বেবি বুমার্স, এক্স, ওয়াই, জি, আলফা—প্রজন্মের নামগুলো যেভাবে এল
প্রজন্ম নিয়ে আজকাল বেশ আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। কোন প্রজন্মের নাম কী কারণে কেমন করে হলো, তা নিয়েও আগ্রহের কমতি নেই। তাত্ত্বিক নিল হাও ও উইলিয়াম স্ট্রস তাঁদের ১৯৯১ সালের বই ‘জেনারেশনস’-এ বিভিন্ন প্রজন্মের নামকরণ করেছিলেন।
বেবি বুমার্স
১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের এই নামে ডাকা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্মহারের তীব্র বৃদ্ধির কারণে সেই সময়ে যাঁরা জন্ম নিয়েছেন, তাঁদের বেবি বুমার্স বলা হয়েছে।
পশ্চিমে ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে বুমারদের শৈশবকালে শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংস্কার হয়েছিল। সময়টা ছিল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতির যুগ। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে বিপুলসংখ্যক বুমার্স তাদের কৈশোর ও তারুণ্যে প্রবেশ করে। তারা স্পষ্ট নির্দিষ্ট বক্তব্য ও সামাজিক আন্দোলন তৈরি করতে পেরেছিল। যেমন ১৯৬০-এর দশকের কাউন্টারকালচার ও এর প্রতিক্রিয়া।
জেনারেশন এক্স
কানাডিয়ান লেখক ডগলাস কুপল্যান্ড তাঁর ১৯৯১ সালের বই ‘জেনারেশন এক্স: টেলস ফর অ্যান অ্যাক্সিলারেটেড কালচার’-এ ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ‘জেন এক্স’ বলেন। আর এই নাম পরবর্তীতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
জেনারেশন এক্স সরাসরি বেবি বুমার্স প্রজন্মকে অনুসরণ করে। তারাও বুমার্সদের মতো একই রকম অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বেড়ে উঠেছে। কেননা, এ সময় বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি বা ইতিহাসে খুব একটা রদবদল ঘটেনি। জেনারেশন এক্স মূলত তাদের আগে জন্মানো বেবি বুমার্স ও জেনারেশন ওয়াইয়ের মাঝখানে পড়ে যাওয়া ‘স্যান্ডউইচ’।
জেনারেশন ওয়াই বা মিলেনিয়াল
এ প্রজন্মের মানুষের জন্মকাল ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। তাদের বর্তমান বয়স ২৮ থেকে ৪৩ বছর। এ প্রজন্ম নব্বইয়ের দশকে তাদের শৈশব-কৈশোর পার করেছে। তাদের বলা হয় ‘নাইন্টিজ কিডস’ বা নব্বইয়ের সন্তান। বিশ্ব সংস্কৃতিতে সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মা-বাবারা বুমার্স ও জেনারেশন এক্সের সদস্য।
এ প্রজন্ম মিলেনিয়াল (সহস্রাব্দ) হিসেবে পরিচিত। কারণ, তাদের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যরা দ্বিতীয় সহস্রাব্দের দিকে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠেন। এ প্রজন্মকে ‘মিলেনিয়ালস’ নামকরণের কৃতিত্ব লেখক উইলিয়াম স্ট্রস ও নিল হাউয়ের। ২০১৪ সালে নিল হাউ মার্কিন রেডিও এনপিআরকে (ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, এ প্রজন্ম যেহেতু ২০০০ সালে জীবনের সেরা সময়, অর্থাৎ তরুণ্যে পৌঁছাবে, তাই তাদের বোঝানোর জন্য চট করে সহস্রাব্দ (মিলেনিয়াল) নামটি মাথায় এসেছিল।’ এ ছাড়া এ প্রজন্মকে জেনারেশন ওয়াইও বলা হয়। কেননা তাদের জন্ম জেনারেশন এক্সের পর।
জেনারেশন জেড বা জেন-জি
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রজন্ম। তাদের জন্মকাল ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। তাদের বর্তমান বয়স ১২ থেকে ২৭ বছর। তাদের মা-বাবারা মূলত জেনারেশন এক্স ও ওয়াইয়ের সদস্য।
২০১১ সালের দিকে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ প্রজন্মের সদস্যরা প্রথম স্মার্টফোনের সঙ্গে তাদের বয়ঃসন্ধিকাল কাটিয়েছে। যেহেতু তারা জেনারেশন ওয়াই-পরবর্তী সময়ে জন্মেছে, তাই তাদের ডাকা হয় ‘জেনারেশন জেড’ বা জেন–জি।
জেনারেশন আলফা
এ প্রজন্মের মানুষদের জন্ম ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে। তাদের বর্তমান বয়স ০ থেকে ১২ বছর। তাদের মা-বাবারা আবার জেনারেশন ওয়াই বা জেড।
পূর্ববর্তী জেনারেশন জেডের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর শেষ হয়ে যাওয়ায় এ প্রজন্মের নামকরণে গ্রিক বর্ণমালার অক্ষর দিয়ে শুরু হয়। সামাজিক বিশ্লেষক ও জনসংখ্যাবিদ মার্ক ম্যাকক্রিন্ডল বলেন, ‘এ প্রজন্ম সত্যিকার অর্থে সবচেয়ে কম বয়স থেকে ডিজিটাল। অনিশ্চিত ও দ্রুত পরিবর্তনশীল সময়ে বেড়ে উঠছে। এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন বাস্তবতার সূচনা। তাই আমি শুধু “লেটস গো উইথ দ্য সায়েন্টিফিক নেমিং” ধারণা সামনে রেখেছি। আর এ ক্ষেত্রে গ্রিক বর্ণমালা ব্যবহার করেছি।’
আলফার পরবর্তী প্রজন্মগুলোর নাম হতে পারে ‘বিটা’, ‘গামা’ ইত্যাদি।