকস বিভাগের অধ্যাপক তাসলিমা খানম। ২০২০ সালে শুরু হওয়া এই গবেষণায় জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। শিং মাছের উৎপাদন ও বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনে এসব তথ্য সাহায্য করবে। 

দেশি শিং মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন এই গবেষক দল
যন্ত্রটি আলুবাছাই প্রক্রিয়া আরও সহজ, দ্রুত ও সঠিকভাবে করতে সক্ষম। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটি আলুর আকার, রং ও ত্রুটি শনাক্ত করে। ফলে আলুর উত্তোলন–পরবর্তী ক্ষতি কমিয়ে সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও বাজারজাত করা সম্ভব হবে।

বিরূপ আবহাওয়ায় টেকসই ফসল

বাকৃবির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খানের নেতৃত্বে একদল গবেষক একটি অত্যাধুনিক গ্রিনহাউস তৈরি করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে শস্যকে রক্ষার পাশাপাশি কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এই গ্রিনহাউস প্রকল্প। একই সঙ্গে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখবে।২০১৮ থেকে ২০২৪—দীর্ঘ সাত বছর ধরে গবেষণার পর উদ্ভাবিত হয়েছে বাউ সরিষা-৯। আরিফ হাসান খানের নেতৃত্বে এসেছে আরেকটি সাফল্য। উদ্ভাবিত হয়েছে স্বল্পমেয়াদি, উচ্চফলনশীল, রোগবালাইপ্রতিরোধী এবং লবণাক্ততা–সহিষ্ণু শর্ষের নতুন এই জাত। ফলে ৭৮ থেকে ৮২ দিনে শর্ষে উৎপাদন সম্ভব হবে। এটি আমন ও বোরো ধানের মধ্যে চাষ করা যাবে। ফলে বছরে চারটি ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে। এটি দেশের ভোজ্যতেল আমদানিনির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে শস্যকে রক্ষায় গ্রিনহাউস তৈরি করেছে বাকৃবির গবেষকরা
ছবি: সংগৃহীত

আমের বীজে অ্যান্টিবায়োটিকের সম্ভাবনা

অ্যান্টিবায়োটিকরোধী ব্যাকটেরিয়া বিশ্বব্যাপী একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক গোলজার হোসেনের নেতৃত্ব একদল গবেষক আমের বীজে এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান খুঁজে পেয়েছেন, যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে নিজস্ব অর্থায়নেই গবেষণাটি পরিচালনা করছেন গোলজার হোসেন। 

আলু বাছাই যন্ত্রের সঙ্গে প্রধান গবেষক অধ্যাপক মো. আনিসুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

আলুবাছাই যন্ত্র

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাকৃবির একদল গবেষক উদ্ভাবন করেছেন ‘অটোমেটেড রিয়েল টাইম পটেটো গ্রেডিং মেশিন’। যন্ত্রটি আলুবাছাই প্রক্রিয়া আরও সহজ, দ্রুত ও সঠিকভাবে করতে সক্ষম। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটি আলুর আকার, রং ও ত্রুটি শনাক্ত করে। ফলে আলুর উত্তোলন–পরবর্তী ক্ষতি কমিয়ে সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও বাজারজাত করা সম্ভব হবে। গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক আনিসুর রহমান। কম্পিউটার ও সেন্সরনির্ভর যন্ত্রটি প্রতি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি আলু বাছাই করতে সক্ষম। সফলতার হার ৮৬ শতাংশ।