বিটরুট পাউডার কি সত্যিই উপকারী
ইদানীং দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিটরুট পাউডার। দেহের শক্তি বাড়াতে কিংবা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বিটরুট পাউডার কাজে আসে বলে দাবি করেন কেউ কেউ। উপকারিতার প্রচলিত তালিকাটাও বেশ লম্বা। আদতেই কি এতটা উপকারী বিটরুট পাউডার? জানালেন ধানমন্ডির স্পেশালাইজড গ্যাস্ট্রোলিভার কেয়ারের পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান।
বিটরুটের পুষ্টি
মৌসুমি সবজি হিসেবে বিটরুট দারুণ। এতে আছে ভিটামিন ‘এ’, আয়রন, ফোলেট, পটাশিয়াম এবং আঁশ। খানিকটা ভিটামিন ‘সি’ও রয়েছে। তাই সঠিক উপায়ে গ্রহণ করা হলে তা শরীরের অনেক উপকারেই আসবে। এই যেমন ভিটামিন ‘এ’ ত্বক এবং চোখের জন্য উপকারী। দেহে রক্ত তৈরির জন্য প্রয়োজন আয়রন আর ফোলেট। অর্থাৎ রক্তশূন্যতা এড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে বিটরুট। তবে এখানে একটি বিষয় বলে রাখা প্রয়োজন, বিটরুট কিংবা অন্যান্য যেকোনো উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আয়রন পেতে হলে সঙ্গে অবশ্যই ভিটামিন ‘সি’জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই কেবল দেহে সঠিকভাবে শোষিত হবে এই আয়রন। ত্বকের বয়সজনিত দাগছোপ এবং বলিরেখা এড়াতেও সাহায্য করে বিটরুট।
আঁশ কথন
আঁশের উপকারিতা তো বহুমাত্রিক। আঁশজাতীয় খাবার হজম হতে সময় লাগে। ফলে এ–জাতীয় খাবার খাওয়ার পর পেট ভরা থাকে বেশ অনেকটা সময়। তাই ক্ষুধাও অনুভূত হয় না। অর্থাৎ ‘ডায়েট কন্ট্রোল’ বা খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে আঁশসমৃদ্ধ খাবার থেকে উপকার পাবেন। পরোক্ষভাবে ওজন কমাতে সহযোগিতা করে এসব খাবার। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে পর্যাপ্ত আঁশ গ্রহণ তো প্রয়োজন সবারই। রক্তের খারাপ চর্বি কমাতেও সাহায্য করে আঁশ। সুস্থ থাকতে তাই আপনাকে আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতেই হবে।
যেভাবে পাবেন উপকার
বিটরুটের এত সব উপকারিতা পুরোপুরিভাবে পাবেন, যদি আপনি তা কাঁচা গ্রহণ করেন। রান্না করতে গেলে কিছু পুষ্টি উপাদান হারিয়ে যেতে পারে। বরং অন্যান্য কাঁচা উপকরণের সঙ্গে মিলিয়ে সালাদ হিসেবে খেতে পারেন। সালাদেই যোগ করে নিতে পারেন খানিকটা লেবু বা ভিটামিন ‘সি’জাতীয় অন্যান্য ফল। তাহলে দেহে আয়রন শোষিত হবে ঠিকঠাক। আবার চাইলে রস করেও খেতে পারেন বিটরুট। বিটরুট, গাজর, শসা, কমলা, পালংশাক আর আদার রস একসঙ্গে পানীয় হিসেবে খেতে পারেন। কিন্তু রস করে খাওয়া হলে অবশ্য আঁশের উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হবেন। তবে বাকি উপকার মিলবে। কিন্তু বিটরুট যদি চূর্ণ করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হয়, সে ক্ষেত্রে অবশ্য এর পুষ্টি উপাদানের অনেকটাই হারিয়ে যেতে পারে প্রক্রিয়াজাত করার সময়। তাই বিটরুট পাউডার খেলে কতটা উপকার মিলবে, সে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। পাউডার যদি নিতেই হয়, তাহলে তা নিতে হবে বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে, তৈরির সময় যাঁদের বিটরুট পাউডারে অধিকাংশ পুষ্টি উপাদান ঠিক থাকে। তবে সেখান থেকেও কিন্তু আঁশের উপকার মিলবে না। সত্যিকার অর্থে বিটরুটের সব পুষ্টি পেতে হলে আপনাকে তা কাঁচা অবস্থায়ই গ্রহণ করতে হবে।
ভেঙে যাক ভুল
বিটরুট খেলে লিভার ভালো থাকে কিংবা এটি শক্তিবর্ধক—এমন ধারণা প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়গুলো বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত নয়। লিভারের কোনো নির্দিষ্ট রোগকে প্রতিরোধ করতে কিংবা দেহের শক্তি বাড়াতে এর আলাদা কোনো ভূমিকা নেই। তবে রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত ব্যক্তির হিমোগ্লোবিনের ঘাটতিটা পূরণ করা গেলে তিনি সবল হয়ে ওঠেন। সেই হিসেবে বলা যেতে পারে বিটরুট সেই রোগীদের জন্য শক্তিবর্ধক। তবে আদতে এটি শক্তি বাড়ানোর কোনো ‘টনিক’ নয়। সরাসরি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিংবা ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও এর কোনো প্রভাব নেই।
বিটরুটে নিষেধাজ্ঞা?
সুস্থ থাকতে কাঁচা সবজি হিসেবে রোজ বিটরুট খেতে পারেন, এমনকি মৌসুমজুড়েই। মাঝারি আকারের একটি বিটরুট খেতে পারেন আপনি। আকার বড় হলে অর্ধেকটা খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত বিটরুট খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগ কিংবা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি বিটরুট খেতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন।