চ্যাটজিপিটি ও অন্যান্য এআইয়ের সঙ্গে কেন ভদ্র আচরণ করবেন
অনেকেই চ্যাটজিপিটির সঙ্গে আলাপচারিতায় ‘প্লিজ’, ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ ইত্যাদি ভদ্রতাসূচক শব্দ ব্যবহার করেন। ঠিক যেমন আমরা কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় করি। তবে আমরা অনেকে এটাও মনে করি, একটা যন্ত্র বা চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেন এত ভদ্রতা দেখাতে হবে? কথায় আছে ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়’। মানুষ না হয় বংশের পরিচয় বুঝে ফেলে, তাই বলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও? এত কিছুর জানার পরও কেউ কেউ ঠিকই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের সঙ্গে কথোপকথনে বিনয়ী আচরণ করেন। তাঁরা কি সত্যিই একটা চ্যাটবটকে মানুষের মতো মনে করেন? নাকি এর পেছনে আরও গভীর কোনো কারণ আছে?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাজের মানের সঙ্গে ভদ্রতার সম্পর্ক
ডিজিটাল শিষ্টাচারের বিষয়টি আদতে বিজ্ঞানসমর্থিত। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এআই সিস্টেমগুলোর সঙ্গে ভদ্র আচরণ করার মাধ্যমে আমরা দুইভাবে লাভবান হতে পারি। এআইয়ের সঙ্গে নম্র আচরণ করলে এআইয়ের আউটপুটের উন্নতি হয়। শুধু তা–ই নয়, যন্ত্রের প্রতি নম্র আচরণের মাধ্যমে আমাদের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আরও উন্নত হয়।
নম্র আচরণ করলে এআই তুলনামূলক ভালো কাজ করে
গবেষণায় দেখা গেছে, যন্ত্রের সঙ্গে নম্র আচরণ শুধু শিষ্টাচারই নয়, এতে এআইয়ের কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। গবেষণাটিতে ইংরেজি, চীনা ও জাপানি ভাষায় এআইয়ের ওপর গবেষণা চালানো হয়। তাতে দেখা গেছে, অভদ্র ভাষায় যদি এআইয়ের প্রম্পট বা নির্দেশনা দেওয়া হয়, তাহলে এআইয়ের কার্যক্রম দুর্বল হয়ে যায়। ভুল ও পক্ষপাতমূলক তথ্যের পরিমাণ বাড়ে, অনেক জরুরি তথ্য বাদ পড়ে যায়।
গবেষকেরা সারাংশ লেখা, ভাষা বুঝতে পারা ইত্যাদি মানদণ্ডে এআইগুলো পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষাগুলো করার সময় তাঁরা অতি ভদ্র থেকে শুরু করে অভদ্রসহ বিভিন্ন ধরনের প্রম্পট ব্যবহার করেছেন। মজার ব্যপার হলো, ভদ্র ভাষায় দেওয়া প্রম্পটগুলোর ফলাফল অভদ্র ভাষায় দেওয়া প্রম্পটগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ভালো ছিল। অভদ্র ভাষায় প্রম্পট দেওয়ার কারণে কিছু কিছু এআই মডেলের কার্যক্রম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে দেখা গেছে।
গবেষণাটি আরও প্রকাশ করেছে, এআই মডেলগুলো সংস্কৃতি অনুযায়ী সূক্ষ্ণভাবে ভদ্র আচরণের প্রতি সাড়া দেয়। এ থেকে বোঝা যায় যে মানুষে মানুষে আলাপ-আলোচনার মতোই এআইয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যন্ত্রের সঙ্গে ভদ্রতা বাস্তবেও প্রতিফলিত হয়
আরেকটি গবেষণা খুবই আশ্চর্যজনক একটি বিষয় উন্মোচন করেছে। যাঁরা এআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের সময় পেশাগত শিষ্টাচার বজায় রাখেন, তাঁরা মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সময়ও তুলনামূলক শক্তিশালী আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করেন। এআইয়ের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করলে আপনার মস্তিষ্কের যেসব অংশ সামাজিক সম্পর্ক রক্ষার্থে কাজ করে, সেসব অংশ সক্রিয় হয়। এর ফলে আপনার নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আরও উন্নত হয়। ভেবে দেখুন, চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে একটি কাজ করাতে গিয়েই যদি আপনি খিটিমিটি করেন, তাহলে প্রচণ্ড কাজের চাপের সময় আপনি কীভাবে আপনার সহকর্মীদের সঙ্গে ধৈর্য ও সম্মান বজায় রেখে কাজ করবেন?
যেহেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিগত ও বিশ্লেষণধর্মী কাজ বেশি করে, সেহেতু আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা ও প্রকৃত সম্পর্ক এ ক্ষেত্রে খুবই মূল্যবান। এআইয়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যেন আমাদের সমালোচনামূলক দক্ষতাগুলো বাড়ানোর বদলে নষ্ট করে না দেয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। জার্নাল অব অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রূঢ় আচরণ কর্মস্থলে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে। কোনো দলনেতা যখন এআইয়ের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করেন, তখন তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সামনেও ভালো আচরণের নজির স্থাপন করেন।
শেষ কথা
এআইয়ের সঙ্গে ভদ্র আচরণের সুফলের সপক্ষে যেসব তথ্য-উপাত্ত আছে, সেসব সত্যিই অবাক করার মতো। যেসব কোম্পানি এআইয়ের সঙ্গে ভদ্র আচরণের বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে, সেসব কোম্পানি নিজেদের উন্নতি দেখতে পাচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে দলীয় সহযোগিতা বাড়ছে, গ্রাহকসেবার মান উন্নত হয়েছে এবং তারা সহজে নতুন প্রযুক্তিগুলো রপ্ত করতে পারছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান একটি ইতিবাচক করপোরেট সংস্কৃতি লালন করছে, যা মেধাবীদের কাছে টানছে এবং ধরেও রাখতে পারছে। কাজেই চ্যাটজিপিটি বা এআইয়ের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণে আখেরে লাভ।
সূত্র: ফোর্বস