সবুজ চোখের সেই আফগান মেয়ে!
বিপন্নতা, অসহায়ত্ব, উদ্বেগ—কী ছিল না ওই চোখ দুটিতে। জ্বলজ্বলে সবুজ চোখে যেন সারা দুনিয়ার মানুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলছিল ওই কিশোরী। আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারির তোলা ওই আফগান কিশোরীর ছবি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকীর প্রচ্ছদ হয় ১৯৮৫ সালে। সাময়িকীটির সবচেয়ে আলোচিত প্রচ্ছদ তো বটেই, দুনিয়ার আলোকচিত্রের ইতিহাসেও অমর হয়ে যায় ছবিটি। কিন্তু শরণার্থী শিবিরে থাকা শরবত গুলা নামের ১২ বছরের সেই কিশোরীর ভাগ্যে কী ঘটেছিল? গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, নাম-পরিচয় পাল্টে এখন পাকিস্তানে বসবাস করছেন তিন কন্যার জননী শরবত গুলা। খবর এএফপির।
১৯৮৫ সালে রাশিয়ার সামরিক দখলদারির বিরুদ্ধে আফগান মুজাহিদদের লড়াইয়ের সময় দেশটির এক শরণার্থী শিবিরে শরবত গুলা নামের ওই কিশোরীর ছবি তুলেছিলেন স্টিভ ম্যাককারি। ‘সবুজ চোখের আফগান মেয়ে’ হিসেবে দুনিয়ার মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে শরবত গুলার ছবির কথা। ছবিটির বিপুল খ্যাতির পর থেকেই ওই কিশোরীকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন ম্যাককারি। শরবত গুলাকে আবার খুঁজে পেতে ১৭ বছর লেগেছিল তাঁর। ২০০২ সালে আফগানিস্তানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে পাওয়া যায় তাঁকে। শরবত গুলা তত দিনে এক বেকারিশ্রমিককে বিয়ে করেছেন। তিন মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে ওই গ্রামেই থাকতেন তিনি।
কিন্তু রুশদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আফগান মুজাহিদিনদের লড়াই শেষ হয়েছে আরও আগেই। ২০০১ সালে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার পর তত দিনে আফগানিস্তানে শুরু হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের লড়াই। আগের যুদ্ধের সময় কিশোরী শরবত গুলা আশ্রয় নিয়েছিল এক শরণার্থী শিবিরে। এবার কি শরবত গুলা পাড়ি জমান প্রতিবেশী পাকিস্তানে?
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে পেশোয়ারে ‘শরবত বিবি’ নাম নিয়ে পাকিস্তানি নাগরিকত্বের পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করা নারীই হয়তো ‘সবুজ চোখের আফগান কিশোরী’ শরবত গুলা। পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডেটাবেজ অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অথরিটির মুখপাত্র ফাইক আলী চাচার বলেছেন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ‘শরবত বিবি’র পরিচয়পত্র জালের ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। তিনি বলেন, ‘শরবত বিবির ঘটনাটি হয়তো এমন বহু পরিচয়পত্র জালের একটি। গত ১২ বছরে প্রায় ২৩ হাজার আফগান শরণার্থীর এমন পরিচয়পত্র জালের ঘটনা ধরা পড়েছে এবং রহিত করা হয়েছে।’
পাকিস্তানি পরিচয়পত্রের জন্য আবেদনে ‘শরবত বিবি’ লিখেছেন তাঁর জন্ম ১৯৬৯ সালে পেশোয়ারে। কিন্তু আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া ছবিতেও জ্বলজ্বলে সবুজ চোখের সঙ্গে খোদাই করা মুখের আফগান কিশোরীর হুবহু মিল পাওয়া যায়। এএফপির এক প্রতিবেদক পরিচয়পত্রের আবেদনে লেখা ঠিকানায় গিয়ে খোঁজ করে জানতে পারেন, অনেক দিন ধরে স্বামীকে নিয়ে সেখানে বসবাস করলেও মাস খানেক আগেই এলাকাটি ছেড়ে যান শরবত বিবি।
পাকিস্তানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন, শরবত বিবি এবং রউফ খান ও ওয়ালি খান নামে তাঁর দুই ছেলেকে একই দিনে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছিল। আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া ওই তিনজনের সব কাগজপত্রই জাল বলে ধরা পড়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্ভবত ওই দুই ছেলেও আসলে তাঁর সন্তান নন।